খেয়াল গানের আধুনিক রূপকার নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গ by মোবারক হোসেন খান

‘যবন’ মানে গ্রিস জাতি। অভিধানে যবনের অর্থ নির্ধারিত হয়ে আছে দীর্ঘকাল থেকে। যবন যদি গ্রিস জাতির নাম হয়, তাহলেও তো অন্য কোনো জাতিকে সে নামে ডাকার অবকাশ নেই। যদি ডাকা হয় তাহলে তাতে হীনম্মন্যতারই কেবল পরিচয় বহন করে। রামপ্রসাদ রায় রচিত ‘সঙ্গীত জিজ্ঞাসা’ সঙ্গীত-গ্রন্থখানা পড়ে এ ধরনের একটা বিভ্রান্তিকর তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রিস জাতিকে মুসলিম জাতিতে পরিণত করে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে যেন তিনি অস্বীকার করতে চেয়েছেন। ‘হিন্দুস্তানি রাগসঙ্গীতে যবন-সংস্কৃতির প্রভাব’ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘এককালে যবন বলিতে একমাত্র গ্রিকদিগকেই বুঝাইত। সঙ্গীতে যবন সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যবন শব্দটি সংকীর্ণ অর্থে প্রধানত মুসলমান সম্প্রদায়কেই বুঝায়।’ এটাকে অনায়াসে সত্যের অপলাপ বলে আখ্যায়িত করা যায়। কেননা, মুসলমানদের আগমন ভারতবর্ষে না ঘটলে রাগসঙ্গীতের আবির্ভাবই ঘটত না। যে জাতি রাগসঙ্গীত সৃষ্টি করে সমগ্র ভারতবর্ষের সঙ্গীতকে আকণ্ঠ সমৃদ্ধ করেছে তাদের সংকীর্ণ অভিধায় অভিহিত করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে, তা কিছুতেই স্বীকার করা যায় না। এ কথা অবশ্য সত্য, ভারতবর্ষের সঙ্গীতে মিসর, গ্রিস, আরব, পারস্য প্রভৃতি দেশের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে আমীর খসরুর রাগসঙ্গীত সৃষ্টির পর, তার আগে নয়। রামপ্রসাদ রায় সে কথা নিজেই স্বীকার করে লিখেছেন, “... যেসব ব্যক্তির অবদান ভারতীয় সঙ্গীতের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করিয়াছে তাহাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নাম হইল অসামান্য শ্র“তিধর, সঙ্গীত স্রষ্টা আমীর খসরু। তিন প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় সঙ্গীতের সহিত পারস্য দেশীয় সঙ্গীতের সুসামঞ্জস্য সংমিশ্রণ করে ভারতীয় সঙ্গীত ধারাকে মাধুর্যমণ্ডিত করিবার কাজে পথপ্রদর্শক। বর্তমানের হিন্দুস্তানি সঙ্গীতপদ্ধতি আমীর খসরুর নিকট সীমাহীন ঋণে আবদ্ধ। ভারতীয় ধ্র“পদ গানের সহিত পারস্য দেশের গজল গানের সংমিশ্রণ ঘটাইয়া ‘খেয়াল’ গান প্রবর্তনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তাহারই।” খেয়াল গান ও খেয়াল গানের প্রকৃত রূপকারের কথা বলতে গিয়েই অত কথার অবতারণা। তার আগে খেয়াল গানের কিছু কথা। ফার্সি ভাষায় ‘খেয়াল’ অর্থ ‘কল্পনা’। নানাবিধ তান-বিস্তার ইত্যাদির দ্বারা বিভিন্ন তালে রাগ গানকে বলা হয় খেয়াল। বলা যায় সুরের ‘বিহার’ খেয়াল গানের মূল বৈশিষ্ট্য। খেয়াল গানের বিষয়বস্তু প্রধানত শৃঙ্গার রসাত্মক, তবে সঙ্গীতের শিল্প-সৌন্দর্যের মাধ্যমে এর প্রকাশ। আমীর খসরু খেয়ালের আবিষ্কর্তা। তবে তিনি সৃষ্টি করেন ‘ছোট খেয়াল’ (Slow kheyal)। এ প্রকার খেয়ালের গতি চপল। রচনা খুব সংক্ষিপ্ত। স্থায়ী ও অন্তরাতে এ গান সীমাবদ্ধ। স্থায়ী ও অন্তরা দুটিই