গণতান্ত্রিক বিপ্লবের তিন লক্ষ্য by ফরহাদ মজহার

সমাজবিজ্ঞানীরা কমবেশি সবাই মানেন যে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের উদ্ভব ও বিস্তার একটি মাত্রা অতিক্রম করলে পুরনো প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কগুলো ভেঙে পড়তে থাকে, সমাজের রূপান্তর ঘটা শুরু হয়। এ অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সূচনা ঘটে। প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক উৎখাত করে একটি জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিক উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে তাদের যাত্রা শুরু করে। ইউরোপের ইতিহাস এ সাক্ষ্যই দেয়। মোটা দাগে এ বিপ্লবের লক্ষ্য থাকে তিনটি। এক. নাগরিক হিসেবে ব্যক্তির আবির্ভাব ও বিকাশ নিশ্চিত করা; দুই. প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ক ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়ে নতুন ও গতিশীল উৎপাদনশীল সম্পর্ক প্রবর্তন। তিন. অতীত ইতিহাসের সঙ্গে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক মোকাবেলার পথ সাফ করা। প্রথম দুই লক্ষ্য কমবেশি আমাদের জানা থাকলেও শেষের লক্ষ্য সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট ভাবাভাবি করি না। এখানে একটু চেষ্টা করব। যদি ভাবি তো দেখব কোথায় ইউরোপীয় ইতিহাসের ছক থেকে আমাদের ইতিহাস ভিন্ন বাঁক নিয়েছে। প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্ক নানা ধরনের হতে পারে। ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্র যেমন। কিংবা হতে পারে ‘এশীয় সামন্ততন্ত্র’। তার মধ্যে বর্ণাশ্রম প্রথা, জাতপাতের ভেদাভেদ ইত্যাদি। এশিয়ায়, আরও বিশেষভাবে দক্ষিণ এশিয়ায়, কিংবা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশে কী ধরনের সম্পর্ক বর্তমান ছিল এবং তাদের ঠিক কিভাবে শনাক্ত, শ্রেণীকরণ ও নামকরণ করা যায়, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে একসময় আগ্রহ ছিল। তর্কবিতর্কও হয়েছে। আজকাল তেমন দেখি না। ইউরোপের ইতিহাসকে বোঝার জন্য ‘সামন্ততন্ত্র’ কথাটা যেভাবে ব্যবহার করা হয়, ভারতের ইতিহাসের ক্ষেত্রে এই ইউরোপীয় ক্যাটাগরির ব্যবহার কতটা যৌক্তিক কিংবা কাজের, তা নিয়ে তর্ক আছে। এটা তো ঠিক, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসকে তার নিজের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ীই বুঝতে হবে। অনেকে মনে করতে পারেন, এ ধরনের তত্ত্বকথা বা ইতিহাস বিচার আমাদের এখনকার রাজনৈতিক সমস্যা বোঝা বা নিরসনের ক্ষেত্রে কোনো কাজে লাগে না। কথাটা ঠিক না। সে দিকটাই কিছুটা আজ বলার চেষ্টা করব।
বাংলাদেশের ইতিহাসের দিক থেকে আরেকটি গুরত্বপূর্ণ দিকও রয়েছে, যা মনে না রাখলে প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক কথাটা অস্পষ্ট থেকে যায়। সেটা হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বাংলার জমিদারদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী জমিদাররা রাতারাতি জমির মালিক বনে যায়। ঔপনিবেশিক শাসন ও আইনি অর্থে জমির সবরকম স্বত্বের অধিকারী হয়ে যায় তারা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জমিদারদের শুধু জমির মালিক বানায়নি, জমির মালিক হওয়ার সুবাদে ইংরেজকে তারা যে খাজনা দিত সেই খাজনার হারও তাদের জন্য চিরস্থায়ীভাবে বেঁধে দেয়া হয়েছিল। ইংরেজ সরকার জমিদারদের খাজনার হার বাড়াবে না বলে চুক্তি করেছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সারকথা