বাহুবল ট্র্যাজেডিঃ অপরাধের ষোলকলা পূর্ণ রুবেল-জুয়েলের by শামীমুল হক ও নূরুল ইসলাম মনি

ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, হামলা, ভাঙচুর, চুরি-ডাকাতির পর এবার খুনির খাতায় নাম লিখিয়ে ষোলকলা পূর্ণ করলো দুই ভাই রুবেল ও জুয়েল। তাদের ভয়ে কোনো কিশোরী শিক্ষার্থী একা স্কুলে যেতে ভয় পেতো। ফলে দলবেঁধে তারা বিদ্যালয়ে যেত। তারপরও রক্ষা হতো না তাদের। হঠাৎ কাউকে আগলে ধরে খাতা টেনে নিয়ে ফোন নম্বর লিখে বলতো- ফোন নাম্বার লিখে দিলাম। রাতে ফোন না দিলে তোর খবর আছে। তোরে আমি ভালোবাসি। কাউকে প্রকাশ্যে জাপটে ধরে বলতো, আজ সন্ধ্যায় বাড়ির পশ্চিম পাশে মাঠে আসবি- তোরে আমি ভালোবাসার কথা কইমু। ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের কোনো সুন্দরী মেয়েকে দেখলেই এভাবে উত্ত্যক্ত করতো রুবেল। আর তার ভাই জুয়েল রাস্তায় বসে থাকতো। এ দুই ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল সুন্দ্রাটিকি গ্রামবাসী। ওই গ্রামের চার শিশু হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করার পর গ্রামবাসী নড়েচড়ে বসেছে। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছে তারা। বলছেন, অপরাধ জগতে এ দু’ভাই ষোলকলা পূর্ণ করেছে। রুবেল ও জুয়েল আবদুল আলী বাগালের ছেলে। পিতার প্রভাবে তারা এলাকায় হয়ে উঠেছিল বেপরোয়া। কত কিশোরী, যুবতী যে তাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছে এর ইয়ত্তা নেই। তিনবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করা রুবেল এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। বয়স সবে বিশ বছর পার করেছে। আর জুয়েল মিরপুর আলীফ সোবহান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার বয়স ২৩ বছর। আদালতে রুবেলের জবানবন্দি দেয়ার পর হতবাক ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ চার শিশু হত্যার পরও সে এসএসসির দুটি পরীক্ষা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, লাশ উদ্ধারের পর এক শিক্ষিকা শিশুদের দেখতে গেলে রুবেল সবাইকে সরিয়ে শিক্ষিকাকে লাশ দেখার সুযোগ করে দেয়। বলে, আসুন ম্যাডাম দেখে যান। সুন্দ্রাটিকি গ্রামের তালুকদার পঞ্চায়েতের চার শিশু জাকারিয়া আহমেদ শুভ, তাজেল মিয়া, মনির মিয়া ও ইসমাঈল মিয়াকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় পিতা আবদুল আলী বাগালসহ তারা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে রুবেল ও জুয়েল। এলাকাবাসী তাদের এই উগ্রতা ও বেপরোয়া হওয়ার পেছনে তার পিতা আবদুল আলী বাগালকে দায়ী করছেন। ২০১৪ সালের দুর্গাপূজার মেলায় গিয়ে রশিদপুর চা বাগানের এক শ্রমিকের কন্যাকে ইভটিজিং করে তারা। করে যৌন নির্যাতন। চা শ্রমিকরা ঘটনার প্রতিবাদ জানালে ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানে হামলা চালায়। ৩৫টি বাড়িতে আক্রমণ করে। ঘরের টিনের চালা রামদা দিয়ে কুপিয়ে ফালা ফালা করে। বাগান পঞ্চায়েত প্রধান পিয়ারী রবি দাসের বাড়িতে হামলা চালালে তার নয় মাসের গর্ভবতী পুত্রবধূ রবি রীনা দাস পালাতে গিয়ে পড়ে যান। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তিনদিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর মারা যায় পিয়ারী রবি দাসের মেয়ের ঘরের নাতনি দুই বছরের সারথি রবিদাস। এ ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনার পরই চা-শ্রমিক জয়রাম লোহার বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেছিলেন। পরে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি নেয়ার সময় আপস প্রস্তাব আসে। পিয়ারী দাস এ ঘটনাকে নারকীয় তাণ্ডব উল্লেখ করে বলেন, আমরা চা শ্রমিক। সেদিন যে অত্যাচার করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এমন দেখিনি। পিয়ারী রবি দাস বলেন, আমরা তো নিরীহ মানুষ। বাগানে কাম করি, মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরার মন না মানলেও শেষ পর্যন্ত জনগোষ্ঠীর  কথা চিন্তা করে আপস করতে অইছে। এ ঘটনায় ৬ই অক্টোবর বাহুবল থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা (নম্বর ০৪/১৮২) হয়। তাতে চার শিশু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদুল আলী বাগাল, তার ছেলে রুবেল মিয়াসহ ৫০ জন আসামি ছিলেন। কিন্তু দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় চা-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করতে গেলে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের পঞ্চায়েতের আট পক্ষ এক হয়ে বৈঠক ডেকে আপসের প্রস্তাব দেয়। ভাদেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সভাকক্ষে ২রা নভেম্বর উভয় পক্ষে আপসরফার চুক্তি হয়। এ ব্যাপারে ভাদেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মত্তাছিল মিয়া বলেন, ওই আপস সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী, জেলা পরিষদ প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, স্থানীয় এমপি এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু, সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী, বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল হাই। চেয়ারম্যান মো. মুত্তাচ্ছির মিয়া বলেন, ওই সভায় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আশপাশের ৫০ গ্রামের মুরব্বিরা। সভায় আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলেদের দায়ী করা হয়। আর চা-শ্রমিকদের ছয় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় উপস্থিত থাকা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া বলেন, এ আপসরফা নিয়ে আমি তীব্র বিরোধিতা করেছি। আমি মনে করি সন্ত্রাসী ও বখাটেদের বাঁচাতে এই আপস করা হয়েছে। সেদিন যদি তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া হতো তাহলে আজকের এ ঘটনা ঘটতো না।
আবদুল আলী বাগালের ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হলেও দুই বছরে আজও জরিমানার এক টাকাও পাননি পিয়ারী রবি দাস। তিনি বলেন, ভয়ে আবদুল আলীর কাছে টাকা চাওয়ার সাহস পাইনি আমরা। পিয়ারী লাল বলেন, সেদিনের ঘটনার বিচার শক্তভাবে হলে আজ আমাদের সামনে চার শিশুর লাশ দেখতে হতো না। অথচ সুন্দ্রাটিকি গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানরা গতকাল বলেছেন, এই ৬ লাখ টাকা আমাদের জমি বিক্রি করে আবদুল আলী বাগালকে দেয়া হয়েছে চা-শ্রমিকদের দেয়ার জন্য। তাদেরও প্রশ্ন এ টাকা চা-শ্রমিকরা না পেলে গেল কোথায়?
ওই সালিশ সম্পর্কে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের তালুকদার পঞ্চায়েতের প্রধান হাজি আবদুল খালিক মাস্টার বলেন, পঞ্চায়েত করি গ্রামে শান্তির জন্য। আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলেদের কু-কর্মের দায় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের উপর বর্তে ছিল। তাই এটাকে এ ভাবে শেষ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, আপসরফায় ছয় লাখ টাকার জমি বিক্রি করে আবদুল আলী বাগালের কাছে দিয়েছিলাম। কিন্তু আবদুল আলী এক টাকাও দেননি।
এর পরের ঘটনা আরও ভয়াবহ। ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী স্কুলে যাচ্ছিল। রুবেল তার পথ আগলে দাঁড়ায়। খাতা টেনে নিয়ে এতে তার ফোন নাম্বার লিখে দেয়। বলে আজ রাতে আমাকে ফোন না দিলে তোর খবর আছে। গত বছরের ২৭শে অক্টোবরের ঘটনা এটি। রুবেল ক্লাস টেনের ছাত্র। ওই ছাত্রী বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘটনা জানালে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক রুবেলকে ডেকে শাসিয়ে দেন। বলেন, তোর অভিভাবক নিয়ে আসিস। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল তার লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে হামলা চালায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ভাঙচুর করে। বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ সকল শিক্ষককে দুই ঘণ্টা আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। ফয়জাবাদ বিদ্যালয়ের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, সেদিন যা দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এই বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হয়ে এমন করতে পারে তা ভাবলে গা শিহরে উঠে। এ ব্যাপারে ভাদেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মত্তাছির মিয়া বলেন, রুবেলকে তার অভিভাবক নিয়ে পরদিন আসতে বলেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন সকালে রুবেল তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে স্কুলে হামলা চালায়। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যুতের তার ও লাঠি দিয়ে প্রহার করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। তাদের ওপরও হামলা করে তারা। একপর্যায়ে অভিভাবকরা মিলে তাদের ধাওয়া করলে ফিরে যায়। কিন্তু রুবেল গ্রামে গিয়ে খবর দেয় পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামের লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়েছে। এ খবরে আবদুল আলী বাগালের লোকজন জড়ো হয়ে তীর-ধনুক, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অভিভাবকদের ওপর আক্রমণ করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালায়।       
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ছুটে যান বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই, এএসপি (সার্কেল) সাজ্জাদ ইবনে রায়হান । তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে বাহুবল মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন পিপিএম বলেন, রুবেল ও জুয়েল বখাটে। তাদের নিয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কে ছিল। এবার আর তারা ছাড় পাবেনা।