দু’চরণে রচিত হয়। পরবর্তীকালে জৌনপুরের সুলতান হুসেন শাহ্ শর্কী আরেক ধরনের খেয়াল প্রচলন করেন, যার নাম ‘বড় খেয়াল’ (ঝষড়ি শযবুধষ)। এ ধরনের খেয়ালের গতি বিলম্বিত। চাল গম্ভীর। মন্থরগতিতে এর বিস্তার। এ গানের রচনাপদ্ধতি ছোট খেয়ালের মতোই। স্থায়ী ও অন্তরার মাধ্যমেই এ খেয়াল পরিবেশিত হয়। অষ্টাদশ শতকে মোগল-সম্রাট মুহম্মদ শাহ্র আমলে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ নিয়ামত খাঁ এ খেয়াল গান নবরূপে সমৃদ্ধ করেন। ফলে খেয়ালের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তিনি খেয়ালে বিভিন্ন ধরনের বিস্তার, বোলতান ইত্যাদি সংযোজন করে নতুনরূপে খেয়ালের গান করতেন। খেয়াল গানকে প্রচলিত করার নেপথ্য কাহিনী হিসেবে প্রচলিত আছে যে, নিয়ামত খাঁ ছিলেন মূলত বীণাবাদক। তিনি মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহর দরবারে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মোগল দরবারের প্রথামাফিক গায়কদের সঙ্গে অনুসঙ্গ যন্ত্রী হিসেবে বীণা বাজাতেন। শিল্পী হিসেবে এ কাজটা তার মনঃপূত ছিল না। তিনি এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সঙ্গীতের গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং রাজদরবার থেকে ছুটি নিয়ে ‘খেয়াল’ গানের সাধনায় একনিষ্ঠভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি দুটি কাওয়াল বালককে তার গবেষণালব্ধ খেয়াল গানে পারদর্শী করে তোলেন। বালকদ্বয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খেয়াল পরিবেশন করে বিশেষ সুনাম অর্জন করে। তাদের সুখ্যাতির কথা অচিরেই মোগল দরবারে পৌঁছে। মোগল সম্রাট বালক-শিল্পীদ্বয়কে দরবারে খেয়াল পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। নতুন পদ্ধতিতে পরিবেশিত খেয়াল গান শুনে সম্রাট অভিভূত হয়ে পড়েন এবং বালক দু’জনকে রাজদরবারে নিয়োগ করেন। অনতিকালের মধ্যেই তিনি জানতে পারলেন, বালক দুটির গুরু নিয়ামত খাঁ। তার কাছে তালিম নিয়েই বালকদ্বয় সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নিয়ামত খাঁ নতুন পদ্ধতির এ খেয়াল গানের উদ্ভাবক। তিনি নিয়ামত খাঁকে আমন্ত্রণ করে এনে রাজদরবারে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ গদান করেন। নিয়ামত খাঁ সম্রাটের আহ্বানে রাজদরবারে যোগ দেন। সঙ্গীত-প্রেমিক সম্রাট নেয়ামত খাঁর নতুন রীতির খেয়াল গান শুনে এত মুগ্ধ হন যে, তাকে ‘শাহ’ উপাদিতে ভূষিত করেন। বিশিষ্ট সঙ্গীত শাস্ত্রকার ও গোস্বামী লিখেছেন, তানসেন ও মিশ্রী সিং (নবাৎ খাঁ) ছাড়া এর আগে আরও কোনো সঙ্গীতজ্ঞ এ দুর্লভ উপাধিতে ভূষিত হননি। নিয়ামত খাঁর শিষ্য কাওয়াল বালকের দু’জনের পরিচয় সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ড. করুণাময় গোস্বামী লিখেছেন, পূর্বে প্রচলিত মত এই যে, কাওয়াল বালকদ্বয় গোলাম রসুল ও মিঞা জানী। গোলাম রসুল (১৭০০-১৭৭০) ছিলেন দিকপাল খেয়ালগুণী। লখনৌয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। ... গোলাম রসুলের পুত্র টপ্পা গানের প্রচলয়িতা গোলাম নবী ওরফে শৌরী মিঞা। ... অপর কাওয়াল বালক বলে কথিত মিঞা জানীও গোলাম রসুলের সমকালে লখনৌয়ে বিখ্যাত খেয়ালগুণীরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু কাওয়াল বালকদ্বয় যে গোলাম রসুল ও মিঞা জানী নন এ কথাই বর্তমানে অধিকতর গৃহীত। সেই বালকদের শনাক্ত করা হয় বাহাদুর ও দুলহে বলে। