অস্বস্তিকর ‘বিয়ের ফাঁদে’ সৌদি মার্কিন সম্পর্ক

ইরানের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দ্বন্দ্বে জড়ানোর কোনো
আগ্রহ নেই বলে ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক
ওবামা! বৃহস্পতিবার সুদূর উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র
থেকে উড়ে গিয়ে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আয়োজিত
‘গালফ কো-অপারেটিভ কাউন্সিল’-এ যোগদান করেন তিনি।
ছবিতে সৌদি কিং সালমানের পাশে ওবামা। বৃহস্পতিবারের ছবি -এএফপি
দীর্ঘদিনের সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক গভীর গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে। এই সম্পর্ককে অস্বস্তিকর বিয়ের ফাঁদ বলে মন্তব্য করেছেন উরডো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক স্কলার অ্যারন ডেভিড। ৮০ বছরের অধিক ‘দাম্পত্য জীবনে’ এখন নানা সন্দেহ অবিশ্বাস আর ‘প্রয়োজন ফুরানো’ অবস্থা দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের উদীয়মান শক্তি ও সৌদির প্রতিদ্ব^ন্দ্বী ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি, ৯/১১ হামলার ব্যাপারে সৌদিকে জড়িয়ে মার্কিন কংগ্রেসে সাম্প্রতিক বিল বিতর্ক, আইএস-সিরিয়া-ইয়েমেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকা না থাকা- ইত্যকার বিষয়ে দুই দেশের বিভেদ বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেন এই অবস্থা? তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী?
প্রথম প্রশ্ন উঠছে, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘সুসম্পর্ক দাম্পত্য’ কি আদৌ সম্ভব ছিল? পারস্পরিক বোঝাপড়া কতটুকু ছিল? সৌদি আরব কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। সেখানকার মানবাধিকার, নারী অধিকার ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতিতে দুই দেশের যোজন যোজন ব্যবধান। কানাডা ও ব্রিটেনের সঙ্গে মার্কিন মূল্যবোধের যতটা মিল আছে, তার কানাকড়িও নেই ওয়াশিংটন-রিয়াদের মধ্যে। সৌদিতে রাজতান্ত্রিক স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কের দেশ। সেখানে নেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। প্রকৃতপক্ষে সৌদি আরব কোনো ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ নয়, আবার পশ্চিমা মূল্যাবোধেরও নয়। ইসলামী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস রফতানিও করে না। বরং তারাই সন্ত্রাসবাদের শিকার। গত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবের তেল সম্পদের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র রিয়াদের রাজতন্ত্রের নিরাপত্তা ও বহির্বিশ্বের হুমকি থেকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করে এসেছে। ১৯৩৩ সালে মার্কিন কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল অব ক্যালিফোর্নিয়া (বর্তমান শেভরন) সৌদির দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম তেল উৎপাদনে যুক্ত হয়। সেখান থেকেই দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ১০ বছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ২৬০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৭৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলেই সৌদির কাছে ৯৫০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) রয়েছে সৌদির।
সৌদি আরব এখন যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বাণিজ্যিক অংশীদার। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পরিস্থিতিতে সৌদি আরব এখন সংকটের মুখে রয়েছে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় বাজেট ঘাটতিতে রয়েছে দেশটি। এর মধ্যে সৌদি রাজপরিবারের মধ্যে বাদশাহর উত্তরাধিকারী নিয়ে দ্বন্দ্ব ও ব্যয়বহুল ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় আরও পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরব বসন্ত ও আঞ্চলিক সংঘাতের ধাক্কা সৌদিতে প্রভাব ফেলেছে। মিসর, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক ইত্যাদি দেশ ধসে পড়লেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল রিজার্ভ, স্বল্প ঋণ ও ক্যাশ রিজার্ভের কারণে এখনও টিকে আছে রাজতন্ত্রের এই দেশ। নানা দিক দিয়ে সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ফুরিয়ে আসছে। এখন ইরাক-সিরিয়া যুদ্ধে সৌদিকে ব্যবহার করাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় বিষয়। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোকে এ বিষয়ে রাজি করাতে মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রিয়াদ সফর করছেন। আইএসবিরোধী যুদ্ধে কাক্সিক্ষত সাড়া না পেয়ে কিছুদিন আগে ওবামা মন্তব্য করেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মিত্ররা বসে বসে ‘ফাও খেতে চায়’। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো। এখন পরিস্থিতির কারণে কেউ কাউকে ছাড়তে পারছে না। তাই ক্ষোভ পুষে রেখে হলেও দু’জন দু’জনের মন জুুুগিয়ে চলার চেষ্টাই করবে।

No comments

Powered by Blogger.