ধূসর তালিকার বাইরে বাংলাদেশ

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) ধূসর বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ঘটনাকে বাংলাদেশের বিরাট অর্জন বলে দাবি করেছেন। আমরা অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত না করেও যে কথাটি বলতে চাই তা হলো, আইন সংস্কার করাই যথেষ্ট নয়। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিয়মিত ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। কোনো দেশ কালো বা ধূসর তালিকায় থাকলে তাদের সঙ্গে বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক লেনদেনে উৎসাহ দেখায় না, আবার লেনদেন করলেও বাড়তি মাশুল আদায় করে। ২০১০ সালে ভিয়েতনাম কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশও ধূসর তালিকাভুক্ত হয়। এই দফায় ভিয়েতনাম কালো তালিকাভুক্ত ও বাংলাদেশ ধূসর তালিকা থেকে মুক্ত হয়। বাংলাদেশের ধূসর তালিকার বাইরে আসার কারণ গত সাড়ে তিন বছরে মানি লন্ডারিং আইনগুলোর সংস্কার। এর আগে দেশে যেসব আইন ছিল, সেগুলো মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে যথেষ্ট ছিল না বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
গত সাড়ে তিন বছরে যেমন বেশ কিছু আইনের সংস্কার করা হয়েছে, তেমনি তিনটি নতুন আইন প্রণীত হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এফএটিএফ আশ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। কিন্তু ঝুঁকি একেবারে চলে গেছে, তা বলা যাবে না। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ারই অন্যতম দেশ পাকিস্তান ও প্রতিবেশী মিয়ানমার এখনো কালো তালিকাভুক্ত। তবে আইনের সংস্কারের পাশাপাশি রেগুলেটরি সংস্থা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, দুদক, বিএসইসি ও সিআইডিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকলে অর্থ পাচার বন্ধ করা অসম্ভব নয়। সর্বোপরি আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের মধ্যে এ ধারণা দিতে হবে যে অর্থ পাচার করে পার পাওয়া যাবে না। বিগত সরকারের আমলে কয়েকটি অর্থ পাচারের ঘটনা উদ্ঘাটিত হলেও এতে সন্তুষ্টির কারণ নেই। কেননা, দেশি-বিদেশি অর্থ পাচারকারীরা সক্রিয় আছে। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপই পারে বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে।

No comments

Powered by Blogger.