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে বাহাদুর-দুলহে বিশিষ্ট খেয়াল গায়করূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং তারা একটি খেয়াল গীতিধারা সৃষ্টিতে সক্ষম হন বলে জানা যায়। খেয়াল গানের আধুনিক রূপায়ণের মধ্য দিয়েই শুরু হয় নিয়ামত খাঁর সঙ্গীত জীবনের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়। নিয়ামত খাঁ ছিলেন তানসেনের কন্যাবংশীয় একজন সুবিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। খেয়াল গানের অসামান্য রূপান্তরের কৃতিত্বের জন্য মোগল-সম্রাট মুহাম্মদ শাহ্ তাকে ‘সদারঙ্গ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বীণাবাদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলে তিনি বীণাবাদনে পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরে তিনি খেয়াল গানের আমূল পরিবর্তন সাধন করে খেয়াল গানের আধুনিক রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। খেয়াল গানের সঙ্গে নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সদারঙ্গের খেয়াল আজও সদারঙ্গের খেয়াল নামেই পরিচিত। খেয়াল এখনও নতুনত্ব-সন্ধানী সঙ্গীতরীতি, শুধু ক্লাসিক বা পুরাতনরীতি সর্বস্ব নয়। সদারঙ্গ মোগল-সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে আনুমানিক ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম-সময়ের তথ্য তার রচিত একটি গানে পাওয়া যায় : আবন কহ গয়ে অগম ভঈলওয়া উনকো, ভুজ ফরকত হৈ অঁখি মোরীবাঈ। সগুন বিচারো রেখোরে বখনা বেগ মিলনবা হোয় সদারঙ্গীলে ‘আলমগীর’ সাঈ॥ নিয়ামত খাঁ বা ন্যামৎ খাঁর পিতার নাম লাল খাঁ সানী। তার পিতামহের নাম খুশহাল খাঁ। খুশহাল খাঁ বিলাস খাঁর জামাতা। বংশপরম্পরায় তারা সঙ্গীতজ্ঞ। সদারঙ্গ দিল্লির মোগল সম্রাট মুহম্মদ শাহ্র রাজত্বকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। সদারঙ্গ ছিলেন একজন কুশলী বীণকার, গায়ক ও গীতিকার। তিনি একদিকে যেমন অজস্র খেয়াল রচনা করেছেন, তেমনি আবার বহু ধ্র“পদ ও ধামারও রচনা করেছেন। সদারঙ্গ রচিত ধ্র“পদ, ধামার ও খেয়ালগুলো কাব্যের দিক দিয়ে খুবই রসোত্তীর্ণ ছিল। তার রচিত গানের মধ্যে ধামার ও খেয়াল গানের আধিক্যই বেশি। তিনি সরগম ও তেলানা দিয়েও ধ্র“পদাঙ্গের গান রচনা করেছেন। তবে খেয়াল গানের আধুনিক রচয়িতা ও প্রবর্তক হিসেবেই তিনি সমধিক প্রসিদ্ধ। তার রচিত খেয়াল সম্পর্কে বলা চলে, ‘বিলাস স্রোতে ভাসমান বাদশাহ্রা যখন চটুলতার সঙ্গে মিশ্রিত করে এমন এক অপরূপ বস্তু সৃষ্টি করলেন, যা তরলতাকে দ্রবীভূত করে অন্তত ক্ষণিকের জন্যও জীবন সম্বন্ধে একটা মূল্যবোধ এনে দিতে সমর্থ হয়েছিল। সেই অপরূপ বস্তু হল কলাবন্তী খেয়াল। বাদশাহ্ মুহম্মদ শাহ্র দরবারে নিয়ামত খাঁ নামে তিনি রবাবী ও বীণকার ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ‘সদারঙ্গ’ নামে খেয়াল রচনা করেন। মাঝখানে তিনি দরবার ছেড়ে চলে যান এবং খেয়াল গানে পারদর্শিতা লাভ করেন। দু’জন কাওয়াল বালককে তালিম দিয়ে খেয়াল গানে নতুনত্ব এনে জনপ্রিয় করেন এবং সম্রাট মুহম্মদ শাহ্কে খেয়াল গানে মুগ্ধ করে আবার রাজদরবারে ফিরে আসেন। সম্রাট তাকে ‘শাহ সদারঙ্গ’ সম্মানে ভূষিত করেন। সদারঙ্গের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলেই কণ্ঠসঙ্গীতে খেয়ালের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। সদারঙ্গ খেয়াল গানে যুগান্তর এনে দিয়েছিলেন। তিনি খেয়াল গানের স্থায়ী ও অন্তরার মধ্যে প্রতি গানে এক একটি বিশেষ ভাবকে কেন্দ্র করেছেন। ফলে সে গান হয়ে উঠেছে মোহনীয়। সহজ মানবিক-প্রেম, নায়ক-নায়িকার ভাব অবলম্বন করেই তিনি গান রচনা করেছেন। তিনি গানে এনেছেন সংক্ষিপ্ত ও সহজ ঋতু বর্ণনা, মানসিক গুণবর্ণনা, কোথাও একটুখানি জীবনচিত্র, আবার কোথাও ভক্তি ভাব। বাণী গানের সুরকে কোথাও ভারাক্রান্ত করেনি। সদারঙ্গ খেয়ালকে শুধু বিশিষ্ট রূপদানই করেননি, এমন একটি ভাষা ও কার্যকরী রীতি সৃষ্টি করেছেন যার দরুন আজও অভিজাত খেয়াল-সদারঙ্গী খেয়াল এ দুই দিক থেকে বিশিষ্ট। সদারঙ্গের খেয়ালে ভাষা খেয়াল-আঙ্গিকের বিশিষ্ট ফর্মরূপে ব্যবহৃত। পরবর্তী খেয়াল রচয়িতারা এ বিশিষ্ট ফর্মেই গান রচনা করেছেন। তিনি ব্রজভাষা, লখনৌর ভাষা ও পাঞ্জাবি ভাষাতে দক্ষ ছিলেন বলে তার কবিতায় এ ভাষা ইচ্ছামতেি ব্যবহার করতে তার কিছুমাত্র অসুবিধা হতো না। হিন্দুস্তানি সঙ্গীতে যেসব দিকপাল, সঙ্গীতজ্ঞ নিজের উদ্ভাবিত রীতিপদ্ধতি সংযোজন ঘটিয়ে সঙ্গীতের উৎকর্ষ সাধন করে গেছেন তাদের মধ্যে নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গ অন্যতম। খেয়াল রীতির গান উদ্ভাবন করেও কয়েক শতাব্দী আগে আমীর খসরু ও হুসেন শাহ্ শর্কী যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গিয়েছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রূপদান করে সদারঙ্গ তাকে যুগ-যুগান্তরের অমূল্য সম্পদে পরিণত করে দিয়ে গেছেন। খেয়াল গানের বিকাশের ক্ষেত্রে নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। সদারঙ্গ রচিত খেয়াল গানে সম্রাট মুহম্মদ শাহ্র নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার কারণ হয়তো, তিনি মুহম্মদ শাহ্র দরবারের সঙ্গীতজ্ঞ এবং বাদশাহ্র প্রিয়পাত্র হওয়ার নিদর্শনস্বরূপ তার রচনায় মুহম্মদ শাহ্র নাম উল্লেখ করেছেন। নিয়ামত খাঁ তার রচিত গানে ভণিতা হিসেবে ‘সদারঙ্গীলে’ ব্যবহার করতেন। সদারঙ্গ ধ্র“পদ, ধামার ও খেয়াল গান রচনা ছাড়াও বীণাবাদ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিলেন এবং এতে কণ্ঠসঙ্গীতের অনুরূপ আলাপচারীর প্রবর্তন করেছিলেন। সদারঙ্গের বহুমুখী অবদান সঙ্গীত ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। সর্বোপরি খেয়ালের আধুনিক গীত রূপের উদ্ভাবন ও তার প্রতিষ্ঠার মাঝেই সদারঙ্গের সর্বোচ্চ সঙ্গীতগৌরব নিহিত।