হচ্ছে জমিদারদের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্তর্গত করে নেয়া। বাংলাদেশে জমিদারতন্ত্র কায়েম হয়েছে ঔপনিবেশিক আগ্রাসন ও দখলের দরকারে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফল হিসেবেই ঔপনিবেশিক জমিদারতন্ত্রের শহর হিসেবে কলকাতা গড়ে ওঠে। কলকাতায় উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাতে গড়ে ওঠা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির আধুনিকীকরণ কিংবা গরিমার্থে ‘বাংলার নবজাগরণ’ এই উচ্চবর্ণের হিন্দুদেরই নবজাগরণ। ‘বাঙালি’ নামে যে আত্মপরিচয় তার বোধ, চেতনা ও আত্মপরিচিতি এই হিন্দু জাগরণের ফলেই নির্মিত হয়েছে। পরিচয়টা হিন্দু বাঙালির, এর বিপরীতে রয়েছে বর্ণাশ্রম, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জমিদারতন্ত্রের অধীনে নিপীড়িত, নিষ্পেষিত ও শোষিত নিম্ন বর্ণের হিন্দু, বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও মুসলমান জনগোষ্ঠী।
কিন্তু তাই বলে ঔপনিবেশিকতার আশ্রয়ে উচ্চবর্ণের হিন্দু বাঙালির নবজাগরণের অর্জনকে খাটো করে দেখার কিংবা তার নির্বিচার বিরোধিতার কোনো সুযোগ নাই। রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ বা যার কথাই বলি না কেন, আধুনিক উচ্চবর্ণের ‘বাঙালি’ বা শিক্ষিত হিন্দু ভদ্রলোকদের সংস্কৃতির মধ্যে বাংলাভাষীদের যে অর্জন সেটা ঐতিহাসিক। একে অস্বীকার করা ইতিহাসকে অস্বীকার করার শামিল। সমাজ ও ইতিহাসের বাইরে কেউ বাস করে না। হিন্দু কী মুসলমান কারও পক্ষেই ইতিহাসের বাইরে দাঁড়িয়ে নিজেদের বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ বাস্তবতার মধ্যে এখনকার লড়াই-সংগ্রামের চরিত্র বিচার করতে পারাই এখনকার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সে বিচারের দরকারে আমাদের সবসময়ই মনে রাখতে হবে, ‘মুসলমান’ পরিচয়ের বিপরীতে নিজেকে ‘বাঙালি’ বলা অসাম্প্রদায়িকতা নয়, বরং তা নিজের সাম্প্রদায়িক পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞতারই লক্ষণ। বাঙালি মুসলমানের বিপরীতে কেউ ‘বাঙালি’ পরিচয় বহন করেন বলে তিনি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত নন। ইতিহাস বলে, সেই দাবি করার কোনো সুযোগ নাই। বরং এই ঐতিহাসিক অজ্ঞতা আরও অনেকগুলো বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়। সেই বিপদগুলো বুঝে নেয়া যাক।
এটা বোঝা সহজ যে, প্রথমেই জাতিগত অহমিকার কারণে বাঙালি ‘জাতি’ হিসেবে তিনি জাতিগত সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট। দ্বিতীয়ত, জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা ছাড়াও ঐতিহাসিক কারণেই তিনি ঔপনিবেশিকতার ঔরসে উচ্চবর্ণের হিন্দুর ‘জাগরণ’ থেকে তৈরি সাম্প্রদায়িক পরিচয়ই বহন করছেন। অথচ দরকার এই পরিচয়ের পর্যালোচনা এবং এর বিরুদ্ধে বাঙালি মুসলমানের যুক্তিসঙ্গত আপত্তিগুলো ঐতিহাসিকভাবে বোঝা, যাতে বাঙালি মুসলমান প্রতিক্রিয়ায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার গুহার অভ্যন্তরে ঢুকে না যায়। এ কাজটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের এই উপলব্ধির বিপজ্জনক ঘাটতি ঘটেছে যে, বাংলাদেশের জনগণের সংস্কৃতি আরব, ইরান বা তুরানের সংস্কৃতি বা সভ্যতা নয়। বাংলার সনাতন ও লোকায়ত ঐতিহ্যের সঙ্গে সে নানান সূত্রে জড়িত। বাংলার জল-হাওয়াতেই গড়ে ওঠা। সে সূত্রগুলো তার এখনকার লড়াই-সংগ্রামে সে অবশ্যই ব্যবহার করতে প্রস্তুত। আর মানুষ তার মাতৃভাষাতেই বাস করে। তার ভাষা বাংলা। তৃতীয়ত, আমরা সম্প্রতি দেখেছি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পক্ষাবলম্বনের মধ্য দিয়ে কিভাবে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষাবলম্বন করা হয়। নিজেকে ‘বাঙালি’ বলার মধ্যে এই ফ্যাসিবাদ ধারণ করার চেতনা নিহিত। নিজেকে ‘বাঙালি’ বলাকে আমরা যতটা নিরপরাধ মনে করি, ব্যাপারটা অতো সোজাসিধা নয়।
