আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে আইএসআইএল

আবু বকর আল-বাগদাদি
ইরাকের সুন্নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আইএসআইএলের স্বঘোষিত ‘খলিফা’ আবু বকর আল-বাগদাদি শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে কিছুটা প্রকাশ্যে এসেছেন। এর মাধ্যমে ইসলামিক স্টেট অব দ্য ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (এসআইএসএল) আত্মবিশ্বাসের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এমনই মনে করছেন। খবর এএফপির। ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় মসুল শহরের আল-নুরি মসজিদে গত শুক্রবার আইএসআইএলের প্রধান আবু বকর জুমার খুতবা দেওয়ার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। আবু বকর আল-বাগদাদির এই গোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়ায় সম্প্রতি সরকারবিরোধী অভিযানে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। উভয় দেশের বড় অংশের ওপর প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ। এমন পরিস্থিতিতে আকস্মিক বাগদাদির এই আত্মপ্রকাশের ঘটনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই মসজিদে গত জুমার নামাজে আবু বকরের দেওয়া খুতবা নিয়ে পরদিন শনিবার গোষ্ঠীটি এক ভিডিও প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, তিনি মুসলমানদের প্রতি তাঁকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা কোনো বিদ্রোহী কমান্ডারের এভাবে জনসমক্ষে হাজির হওয়া ও নিজেকে খলিফা বলে ঘোষণা দেওয়া প্রকৃতই বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। ইরাক সরকারের বিরুদ্ধে আইএসআইএলের অগ্রযাত্রা প্রথম সবার নজরে আসে গত মাসে।
এখন ‘খলিফা’ আবু বকরের এই আত্মপ্রকাশ গোষ্ঠীটির ধারাবাহিক সাফল্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রুকিংস দোহা সেন্টারের ফেলো চার্লস লিস্টার বলেন, ‘সহজ কথায়, বিশ্বের শীর্ষ তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের অন্যতম একজন এখন মসুল শহরের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত জিহাদি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইরাকের অন্যতম বৃহত্তম শহরের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মসজিদে আধা ঘণ্টা বক্তৃতাও দেন তিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত বিষয় হলো, এ রকম কেন্দ্রীয় কোনো স্থান থেকে জনসমক্ষে বাগদাদির আত্মপ্রকাশ তাঁর সংগঠনের ভেতরের সুদৃঢ় অবস্থানকেই তুলে ধরেছে।’ সুন্নি আরব মিলিশিয়াদের সম্মুখ বাহিনী হিসেবে পরিচিত দ্য ইসলামিক স্টেট (আইএস) ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মসুল গত ১০ জুন দখল করে। গত শনিবার প্রকাশিত ভিডিওতে দৃশ্যত বাগদাদিকে দেখা যায়, ঘন-ধূসর শ্মশ্রুমণ্ডিত, হৃষ্টপুষ্ট দেহের অধিকারী জমকালো পোশাকের একজন মানুষ হিসেবে। মসুল দখলের পর ২৯ জুন ইরাকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় আইএসআইএল। সে সময় তাদের নেতার পরিচিতি প্রকাশ করা হয় ‘খলিফা ইব্রাহিম’ হিসেবে। আবু বকর আল-বাগদাদিই যে সেই ব্যক্তি, শুক্রবার তাঁর এই আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হলো। আবু বকর যখন আইএসআইএলের দায়িত্ব নেন, তখন সেটি আল-কায়েদার একটি শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে তিনি একে পুনর্গঠন করে আল-কায়েদার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাস দমনবিষয়ক সাবেক পরামর্শদাতা ও সাবান সেন্টার ফর মিডলইস্ট পলিসির গবেষক উইল ম্যাকক্যানটস জানান, এই গোষ্ঠী সম্পর্ক যা জানা যায়, তার সবই ভয়ানক। আর তাই, এ রকম ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাগদাদি তাঁর খোলস থেকে বেরিয়ে এসে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হবেন। উইল ম্যাকক্যানটস আরও বলেন, বাগদাদির ওই বক্তৃতা থেকে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিষয় নয় বরং আল-কায়েদার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী জিহাদি নেতৃত্ব নিয়ে তাঁর প্রতিযোগিতার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সুন্নিপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আইএসআইএল হাজারো বিদেশি যোদ্ধাকে দলে ভিড়িয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এসব বিদেশি যোদ্ধার অনেকেই পশ্চিমা দেশ থেকে যোগ দিয়েছেন। গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হলেন বাগদাদি। ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর তিনি জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হন বলে ধারণা করা হয়। ভিডিও খতিয়ে দেখছে সরকার: ইরাক আইএসআইএল-প্রধান আবু বকরের বক্তৃতার ভিডিও টেপ খতিয়ে দেখছে। সরকারের একজন মুখপাত্র গতকাল রোববার জানান, ভিডিওবার্তার বস্তুনিষ্ঠতা নিরূপণ করতে তাঁরা ভিডিওটি খতিয়ে দেখছেন।

No comments

Powered by Blogger.