‘যবন’ মানে গ্রিস জাতি। অভিধানে যবনের অর্থ নির্ধারিত হয়ে আছে দীর্ঘকাল থেকে। যবন যদি গ্রিস জাতির নাম হয়, তাহলেও তো অন্য কোনো জাতিকে সে নামে ডাকার অবকাশ নেই। যদি ডাকা হয় তাহলে তাতে হীনম্মন্যতারই কেবল পরিচয় বহন করে। রামপ্রসাদ রায় রচিত ‘সঙ্গীত জিজ্ঞাসা’ সঙ্গীত-গ্রন্থখানা পড়ে এ ধরনের একটা বিভ্রান্তিকর তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। গ্রিস জাতিকে মুসলিম জাতিতে পরিণত করে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে যেন তিনি অস্বীকার করতে চেয়েছেন। ‘হিন্দুস্তানি রাগসঙ্গীতে যবন-সংস্কৃতির প্রভাব’ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘এককালে যবন বলিতে একমাত্র গ্রিকদিগকেই বুঝাইত। সঙ্গীতে যবন সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যবন শব্দটি সংকীর্ণ অর্থে প্রধানত মুসলমান সম্প্রদায়কেই বুঝায়।’ এটাকে অনায়াসে সত্যের অপলাপ বলে আখ্যায়িত করা যায়। কেননা, মুসলমানদের আগমন ভারতবর্ষে না ঘটলে রাগসঙ্গীতের আবির্ভাবই ঘটত না। যে জাতি রাগসঙ্গীত সৃষ্টি করে সমগ্র ভারতবর্ষের সঙ্গীতকে আকণ্ঠ সমৃদ্ধ করেছে তাদের সংকীর্ণ অভিধায় অভিহিত করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে, তা কিছুতেই স্বীকার করা যায় না। এ কথা অবশ্য সত্য, ভারতবর্ষের সঙ্গীতে মিসর, গ্রিস, আরব, পারস্য প্রভৃতি দেশের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এটা সম্ভব হয়েছে আমীর খসরুর রাগসঙ্গীত সৃষ্টির পর, তার আগে নয়। রামপ্রসাদ রায় সে কথা নিজেই স্বীকার করে লিখেছেন, “... যেসব ব্যক্তির অবদান ভারতীয় সঙ্গীতের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করিয়াছে তাহাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য নাম হইল অসামান্য শ্র“তিধর, সঙ্গীত স্রষ্টা আমীর খসরু। তিন প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় সঙ্গীতের সহিত পারস্য দেশীয় সঙ্গীতের সুসামঞ্জস্য সংমিশ্রণ করে ভারতীয় সঙ্গীত ধারাকে মাধুর্যমণ্ডিত করিবার কাজে পথপ্রদর্শক। বর্তমানের হিন্দুস্তানি সঙ্গীতপদ্ধতি আমীর খসরুর নিকট সীমাহীন ঋণে আবদ্ধ। ভারতীয় ধ্র“পদ গানের সহিত পারস্য দেশের গজল গানের সংমিশ্রণ ঘটাইয়া ‘খেয়াল’ গান প্রবর্তনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তাহারই।”
<a href='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'><img src='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=780&n=acd94d5f' border='0' alt='' /></a>
খেয়াল গান ও খেয়াল গানের প্রকৃত রূপকারের কথা বলতে গিয়েই অত কথার অবতারণা। তার আগে খেয়াল গানের কিছু কথা। ফার্সি ভাষায় ‘খেয়াল’ অর্থ ‘কল্পনা’। নানাবিধ তান-বিস্তার ইত্যাদির দ্বারা বিভিন্ন তালে রাগ গানকে বলা হয় খেয়াল। বলা যায় সুরের ‘বিহার’ খেয়াল গানের মূল বৈশিষ্ট্য। খেয়াল গানের বিষয়বস্তু প্রধানত শৃঙ্গার রসাত্মক, তবে সঙ্গীতের শিল্প-সৌন্দর্যের মাধ্যমে এর প্রকাশ। আমীর খসরু খেয়ালের আবিষ্কর্তা। তবে তিনি সৃষ্টি করেন ‘ছোট খেয়াল’ (Slow kheyal)। এ প্রকার খেয়ালের গতি চপল। রচনা খুব সংক্ষিপ্ত। স্থায়ী ও অন্তরাতে এ গান সীমাবদ্ধ। স্থায়ী ও অন্তরা দুটিই