সোজা কথা হচ্ছে, ঔপনিবেশিকতার ঔরসে গড়ে ওঠা ‘বাঙালি’ একটি অসাম্প্রদায়িক ধারণা নয়। ঘোরতরভাবে সাম্প্রদায়িক ধারণা। কিন্তু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই পরিচয় ধারণ করেই জনগণ শত্র“র বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, বাংলাদেশের জনগণের দিক থেকে এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর কারণ হচ্ছে, যে কোনো জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে একটি রণনীতিগত পরিচয়ের অধীনে জনগণকে সংগঠিত এবং শত্র“র বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। যারা সাম্প্রতিকালে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে ‘উত্তরাধুনিক’ নামে পরিচিত, তারা এই বিশেষ আত্মপরিচয়ের প্রয়োজনীয়তার নাম দিয়েছেন রণনৈতিক পরিচয় (ংঃৎধঃবমরপ বংংবহঃরধষরংস)। অর্থাৎ এমন একটি সত্তায় নিপীড়িত জাতি, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের চিহ্নিত করে, যাতে নিজেদের মধ্যে শ্রেণী, লিঙ্গ, ধর্ম, আত্মপরিচয় বা আদর্শের বিরোধ থাকলেও একাট্টা হয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার পক্ষে তারা কথা বলতে পারে, প্রয়োজনে নিপীড়কের বিরুদ্ধে সংগ্রামও করতে পারে। উচিত ছিল এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেসব ঐতিহাসিক বিসংবাদ আবর্জনার মতো জমে ছিল, সেসব সাফ করা। ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনায়াসেই বোঝা যেত একাত্তর ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল না, বাঙালি মুসলমান এই লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করার অর্থ এই নয় যে সে তার অতীতের ঔপনিবেশিক ইতিহাস ভুলে যাবে।
দুই বাঙালার বাঙালিকে একই অর্থে বাঙালি ভাবেন অনেকে। এর ইতিবাচক দিক হচ্ছে বাংলাভাষীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক মজবুত করা দুই পক্ষের জন্যই ভালো। তবে অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি, পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের অনেকের ধারণা, ‘বাঙালি’ পরিচয়ই অসাম্প্রদায়িকতার মানদণ্ড। এটাই ধর্মনিরপেক্ষ বা সেক্যুলার হওয়ার পথ। এখানেই ফাঁকির জায়গা। বাংলাদেশের জনগণের মতো পশ্চিমবাংলার হিন্দুর ‘বাঙালি’ হয়ে ওঠার কোনো রাজনৈতিক কিংবা রাষ্ট্রনৈতিক ইতিহাস নাই। বাঙালি বনাম মুসলমানের লড়াই হিসেবে যে পুলসিরাত বাংলাদেশী জনগণকে পেরুতে হচ্ছে, সেই বিপদের হাত থেকে তারা মুক্ত। এর ফলে তারা হিন্দুই থেকে গিয়েছে এবং শেষতক হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতকেই তার আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ অখণ্ড ভারতকে যেমন মেনে নেয়নি, তেমনি পাকিস্তানকেও নয়। ভারতীয় বাঙালির সঙ্গে বাংলাদেশের বাঙালির এখানে বিরাট পার্থক্য।
