অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর মোদি

নরেন্দ্র মোদি
প্রকৃত ভারতীয় কে, আর কে নন, তা নির্ধারণে কেন্দ্রীয় সরকার নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল মঙ্গলবার লোকসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে সেই উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। সরকারের উদ্যোগ নিয়ে লোকসভায় সরকারপক্ষের সদস্যদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যদের তুমুল কথা-কাটাকাটি চলে। তৃণমূল সদস্যরা সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতা করে বলেন, এভাবে সাম্প্রদায়িকতায় উসকানি দেওয়া ঠিক নয়। পাল্টা জবাবে বিজেপি সাংসদেরা বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় ভোটব্যাংকের রাজনীতি করা হচ্ছে। এ অবস্থা বরদাশত করা হবে না। প্রশ্নটি তোলেন বিহারের গোড্ডা আসনের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি বলেন, যে যেভাবে পারছে ভারতে আসছে। কারও জাল নোটের কারবার, কারও মাদকের।
কেউ আসছে নেপাল থেকে, কেউ বাংলাদেশ থেকে, কেউ পাকিস্তান থেকে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার প্যাটার্ন বদলে গেছে।আসাম, বিহার অথবা পশ্চিমবঙ্গ—সর্বত্র এক ছবি। নাগরিকত্বও দেওয়া হচ্ছে ভোটব্যাংকের রাজনীতি করার জন্য।বাংলাদেশিদের ভোট পেতে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিশিকান্ত যখন এই অভিযোগ করছেন, সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়, শতাব্দী রায়সহ প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন।স্পিকার বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা শান্ত হন না। স্পিকারের উদ্দেশে কল্যাণ বলেন, এভাবে সাম্প্রদায়িকতা করতে দেবেন না।এ কথা বলার অনুমতি দেবেন না। নিশিকান্তকে বলতে শোনা যায়, ভোটব্যাংকের রাজনীতির দরুণই দেশের আজ এই হাল।গত ১০ বছরে ভারত ‘ব্যানানা রিপাবলিক’ হয়ে গেছে। তিনি জানতে চান, এ অবস্থা রুখতে, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার ‘পোটা’ জাতীয় কোনো আইন আনার কথা আবার ভাবছে কি না।
সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলায় ‘পোটা’ আইন আনা হয়েছিল এনডিএ আমলে।পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় এবং অবৈধ নাগরিকদের খোঁজে সরকারের উদ্যোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, অন্য দেশের নাগরিকদের এ দেশে আসার বিষয়টি কেন্দ্রের নজরে আছে। এটা রুখতে সরকার বদ্ধ-পরিকর। ভারত ও বাংলাদেশের চার হাজার ৯৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে দুই হাজার ৮২৩ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ১৩০ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার কাজ চালু রয়েছে। মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে বেড়া দেওয়ার প্রক্রিয়া ওই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত হাতে নেওয়া হবে। ভারত ও প্রতিবেশীদের সীমান্তের বহু জায়গা অগম্য। এসব কথা বলার পর রাজনাথ তাঁর সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, কে নাগরিক, কে নাগরিক নন, কে অনুপ্রবেশকারী তা নির্ণয় করতে সরকার কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। সম্প্রতি তিনি ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) এবং ইউনিক আইডেনটিফিকেশন বা ইউআইডি বিভাগের বৈঠক ডাকেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, দুই বিভাগ একযোগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করুক কারা নাগরিক। রাজনাথ বলেন, দুই বিভাগ এটা ঠিক করার পর বৈধ নাগরিকদের সরকার একটি রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র দেবে।

No comments

Powered by Blogger.