দু’চরণে রচিত হয়। পরবর্তীকালে জৌনপুরের সুলতান হুসেন শাহ্ শর্কী আরেক ধরনের খেয়াল প্রচলন করেন, যার নাম ‘বড় খেয়াল’ (ঝষড়ি শযবুধষ)। এ ধরনের খেয়ালের গতি বিলম্বিত। চাল গম্ভীর। মন্থরগতিতে এর বিস্তার। এ গানের রচনাপদ্ধতি ছোট খেয়ালের মতোই। স্থায়ী ও অন্তরার মাধ্যমেই এ খেয়াল পরিবেশিত হয়। অষ্টাদশ শতকে মোগল-সম্রাট মুহম্মদ শাহ্র আমলে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ নিয়ামত খাঁ এ খেয়াল গান নবরূপে সমৃদ্ধ করেন। ফলে খেয়ালের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তিনি খেয়ালে বিভিন্ন ধরনের বিস্তার, বোলতান ইত্যাদি সংযোজন করে নতুনরূপে খেয়ালের গান করতেন।খেয়াল গানকে প্রচলিত করার নেপথ্য কাহিনী হিসেবে প্রচলিত আছে যে, নিয়ামত খাঁ ছিলেন মূলত বীণাবাদক। তিনি মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহর দরবারে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মোগল দরবারের প্রথামাফিক গায়কদের সঙ্গে অনুসঙ্গ যন্ত্রী হিসেবে বীণা বাজাতেন। শিল্পী হিসেবে এ কাজটা তার মনঃপূত ছিল না। তিনি এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সঙ্গীতের গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং রাজদরবার থেকে ছুটি নিয়ে ‘খেয়াল’ গানের সাধনায় একনিষ্ঠভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি দুটি কাওয়াল বালককে তার গবেষণালব্ধ খেয়াল গানে পারদর্শী করে তোলেন। বালকদ্বয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খেয়াল পরিবেশন করে বিশেষ সুনাম অর্জন করে।তাদের সুখ্যাতির কথা অচিরেই মোগল দরবারে পৌঁছে। মোগল সম্রাট বালক-শিল্পীদ্বয়কে দরবারে খেয়াল পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। নতুন পদ্ধতিতে পরিবেশিত খেয়াল গান শুনে সম্রাট অভিভূত হয়ে পড়েন এবং বালক দু’জনকে রাজদরবারে নিয়োগ করেন। অনতিকালের মধ্যেই তিনি জানতে পারলেন, বালক দুটির গুরু নিয়ামত খাঁ। তার কাছে তালিম নিয়েই বালকদ্বয় সুখ্যাতি অর্জন করেছে। নিয়ামত খাঁ নতুন পদ্ধতির এ খেয়াল গানের উদ্ভাবক। তিনি নিয়ামত খাঁকে আমন্ত্রণ করে এনে রাজদরবারে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ গদান করেন। নিয়ামত খাঁ সম্রাটের আহ্বানে রাজদরবারে যোগ দেন। সঙ্গীত-প্রেমিক সম্রাট নেয়ামত খাঁর নতুন রীতির খেয়াল গান শুনে এত মুগ্ধ হন যে, তাকে ‘শাহ’ উপাদিতে ভূষিত করেন। বিশিষ্ট সঙ্গীত শাস্ত্রকার ও গোস্বামী লিখেছেন, তানসেন ও মিশ্রী সিং (নবাৎ খাঁ) ছাড়া এর আগে আরও কোনো সঙ্গীতজ্ঞ এ দুর্লভ উপাধিতে ভূষিত হননি।নিয়ামত খাঁর শিষ্য কাওয়াল বালকের দু’জনের পরিচয় সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ড. করুণাময় গোস্বামী লিখেছেন, পূর্বে প্রচলিত মত এই যে, কাওয়াল বালকদ্বয় গোলাম রসুল ও মিঞা জানী। গোলাম রসুল (১৭০০-১৭৭০) ছিলেন দিকপাল খেয়ালগুণী। লখনৌয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন। ... গোলাম রসুলের পুত্র টপ্পা গানের প্রচলয়িতা গোলাম নবী ওরফে শৌরী মিঞা। ... অপর কাওয়াল বালক বলে কথিত মিঞা জানীও গোলাম