‘বাঙালি’ শব্দের আগে আমরা ‘হিন্দু’ ব্যবহার করি না, কিন্তু মুসলমানিত্বকে বাঙালিত্বের ব্যতিক্রম গণ্য করি। এদিক থেকে ‘বাঙালি’ দ্বিগুণ সাম্প্রদায়িক। প্রথমত তার পরিচয়ের হিন্দুত্বকে সে লুকায়, দ্বিতীয়ত ‘বাঙালি’র ঝাণ্ডা দেখিয়ে সেও উপমহাদেশে ইসলামের ইতিহাসকে নাকচ করে। অথচ নির্বিচার ‘বাঙালি’ পরিচয় ঐতিহাসিকভাবে উচ্চবর্ণের ঔপনিবেশিক হিন্দুত্ব বহন করে। তাকে সাফ না করে দাবি করা হয়, মুসলমানকেও বাঙালি হতে হলে এই হিন্দুত্বের ঐতিহাসিক আবর্জনাই বহন করতে হবে। ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’- এ স্লোগানের মধ্য দিয়ে এই ঘোষণাই দেয়া হয় যে, বাংলাদেশের জনগণকে ইসলামের আগমন থেকে শুরু করে বর্ণাশ্রম প্রথার বিরুদ্ধে মুক্তির লড়াইসহ তার শূদ্র ও নিুবর্গের জীবনের ইতিহাস ভুলে যেতে হবে। ভুলে যেতে হবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমি হারানোর স্মৃতি। ভুলতে হবে জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কৃষক হিসেবে তার সংগ্রামের ইতিহাস। মেনে নিতে হবে, নয় মাসের ইতিহাসই এ দেশের জনগোষ্ঠীর একমাত্র ইতিহাস।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন এ সাক্ষ্যই দিচ্ছে যে, রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে এ দেশের মানুষ ইতিহাসকে তাদের জায়গা থেকেই বিচার করার জন্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখনও পথ অনেক পিচ্ছিল। কারণ ‘মুসলমান’ পরিচয়ের পেছনে যে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা সেটাও পথ হতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগছে। এই দাবি আংশিক সত্য। পুরোটা নয়। এর প্রধান কারণ, নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধকে এ দেশের জনগোষ্ঠীর একমাত্র রাজনৈতিক ইতিহাস গণ্য করার অজ্ঞতা। সতর্ক ইতিহাস নিষ্ঠা এই মুশকিল কাটিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট। ইতিহাস বিচ্ছিন্নভাবে ‘বাঙালি’ বা ‘মুসলমান’ নামক ধারণার কোনো অর্থ নাই। উভয়ের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব^-বিরোধকে বুঝতে হলে প্রথমেই বোঝা দরকার আত্মপরিচয় কোনো প্রাকৃতিক ব্যাপার নয়, বরং ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক। ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ক্যাটাগরিকে আমরা যখন মনে করি গাছপালা পাহাড়-পর্বতের মতো প্রাকৃতিক সত্তা তখন সেটা বিপজ্জনক। অনেকেই মনে করেন, ‘হিন্দু’, ‘মুসলমান’, ‘বাঙালি’ ইত্যাদি সত্তা কিংবা পরিচয় প্রকৃতির মতোই একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। জন্মসূত্রে আমরা সিলছাপ্পড় গায়ে নিয়ে মায়ের পেট থেকে এসব দাগ নিয়ে বেরিয়ে এসেছি। যদি আমরা এই খোঁয়াড় থেকে বেরিয়ে আসতে চাই, তাহলে নতুনভাবে ইতিহাস পাঠ করা জরুরি।
ইতিহাসের মধ্যে থেকে ইতিহাস কিভাবে আমাদের গঠন করেছে এবং আগামী দিনে কিভাবে আমরা নিজেদের ঐতিহাসিকভাবে গঠন করতে চাই সেই মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে পারার মধ্য দিয়েই আমরা এখনকার বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারব। ইতিহাস বিচ্ছিন্নভাবে ‘বাঙালি’ কিংবা ‘মুসলমান’ হয়ে নয়। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিপ্লবের শর্ত তৈরি হয়ে রয়েছে বহু আগে থেকে। সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দিক থেকে এই বিপ্লবের অর্থ হচ্ছে, জমে থাকা সব ঐতিহাসিক আবর্জনা সাফ করা, যেন রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে বাংলাদেশ তার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে পারে। বদ্ধ চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসাই এখনকার কাজ।

No comments

Powered by Blogger.