বাংলাদেশেও কি শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রয়োজন হবে! by মামুন রশীদ

কী হবে, ভাই? নির্বাচন কি হবে? আজকাল শহরাঞ্চলে প্রত্যেক ব্যক্তির মুখে একই প্রশ্ন। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশকে কিছুই যে দেয়নি, তাও শুনতে পাবেন এসব আলোচনায়। আপনার কিছু পাগলাটে স্বভাবের প্রিয় বন্ধু বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। গণতন্ত্র যে বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি তারও অনেক প্রমাণ দেখাবেন তারা। কিছু উগ্র পুরুষবাদী ব্যক্তি আবার হাসতে হাসতে বলবেন, এই দুই নারী না যাওয়া পর্যন্ত দেশের কিছুই হবে না। বর্তমান সময়ে টেলিভিশনের কোনো জনপ্রিয় টকশোর বুদ্ধিজীবীরা হয়তো ইঙ্গিত করবেন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে গণতন্ত্র চর্চার অভাব অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যর্থতা কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার প্রতি। কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল রাস্তায়, বাণিজ্যিক অঞ্চলে অথবা গণপরিবহনে জনমত জরিপ চালাচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব জরিপ বা সমীক্ষায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দ্রুত পরিবর্তনের ভয়াবহ দৃশ্য প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা, উন্নয়ন সহযোগী বা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিচক্ষণ সদস্যরাও রাজনৈতিক উত্তেজনা, সম্পদের ক্ষতি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং ক্রমবর্ধমান গুমের ঘটনায় উদ্বিগ্ন। এমনকি কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও দিচ্ছেন যে, দেশে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো সংঘবদ্ধ শক্তি যে করেই হোক নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিচ্ছেন তারা।
অথচ বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সুনাম অর্জন করেছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ সদস্যরা। পুলিশসহ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পাশ্চাত্য, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এমনকি দু’-একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে এবং এশিয়ার অনেক দেশে শান্তি স্থাপনে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ও অঞ্চলে জাতিসংঘের সমর্থনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জেনারেলদের ফোর্সেস কমান্ডার হিসেবেও নিযুক্ত করা হয়েছে। শুধু আমাদের সৈন্যরা ভালো প্রশিক্ষণপ্রাপ্তই নন, তারা এসব অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত-পাকিস্তানসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশই শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করছে এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন আর গৃহযুদ্ধের সময় সফলভাবে শান্তি নিশ্চিত করে বিশ্বশান্তির মডেল স্থাপন করেছে।
আমি উদ্বিগ্ন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা যেন এমন খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে না যায়, যাতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে এদেশে ‘শান্তিরক্ষী বাহিনীর’ মোতায়েন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও হানাহানির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ভালোই এখন আর দেখতে পাচ্ছি না। মসৃণ বা আধা মসৃণ রাজনৈতিক পরিবর্তনে মানুষের সন্দেহ বাড়ছে। আমাদের রাজনৈতিক গুরু ও তাদের সঙ্গী-সাথীরা একটি দুর্বল নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা, আদুরে বেসামরিক-সামরিক আমলাতন্ত্র এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, একটি অদক্ষ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় এগোচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ সময় ও মেধা ব্যয় হচ্ছে বিরোধী দলকে দমনের কাজে। কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে। দেশের মানুষ এখন ‘বাংলাদেশের মতো গণতন্ত্র’ চায় না। এরকম ছেড়ে দেয়া ভাব আরও কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে বলেও ভাবছেন কেউ কেউ।
রাজনৈতিক দল, সুশীল-সামরিক আমলা, সাংবাদিক, এমনকি জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের মধ্যেও একটি গুরুতর আস্থাহীনতার জায়গা তৈরি হয়েছে। যেখানে চেইন অব কমান্ড কাজ করার কথা, সেখানে তা করছে না। মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় রাজনৈতিক বিবেচনায় কনিষ্ঠরা জ্যেষ্ঠদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। নীতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া এডহক সিস্টেমে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.