রসুলের সমকালে লখনৌয়ে বিখ্যাত খেয়ালগুণীরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু কাওয়াল বালকদ্বয় যে গোলাম রসুল ও মিঞা জানী নন এ কথাই বর্তমানে অধিকতর গৃহীত। সেই বালকদের শনাক্ত করা হয় বাহাদুর ও দুলহে বলে। অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে বাহাদুর-দুলহে বিশিষ্ট খেয়াল গায়করূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন এবং তারা একটি খেয়াল গীতিধারা সৃষ্টিতে সক্ষম হন বলে জানা যায়।খেয়াল গানের আধুনিক রূপায়ণের মধ্য দিয়েই শুরু হয় নিয়ামত খাঁর সঙ্গীত জীবনের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায়।নিয়ামত খাঁ ছিলেন তানসেনের কন্যাবংশীয় একজন সুবিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। খেয়াল গানের অসামান্য রূপান্তরের কৃতিত্বের জন্য মোগল-সম্রাট মুহাম্মদ শাহ্ তাকে ‘সদারঙ্গ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বীণাবাদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলে তিনি বীণাবাদনে পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরে তিনি খেয়াল গানের আমূল পরিবর্তন সাধন করে খেয়াল গানের আধুনিক রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।খেয়াল গানের সঙ্গে নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সদারঙ্গের খেয়াল আজও সদারঙ্গের খেয়াল নামেই পরিচিত। খেয়াল এখনও নতুনত্ব-সন্ধানী সঙ্গীতরীতি, শুধু ক্লাসিক বা পুরাতনরীতি সর্বস্ব নয়।সদারঙ্গ মোগল-সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে আনুমানিক ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম-সময়ের তথ্য তার রচিত একটি গানে পাওয়া যায় :আবন কহ গয়ে অগম ভঈলওয়াউনকো, ভুজ ফরকত হৈ অঁখি মোরীবাঈ।সগুন বিচারো রেখোরে বখনাবেগ মিলনবা হোয় সদারঙ্গীলে ‘আলমগীর’ সাঈ॥নিয়ামত খাঁ বা ন্যামৎ খাঁর পিতার নাম লাল খাঁ সানী। তার পিতামহের নাম খুশহাল খাঁ। খুশহাল খাঁ বিলাস খাঁর জামাতা। বংশপরম্পরায় তারা সঙ্গীতজ্ঞ। সদারঙ্গ দিল্লির মোগল সম্রাট মুহম্মদ শাহ্র রাজত্বকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। সদারঙ্গ ছিলেন একজন কুশলী বীণকার, গায়ক ও গীতিকার। তিনি একদিকে যেমন অজস্র খেয়াল রচনা করেছেন, তেমনি আবার বহু ধ্র“পদ ও ধামারও রচনা করেছেন। সদারঙ্গ রচিত ধ্র“পদ, ধামার ও খেয়ালগুলো কাব্যের দিক দিয়ে খুবই রসোত্তীর্ণ ছিল। তার রচিত গানের মধ্যে ধামার ও খেয়াল গানের আধিক্যই বেশি। তিনি সরগম ও তেলানা দিয়েও ধ্র“পদাঙ্গের গান রচনা করেছেন। তবে খেয়াল গানের আধুনিক রচয়িতা ও প্রবর্তক হিসেবেই তিনি সমধিক প্রসিদ্ধ। তার রচিত খেয়াল সম্পর্কে বলা চলে, ‘বিলাস স্রোতে ভাসমান বাদশাহ্রা যখন চটুলতার সঙ্গে মিশ্রিত করে এমন এক অপরূপ বস্তু সৃষ্টি করলেন, যা তরলতাকে দ্রবীভূত করে অন্তত ক্ষণিকের জন্যও জীবন সম্বন্ধে একটা মূল্যবোধ এনে দিতে সমর্থ হয়েছিল। সেই অপরূপ বস্তু হল কলাবন্তী খেয়াল।