নাজুক লক্ষ্যবস্তুর ঝুঁকিই বেশি

ব্রাসেলসের ম্যালবিক মেট্রো স্টেশনের বাইরে আহত
যাত্রীদের সেবা দিচ্ছেন জরুরি বিভাগের কর্মীরা।
সেখানেই হতাহত হয়েছে বেশি মানুষ। রয়টার্স
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের বিমানবন্দর এবং মেট্রো স্টেশনে গতকাল মঙ্গলবার সকালের বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সঙ্গেই। কিন্তু বেশ কার্যকর ছিল সেগুলো। এ হামলা বিমানবন্দর বা পাতাল রেলস্টেশনের মতো নাজুক লক্ষ্যবস্তুর ঝুঁকির দিকটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ ছাড়া পশ্চিম ইউরোপে হামলার বিষয়ে জঙ্গিদের সক্ষমতার ব্যাপারেও ধারণা দেয় তা। বেলজিয়াম সরকার বলেছে, হামলায় দুপুর পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি নিহত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। আহত হয়েছিল ৩০ জনের বেশি। ব্রাসেলসের জাভেনতেম বিমানবন্দরের বহির্গমন হলে প্রথম বিস্ফোরণ হয় আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাউন্টারের কাছে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি হয় ব্রাসেলস এয়ারলাইনসের টিকিট কাউন্টারে। এর কিছুক্ষণ পরই ম্যালবিক মেট্রো স্টেশনে বিস্ফোরণ ঘটে। এ জায়গাটি ব্রাসেলসের কেন্দ্রস্থল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় এখানে। এই ঘটনার পর ব্রাসেলসের মেট্রোসহ সব ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাতিল করা হয় বিমানের ফ্লাইট। বেলজিয়াম সরকার দেশটির নিরাপত্তার মাত্রা বিদ্যমান ৩ থেকে সর্বোচ্চ ৪-এ উন্নীত করে। ব্রাসেলসের এ হামলা এসব নাজুক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা প্রতিরোধের জটিলতার বিষয়টিই তুলে ধরে। বৃহৎ লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় দলে ভারী হতে হয় হামলাকারীদের। সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে দিতে বড়সড় আকারের পরিকল্পনা এবং বেশি পরিমাণ বিস্ফোরকেরও ব্যবহার করতে হয়। এর বিপরীতে নাজুক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সময় পরিকল্পনাকারীদের একটি বিষয়ই বিবেচনায় করতে হয়। তা হলো, এক দফাতেই হামলা সারতে হবে। আর এ জন্য ছোট দলই যথেষ্ট।
বিমানবন্দর বা মেট্রো স্টেশনের মতো এলাকাগুলোতে অনেক লোক থাকে। এ জন্যই সেখানে হামলা করে সহজেই বড় ধরনের ক্ষতি এবং গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে জঙ্গিরা। এর আগেও বিমানবন্দরের বাইরের অপেক্ষাকৃত নাজুক এলাকাগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে রোম ও ভিয়েনায় বিমানবন্দরের টিকিট কাউন্টারে হামলা চালায় চরমপন্থী ফিলিস্তিনি আবু নিদালের সংগঠন। লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টিকিট কাউন্টারে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। মস্কোর দমোদেদভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০১১ সালে বোমা হামলায় ৩৫ জন নিহত হয়। আহত হয় ১৬০ জন। বিমানবন্দরের প্রবেশ এবং বের হয়ে যাওয়ার পথে নিরাপত্তাব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত ঢিলেঢালা থাকে। এরই সুযোগ নেয় হামলাকারীরা। তাই বিমানে ভ্রমণকারীদের উচিত, বিমানবন্দরের এসব নাজুক এলাকায় যতটা সম্ভব কম সময় ব্যয় করা।গত বছরের ১৩ নভেম্বর প্যারিসে হামলা চালানোর পর বেঁচে থাকা একমাত্র হামলাকারী সালেহ আবদেসালাম ব্রাসেলসেরই মলেনবেক এলাকা থেকে নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার হন ১৮ মার্চ। ওই গ্রেপ্তারের চার দিন পরই এ হামলার ঘটনা ঘটল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদেসালাম ইউরোপজুড়ে আরও হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। বেলজিয়াম সরকার তাঁর দুই সহকারীকে খুঁজছিল। এটা এখনো নিশ্চিত নয়, ওই দুই হামলাকারী না অন্য কেউ গতকালের হামলাটি করল। ব্রাসেলস দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গিদের বড় আস্তানা। বেলজিয়ামের বেশ কয়েকজন নাগরিক মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও জাবাত-আল-নুসরার মতো সংগঠনে যোগ দিয়েছে। ২০১৪ সালের জুনে এক আইএস জঙ্গি বেলজিয়ামের ইহুদি জাদুঘরে হামলা চালায়। যে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, গত নভেম্বরের প্যারিস হামলার পরিকল্পনাই হয়েছে বেলজিয়ামে। গতকাল যে হামলা হলো, এর প্রধান লক্ষ্য ছিল অনেক মানুষের প্রাণহানি। আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাউন্টারে হামলার উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন নাগরিক হত্যা।

No comments

Powered by Blogger.