মার্কিন বিমানবাহী রণতরির প্রাধান্য ফুরিয়ে আসছে!

মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ l ছবি: এএফপি
আকার ও শক্তিমত্তার বিবেচনায় বিশ্বে আজও মার্কিন বিমানবাহী রণতরিগুলোর সমকক্ষ কিছু নেই। বলা হয়ে থাকে, এসব রণতরির টিকিটি ছোঁয়ার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, এই বিশাল রণতরিগুলোর ‘অবিসংবাদিত প্রাধান্য’ সম্ভবত ফুরিয়ে আসছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী বিশ্বের যেখানেই মোতায়েন করা হোক, রণতরিগুলো সাধারণত থাকে আশপাশের সমুদ্রসীমায়। শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াইয়ে ইস্পাতনির্মিত এসব অতিকায় দানবের জুড়ি মেলা ভার। চীন, ইরান ও রাশিয়ার মতো দেশগুলো কখনোই মার্কিন বিমানবাহী রণতরিবহরের সমকক্ষ কিছু গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারেনি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমরশক্তির সবচেয়ে বড় এই উৎসকে রুখতে তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ঢেলে নিজেদের বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছে। এর মাধ্যমে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক কিছু সমরাস্ত্র ও কৌশল মার্কিন বিমানবাহী রণতরিগুলোর নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলেছে বলে ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষণে মন্তব্য করা হয়েছে।
সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি (সিএনএএস) নামের প্রতিষ্ঠানটি গত সোমবার তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘রেড অ্যালার্ট: দ্য গ্রোয়িং থ্রেট টু ইউএস এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ারস’ (চরম সতর্কতা: মার্কিন বিমানবাহী রণতরিগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান হুমকি) শীর্ষক এই প্রতিবেদনে মূলত দুটি বিষয়ের ওপরে আলোকপাত করা হয়েছে। এক. প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক তৎপরতা; দুই. ‘অ্যান্টি-অ্যাকসেস/এরিয়া ডিনায়াল’ (এ২/এডি) নামের একটি পরিভাষা, যা প্রতিরক্ষাবিষয়ক মহলে এখন ক্রমবর্ধমানভাবে আলোচিত হচ্ছে। এ২/এডি-এর মূল কথা হচ্ছে, যুদ্ধক্ষেত্রের একটা নির্দিষ্ট এলাকায় শত্রুপক্ষকে ঢুকতে না দেওয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
প্রতিবেদনে দূরপাল্লার জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিষয়ে চীনের মনোযোগ দেওয়ার ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। এতে বলা হয়, এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঙ্গে রয়েছে দেশটির ভূমিভিত্তিক ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। এসবের সমন্বয়ে চীন মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য একটি ‘ক্রমবর্ধমান হুমকি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন একা নয়, ইউরোপের বাল্টিক এলাকায় রাশিয়াও এ২/এডি কৌশল-ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সেখানকার কালিনিনগ্রাদে রুশ নৌঘাঁটিতে স্পর্শকাতর আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক ও জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া সিরিয়ার আশপাশেও রাশিয়া এ২/এডি কৌশল গড়ে তুলেছে বলে ন্যাটোর কমান্ডারদের দাবি।
অন্যান্য দেশ ড্রোন, অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের মতো নিত্যনতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে এ২/এডি ব্যবস্থা গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেছে বলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দিনে দিনে ঝুঁকি বাড়ছে। সিএনএএসের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশেষ করে মার্কিন বিমানবাহী রণতরিগুলো থেকে দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানার সক্ষমতা কমানোর কারণে ঝুঁকি বেড়েছে। রণতরিগুলোতে বেশি বেশি বিমান অভিযান চালানোর ব্যবস্থা যুক্ত করা হলেও সেগুলো অধিকতর স্বল্পপাল্লার।

No comments

Powered by Blogger.