বাদশাহ্ মুহম্মদ শাহ্র দরবারে নিয়ামত খাঁ নামে তিনি রবাবী ও বীণকার ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ‘সদারঙ্গ’ নামে খেয়াল রচনা করেন। মাঝখানে তিনি দরবার ছেড়ে চলে যান এবং খেয়াল গানে পারদর্শিতা লাভ করেন। দু’জন কাওয়াল বালককে তালিম দিয়ে খেয়াল গানে নতুনত্ব এনে জনপ্রিয় করেন এবং সম্রাট মুহম্মদ শাহ্কে খেয়াল গানে মুগ্ধ করে আবার রাজদরবারে ফিরে আসেন। সম্রাট তাকে ‘শাহ সদারঙ্গ’ সম্মানে ভূষিত করেন। সদারঙ্গের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলেই কণ্ঠসঙ্গীতে খেয়ালের স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।সদারঙ্গ খেয়াল গানে যুগান্তর এনে দিয়েছিলেন। তিনি খেয়াল গানের স্থায়ী ও অন্তরার মধ্যে প্রতি গানে এক একটি বিশেষ ভাবকে কেন্দ্র করেছেন। ফলে সে গান হয়ে উঠেছে মোহনীয়। সহজ মানবিক-প্রেম, নায়ক-নায়িকার ভাব অবলম্বন করেই তিনি গান রচনা করেছেন। তিনি গানে এনেছেন সংক্ষিপ্ত ও সহজ ঋতু বর্ণনা, মানসিক গুণবর্ণনা, কোথাও একটুখানি জীবনচিত্র, আবার কোথাও ভক্তি ভাব। বাণী গানের সুরকে কোথাও ভারাক্রান্ত করেনি। সদারঙ্গ খেয়ালকে শুধু বিশিষ্ট রূপদানই করেননি, এমন একটি ভাষা ও কার্যকরী রীতি সৃষ্টি করেছেন যার দরুন আজও অভিজাত খেয়াল-সদারঙ্গী খেয়াল এ দুই দিক থেকে বিশিষ্ট। সদারঙ্গের খেয়ালে ভাষা খেয়াল-আঙ্গিকের বিশিষ্ট ফর্মরূপে ব্যবহৃত। পরবর্তী খেয়াল রচয়িতারা এ বিশিষ্ট ফর্মেই গান রচনা করেছেন। তিনি ব্রজভাষা, লখনৌর ভাষা ও পাঞ্জাবি ভাষাতে দক্ষ ছিলেন বলে তার কবিতায় এ ভাষা ইচ্ছামতেি ব্যবহার করতে তার কিছুমাত্র অসুবিধা হতো না।হিন্দুস্তানি সঙ্গীতে যেসব দিকপাল, সঙ্গীতজ্ঞ নিজের উদ্ভাবিত রীতিপদ্ধতি সংযোজন ঘটিয়ে সঙ্গীতের উৎকর্ষ সাধন করে গেছেন তাদের মধ্যে নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গ অন্যতম। খেয়াল রীতির গান উদ্ভাবন করেও কয়েক শতাব্দী আগে আমীর খসরু ও হুসেন শাহ্ শর্কী যে কাজ অসমাপ্ত রেখে গিয়েছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রূপদান করে সদারঙ্গ তাকে যুগ-যুগান্তরের অমূল্য সম্পদে পরিণত করে দিয়ে গেছেন। খেয়াল গানের বিকাশের ক্ষেত্রে নিয়ামত খাঁ সদারঙ্গের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।সদারঙ্গ রচিত খেয়াল গানে সম্রাট মুহম্মদ শাহ্র নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার কারণ হয়তো, তিনি মুহম্মদ শাহ্র দরবারের সঙ্গীতজ্ঞ এবং বাদশাহ্র প্রিয়পাত্র হওয়ার নিদর্শনস্বরূপ তার রচনায় মুহম্মদ শাহ্র নাম উল্লেখ করেছেন। নিয়ামত খাঁ তার রচিত গানে ভণিতা হিসেবে ‘সদারঙ্গীলে’ ব্যবহার করতেন।সদারঙ্গ ধ্র“পদ, ধামার ও খেয়াল গান রচনা ছাড়াও বীণাবাদ্যের প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিলেন এবং এতে কণ্ঠসঙ্গীতের অনুরূপ আলাপচারীর প্রবর্তন করেছিলেন।সদারঙ্গের বহুমুখী অবদান সঙ্গীত ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। সর্বোপরি খেয়ালের আধুনিক গীত রূপের উদ্ভাবন ও তার প্রতিষ্ঠার মাঝেই সদারঙ্গের সর্বোচ্চ সঙ্গীতগৌরব নিহিত। - See more at: http://www.jugantor.com/literature-magazine/2014/02/28/73229#sthash.y2Shbdcy.dpuf

No comments

Powered by Blogger.