শুল্ক সুবিধা তুলে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ শুল্ক সুবিধা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার আভাস দিয়েছে ওবামা প্রশাসন। নাজুক কর্ম পরিবেশের কারণে অব্যাহতভাবে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়াস হিসেবেই শুল্ক সুবিধা হ্রাসের বিষয়টি ওবামা প্রশাসন সক্রিয়ভাবে চিন্তা করছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে জানানো হয়।
নিবন্ধে আরও বলা হয়, তাজরীনের আগুনে ১১২ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর সময়ই শুল্ক ছাড় হ্রাসের বিষয়টি চিন্তাভাবন‍া করা হলেও রানা প্লাজার ঘটনার পর এই উদ্যোগ আরও গতি লাভ করে।

নিবন্ধে বলা হয়, রানা প্লাজার ঘটনার পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর অনিরাপদ পরিবেশের উন্নয়নে করণীয় ঠিক করতে নড়ে চড়ে বসেছে পশ্চিমা বিশ্বের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনগুলো।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ উন্নয়নে তদারকি কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে প্রনীত একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক খুচরা পোশাক বিক্রেতা ব্রান্ড, যেগুলোর বেশিরভাগই ইউরোপীয়।

এ পরিস্থিতিতে ওবামা প্রশাসনও বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নতি বিধানে সম্ভাব্য করণীয়ের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়।

তবে প্রয়োজনে বাংলাদেশকে শুল্ক ছাড়ের সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়‍ার বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র চিন্তা ভাবন‍া করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টিটিভস বা ইউএসটিআর এ ব্যাপারে পরিকল্পনা করছে বলেও জানানো হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ‍ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, গত শীতের আগেই এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হলেও সাম্প্রতিক (রানা প্লাজা) ঘটনার পর এ পদক্ষেপের সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেজিস্ট্রারে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নথিতে ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ‘কর্মপরিবেশ উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকারের ধীরগতির প্রেক্ষিতে এ সুবিধা না দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে’।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, এ পরিস্থিতিতে টনক নড়েছে বাংলাদেশ সরকারের। শুল্ক মুক্ত সুবিধা ধরে রাখার জন্য, গত সপ্তাহ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর যেমন ইউএসটিআর, শ্রম ও পররাষ্ট্র দপ্তরে লবিং শুরু করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। 

কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের একজন বাণিজ্য কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াংশিংটন পোস্ট জানায়, ‘তারা অবশেষে উপসংহারে পৌঁছেছেন যে কোনো কিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে না এবং এক্ষেত্রে নাটকীয় কিছু করা প্রয়োজন।’

যদিও বর্তমানে বহাল থাকা শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সীমিত পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করে।

বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের দাবি অনুযায়ী ২০০৪ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে কোটার সুবিধা নেই। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক ছাড়ের সুবিধা প্রত্যাহার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্ত‍া ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক মুক্তভাবে পোশাক রপ্তানির ব্যাপারে তদবির চালিয়ে আসছে। তবে ওয়াশিংটন পোস্টের এ প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের সেই প্রচেষ্টাও হোঁচট খাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠন আবার যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছে।

তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া মূলত পড়বে পোশাক কারখানাগুলোতে কাজ করা নারী শ্রমিকদের ওপর।

এ ব্যাপারে সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফোলো কিম্বারলি এলিয়ট বলেন,“ বাণিজ্য সুবিধা তুলে নেওয়ায় কোনো উপকার হবে না। বরং এ পদক্ষেপ বাংলাদেশে কাজ করা নারী শ্র্রমিকদের ওপরই আঘাত হানবে । পোশাক কারখানায় কাজ না থাকলে তাদেরকে হয়তো গ্রামের ক্ষেতে কাজ করতে হতো এবং অপরিণত বয়সেই মাতৃত্বের অভিশাপ বহন করতে হতো।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র অক্সফামের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সাবেক রিপ্রেজেন্টিটিভ রেমন্ড সি অফেনহেসার বলেন, ‘অনেক অসুবিধা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এদেশের লক্ষ লক্ষ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। নারীর ক্ষমতায়নে এ খাত শক্তিশালীভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

এ পরিস্থিতিতে আসলেই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখবে কি না না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.