শোকে মুহ্যমান ফ্রান্স- আইএস ঠেকাতে চাই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

প্যারিসে শুক্রবার রাতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর
গত রোববার শহরটির সবচেয়ে বড় গির্জা নটর ডেম
ক্যাথেড্রালে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে প্রার্থনার
আয়োজন করা হয়। সেই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে
অংশ নেয় হাজারো মানুষ l ছবি: সুমন ইউসুফ
প্যারিসে হামলায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘নির্দয় যুদ্ধ’ শুরুর কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। তাঁর এই কথার পর দেশটির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। রাস্তায় নেমেছে সেনাবাহিনী।
তবে গত শুক্রবারের বোমা হামলা ও গোলাগুলির ঘটনা পশ্চিমা দেশের একটি আধুনিক ও উন্মুক্ত রাজধানীকে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার নানা জটিলতাকেই আবারও সামনে এনেছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, প্যারিসের নিরাপত্তায় কোন মাত্রার ঘাটতি ছিল? এ প্রশ্নও উঠতে পারে, ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই হামলা কি ঠেকাতে পারত বা তাদের কী পারা উচিত ছিল?
ঘরের বাইরে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে ফ্রান্সের বৃহত্তর অভিযানের প্রচারণার অবস্থাই বা কী? প্যারিসে প্রকাশ্যে প্রাণঘাতী হামলার পর দেশটিতে কি কোনো পরিবর্তন ঘটতে চলেছে?—উদয় হতে পারে এ রকম আরও প্রশ্ন।
এ বছরই গত জানুয়ারি মাসে ফ্রান্সে ব্যঙ্গ পত্রিকা শার্লি এবদো এবং ইহুদিদের একটি বিপণিবিতানে হামলা হয়। এসব হামলা যত মন্দই হোক না কেন, সেগুলো ছিল অত্যাসন্ন আরও ভয়াবহ হামলারই সতর্কসংকেত। ওই সব হামলার পরও নিরাপত্তা জোরালো করা হয়েছিল। বিভিন্ন ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছিল শত শত নতুন পদও। সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তথ্য বিনিময় বাড়াতে যোগ করা হয়েছিল নতুন নতুন সরঞ্জাম-উপকরণ।
এটা অনস্বীকার্য যে এগুলোর কার্যকারিতার জন্য সময়ের প্রয়োজন এবং সৃষ্ট নতুন পদগুলো সবে মূলধারায় যুক্ত হতে শুরু করেছে। তবু এসব পদক্ষেপ একার হাতে আইএসকে মোকাবিলা করার কাজে যথেষ্ট না হতে পারে। জানুয়ারির মতো গত শুক্রবারের হামলার ক্ষেত্রেও ধারণা করা হচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীদের অন্তত একজন ফরাসি গোয়েন্দাদের পূর্বপরিচিত। বাতাক্লঁ কনসার্ট হলে আত্মঘাতী হামলাকারীদের একজন ইসমাইল ওমর মোস্তফে ছিলেন ফরাসি নাগরিক ও ছোটখাটো অপরাধী।
উগ্রপন্থী কর্মকাণ্ডের ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে ২০১০ সাল থেকে এই ফরাসি ব্যক্তি গোয়েন্দাদের নজরদারিতে ছিলেন। লো মঁদ পত্রিকার খবর অনুযায়ী, তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে সিরিয়ায় থাকতে পারেন। যে কারণেই হোক, তিনি যদি দেশে ফিরে থাকেন বা যখনই ফিরে থাকেন, তা নিয়ে কোনো সতর্কঘণ্টা বেজে ওঠেনি। প্যারিসে শুক্রবারের হামলার বিষয়ে ফরাসি কর্তৃপক্ষ বিস্তারিত না জানালেও তাদের স্পষ্ট বিশ্বাস, এ হামলার পেছনে বাইরের হাত আছে। তারা মনে করে, আইএসের যে সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে, তাদের সঙ্গে বেলজিয়ামের সংশ্লিষ্টতা আছে।
হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করার কথা জানা গেছে। এঁরা তিনজনই ফরাসি নাগরিক। তবে দুজন ব্রাসেলসে থাকতেন। প্যারিসে থাকতেন একজন। তিনি ওই ইসমাইল মোস্তফে। ব্রাসেলসে যে দুজন থাকতেন, তাঁদের মধ্যে আবদেসালেম সালেহ নামের একজন হামলায় অংশ নিয়ে পালিয়ে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি মিসরে যাত্রীবাহী রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়া, তুরস্কে সমাবেশে ও লেবাননে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বোমা হামলা এবং এখন প্যারিসে এ হামলার ঘটনা—এ সবই নিজেদের ঘাঁটি সিরিয়া ও ইরাকের বাইরে শত্রুর বিরুদ্ধে আইএসের হামলা চালানোর সক্ষমতাকেই ফুটিয়ে তুলেছে।
তাই, নিজেদের ঘরের নিরাপত্তা জোরদার করা এবং ইউরোপজুড়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই করা ছাড়াও প্যারিসের ঘটনা আইএসকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক শান্তি পরিকল্পনার অধীন বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হতে পারে এই পন্থার একটি।

No comments

Powered by Blogger.