পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে মোশা

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ বাহিনীর প্রধান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া (মোশা) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। অপরাধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার ও জমি দখলের কিছু অভিযোগ স্বীকার করলেও বিস্তারিত বলছে না। আর অস্ত্রভাণ্ডার ও সহযোগীদের বিষয়ে দিচ্ছে বিভ্রান্তিকর তথ্য। এছাড়া পুলিশকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কয়েক স্থানে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির সন্ত্রাসী মোশারফ। অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পরও সে নানা তথ্য অস্বীকার করে চলেছে।

বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে অন্যের নাম বললেও নিজের দায় এড়িয়ে তথ্য দিচ্ছে। একটি আবাসন কোম্পানির জমি কিনতে ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে কাজ করে বলে দাবি তার। আর এ ক্ষেত্রে হুমকি ও নিজের অস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করছে না। অথচ তার বিরুদ্ধে রয়েছে এ-সংক্রান্ত প্রায় এক ডজন মামলা।

ভাটারা থানার অপারেশন অফিসার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাজহারুল আমিন এ বিষয়ে বলেন, তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্ত্রাসী বাহিনী, তার আশ্রয়দাতা ভূমি ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের নাম পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এসব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে অভিযান চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৬ অক্টোবর রাতে কুড়িল বিশ্বরোডে একটি জিপ গাড়িতে শটগান, বিদেশি পিস্তল ও পাঁচ সহযোগীসহ মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াকে আটক করে ৠাব। আটকের পর র‌্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে মোশা যেসব তথ্য দিয়েছিল, এখন তা অস্বীকার করে চলেছে। গুলশানে এক ভূমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করতেই ঢাকায় এসেছিল এবং তার নির্দেশনা নিয়ে রূপগঞ্জে ফিরে যেতে বলে জানিয়েছে।

আবার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মোশা দাবি করছে, বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন সে পলাতক জীবন যাপন করছে ও এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।

এলাকায় তার পক্ষে অনেকে অস্ত্রবাজি করলেও এখন সবাই পালিয়েছে বলেও সে জানায়। মোশা যেসব অস্ত্রধারীর নাম জানিয়েছে, তাদের অবস্থান ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দিচ্ছে না। তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করা শটগানটি বৈধ বলে দাবি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হলেও মোশা মূলত ছিঁচকে সন্ত্রাসী ছিল। মাদক ব্যবসা ও ভূমি দখলচক্রের সঙ্গে মিশে বছর কয়েক আগে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়। দ্রুতই বেড়ে যায় তার অস্ত্রধারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা। প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের নানাভাবে হাত করে রূপগঞ্জ এলাকায় নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল।

সম্প্রতি মোশার সঙ্গে যোগাযোগ না রেখে সেখানে কেউ কিছু করতে পারছিল না। জোরপূর্বক ভূমি দখল, হত্যা, গুম, নারী নির্যাতন, ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে উচ্চারিত হচ্ছিল মোশারফ বাহিনীর নাম। স্বার্থ হাসিল করতে এক ভূমি ব্যবসায়ী তাকে দামি গাড়ি ও অস্ত্র কেনার টাকা দেন। এর বিনিময়ে ওই ব্যবসায়ীর সব ধরনের নির্দেশ পালন করত মোশা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোশারফ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুধু রূপগঞ্জেই সীমাবদ্ধ নয়, তার সহযোগীরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। এরা সবাই পেশাদার সন্ত্রাসী। নিয়মিত তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু বাহিনীপ্রধান মোশারফ র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর এসব অপরাধী অবস্থান ও যোগাযোগ কৌশল পাল্টে ফেলেছে।

দুর্ধর্ষ এ বাহিনীর সদস্যদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ গত তিন দিনে কয়েক দফা অভিযান চালালেও সফলতা মেলেনি। প্রয়োজনে মোশারফ ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদে ফের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে অস্ত্র ও পাঁচ সহযোগীসহ মোশারফকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ বিষয়ে র‌্যাব-১-এর উপপরিদর্শক এসআই আব্দুল করিম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া মোশারফ বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও রূপগঞ্জে রয়েছে প্রায় এক ডজন মামলা।

No comments

Powered by Blogger.