প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বিরোধীরা

সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে রাজধানী কিয়েভ ছেড়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ। শনিবার কিয়েভে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা সরে যাওয়ায় সেখানে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর অন্যান্য স্থান থেকেও নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। জনগণের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে পুলিশ। ইয়ানুকোভিচের সহযোগীরা বলছেন, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী খার্কিভে গেছেন প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। তাতে দেশটির রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছেড়ে আগাম নির্বাচন ও একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনে সম্মত হলেও রাজপথ ছাড়েনি আন্দোলনকারীরা।
চুক্তি অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হলেও ২৫ মে’র আগে নির্বাচন দাবি করছেন সরকারবিরোধীরা। গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে না গিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে বড় অংকের ঋণ নেন প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ। এরপর থেকে তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা গত দু’দিন ধরে ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। বৃহস্পতিবার রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত স্বাধীনতা চত্বরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে পুলিশ, যাতে অনেক মানুষ হতাহত হন। মঙ্গলবার থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ সহিংসতায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীসহ অন্তত ৭৭ জন নিহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হতাহতের এ ঘটনার পর শুক্রবার সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে ওই চুক্তি হয়। ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুক্তি পাচ্ছেন কারাগারে ৩০ মাস কাটানোর পর অবশেষে মুক্তি মিলছে ইউক্রেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া তিমোশেঙ্কোর। পার্লামেন্ট তিমোশেঙ্কো অপরাধী আইনের যে ধারায় অভিযুক্ত ছিলেন সেটিকে ভোটের মাধ্যমে সরিয়ে তাকে মুক্তি দেয়ার বন্দোবস্ত করেছে। বিভিন্ন দলের ৩১০ জন আইনপ্রণেতা এতে ভোট দেন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। রাশিয়ার সঙ্গে একটি গ্যাস চুক্তির পর তার এই সাজা হয়।
প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ তার রাজনৈতিক বিরোধীদের সাজা প্রদানের জন্য নিন্দিত হয়েছেন। এদিকে, পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার ভোলোদামির রায়বাক। যদিও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি তার পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও অনেকেই মনে করছেন বিষয়টি রাজনৈতিক। তার জায়গায় এসেছেন কারাবন্দি বিরোধীদলীয় নেতা ইউলিয়া তিমোশেঙ্কো। ইউক্রেনে ২৫ মে’র মধ্যে নির্বাচন দাবি : আগামী ২৫ মে’র মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ভিতালি ক্লিটসচো। তিনি শনিবার বলেছেন, প্রেসিডন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ইউক্রেন পার্লামেন্টকে অবশ্যই খারিজ করতে হবে এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কোনোমতেই ২৫ মে অতিক্রম করা যাবে না। সরকারি স্থাপনা পুনর্দখলের হুমকি : ইউক্রেনের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী নেতারা যে চুক্তি করেছে তাতে সমর্থন জানায়নি বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ । তারা হুমকি দিয়ে বলেছে, কিয়েভে শনিবার সকালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করলে তারা সরকারি স্থাপনাগুলোও দখল করে নেবে। যদিও বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ চুক্তিটিতে সমর্থন জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক নেতারাও এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি বাস্তবায়নের ব্যাপারে জোর দিতে বলেছে।

No comments

Powered by Blogger.