এ ব্যাপারে ফয়জাবাদ হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় দীর্ঘদিন আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসেনি। ফলে পাঠদান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনতে মাইকিং করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে পরামর্শ সভা করা হয়েছে।  সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই, ভাদেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মত্তাছির মিয়া, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন অর রশিদ, সদস্য হেলাল উদ্দিন, সফর উদ্দিন, মনিরুজ্জামান ফারুক, আব্দুল খালিক মাস্টার, প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার দেব, ফয়জাবাদ পরগনার নেতা হুমায়ূন কবীর হিরণ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসিম, রশিদপুর চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি পিয়ারী লাল দাস। সিদ্ধান্ত হয় বিষয়টি সালিশে নিষ্পত্তির।  উভয়পক্ষ সালিশে সম্মত  হয়। এ সালিশেও আবদুল আলী বাগাল ও তার পুত্রদের দায়ী করা হয়। ভাঙচুর করা স্কুলের কক্ষ ও দরজা জানালা মেরামতের দায়িত্ব উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে  নেন। এ পর্যন্তই শেষ। গতকাল সরজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ভাঙ্গা দরজা জানালা এখনও ভাঙ্গাই রয়েছে। ফয়জাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, ওই সালিশে আমাদের বলে দেয়া হয় কাকে কাকে দাওয়াত করা যাবে। কাকে কাকে দাওয়াত করা যাবেনা। ফলে সেই আপস সভায় আমাদের পক্ষের কাউকে বলতেও পারিনি। এ ব্যাপারে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, আমি ব্যর্থ। অনেকবার পুলিশকে পাঠিয়েছি তাদের ধরতে। শুনেছি তাদের ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু পথিমধ্যে অদৃশ্য ফোনে তাদের ছেড়ে দিতে হয়েছে। ওইসব অদৃশ্য ব্যক্তিরাই সুন্দ্রাটিকি গ্রামে অশান্তির মূল। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে আবদুল আলী বাগাল ও তার পুত্ররা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। ছিচকে চুরি ও ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত ছিল রুবেল ও জুয়েল। গত কদিন আগে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের এক প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। সে ঘটনায়ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
সর্বশেষ পঞ্চায়েতের কর্তৃত্ব নিয়ে আবদুল আলী বাগাল ও তার পুত্র রুবেল, জুয়েল তাদের সঙ্গীদের নিয়ে সুন্দ্রাটিকি তালুকদার পঞ্চায়েতের চার শিশু শুভ, ইসমাঈল, তাজেল ও মনিরকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যাকা ের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনায় চলে আসে বাহুবল ও সুন্দ্রাটিকি গ্রাম। এর সঙ্গে আলোচনায় আসে আবদুল আলী বাগাল ও তার পুত্রদের কুকীর্তির কথা। ওদিকে এ ঘটনার পর বাহুবলের বিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একুশে ফেব্রুয়ারিতে শপথ নিয়েছে। তারা আর এলাকায় কোন রুবেল, জুয়েল সৃষ্টি হতে দেবেনা। তাদের প্রতি ঘৃণা স্বরুপ আর কারও নাম রুবেল-জুয়েল না রাখার ঘোষণাও দেন তারা। 
লাশ পাওয়ার স্থান দেখতে গেলেন সন্তানহারা চার মা: বুধবার সকালে গ্রামের ২০/২৫ জন মহিলাসহ নিহত তাজেলের মা আমেনা খাতুন, মনিরের মা ছুলেমা খাতুন, শুভর মা পারুল বেগম ও ইসমাঈলের মা মিনারা খাতুন গ্রামের পার্শ্ববর্তী ইছাবিলের সেই বালির গর্তের পাশে যান। যেখান থেকে ৮ দিন আগে তাদের সন্তানদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর কেউ একজন আঙ্গুল তোলে ওই স্থানটি দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে পুত্র শোকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এ সময় তাদের বুকফাটা আর্তনাদ দেখে উপস্থিত সবার চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, বিকালে হবিগঞ্জ ছাত্র সমন্বয় ফোরাম নামে একটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সুন্দ্রাটিকি গ্রামের শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে যান। এ সময় সংগঠনের সভাপতি শেখ সুলতান মো. কাওসার নিহতের ৪টি পরিবারকে ৩৬ হাজার টাকা এবং বাহুবল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই ৪০ হাজার টাকা অনুদান দেন। এছাড়াও রশিদপুর চা বাগানের ডিজিএম তাসকিন এ চৌধুরী অনুদান দেন তাদের। ওদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার ১০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক এবং কিশলয় কিন্ডারগার্টেন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে।

No comments

Powered by Blogger.