মমতার ঘরে আগুন

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে তৃণমূল কংগ্রেস মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। আর একে কেন্দ্র করে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। আর বিহারে পরিবারতন্ত্র ধরে রাখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা লালুপ্রসাদ যাদব। তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী তাঁকে ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরই গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলটির প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন অনেক তারকা। মমতার তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নায়ক-নায়িকার পাশাপাশি রয়েছেন গায়ক ও খেলোয়াড়। অন্তত ১০ জন নামীদামি তারকাকে এবার মনোনয়ন দিয়েছে তৃণমূল। যাঁরা এত দিন দলকে তৈরি করেছেন, দলের রাজনীতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেসব পোড় খাওয়া নেতা হয়েছেন বঞ্চিত। এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তৃণমূলে ৪২ প্রার্থীর মধ্যে ১১ জন মহিলা ও সাতজন মুসলিম প্রার্থী রয়েছেন। তৃণমূলে এবার অনেক তারকাকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিষয়টি বহু এলাকায় ভালো চোখে দেখছেন না তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
বিভিন্ন এলাকায় বাইরের ও অচেনা প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে দলে। তবে মমতার রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় কেউ এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। দার্জিলিংয়ে ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়াকে মনোনয়ন দেওয়ায় পাহাড়বাসী খুশি হতে পারেনি। তারা কোনো ভূমিপুত্রকে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিল। ভাইচুং সিকিমের বাসিন্দা। পাহাড়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনরত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে না জানিয়ে তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করায় তারাও ক্ষুব্ধ। ২০০৯ সালের সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থনে এই আসনে জিতেছিল বিজেপি প্রার্থী যশোবন্ত সিনহা। এবার নতুন করে টালিউড তারকা দেব, সন্ধ্যা রায়, ভূমি ব্যান্ডের সৌমিত্র রায়, নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ, অভিনেত্রী মুনমুন সেন, সংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেনসহ কংগ্রেস ও বাম দল থেকে তৃণমূলে আসা বিধায়কদের বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা জেলার দুটি আসনে অভিনেতা দেব এবং অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হচ্ছে ছেলেখেলা হচ্ছে। পাগলামির একটা সীমা আছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী যাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁরা কি এলাকায় সময় দিতে পারবেন? দলে যোগ্য নেতা থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কেন বঞ্চিত করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’
এ ঘটনার পর টিপ্পনী কেটে বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, এই জেলার তৃণমূল নেতাদের সাংসদ হওয়ার যোগ্যতা নেই, এটাই মমতা বিশ্বাস করেন। তাই বাইরে থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের এখানে প্রার্থী করা হয়েছে। ক্ষোভের এই চিত্র শুধু পশ্চিম মেদিনপুরেই নয়। প্রার্থিতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ আসনেই তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এদিকে একই দিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বামফ্রন্টও। তাদের ৪২ প্রার্থীর মধ্যে ২৬ জনই নবাগত। প্রার্থীদের মধ্যে ছয়জন নারী, ১২ জন মুসলিম ও ১৩ জন তফসিলি ও তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের। বামফ্রন্টের সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী শেখ ইব্রাহিম আলি। তাঁর বয়স ২৫। তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক আসনে তৃণমূলের বর্তমান সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে লড়বেন।

No comments

Powered by Blogger.