মাত্র ক’বছরে কি করে এতো সম্পদের মালিক হলেন সোহেল রানা?

মাত্র ক’বছরে কি করে এতো সম্পদের মালিক হলেন সোহেল রানা? তার আয়ের উৎসইবা কি? রানার এই ‘অলৌকিক’ অর্থনৈতিক উত্থানের উৎস তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার বিকেলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে বলে সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানিয়েছেন দুদক কমিশনার মো: সাহাবউদ্দিন চুপ্পু।

তিনি বলেন, ‘‘সোহেল রানার স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদের হিসাব চাইবে দুদক। রানা প্লাজাসহ বিভিন্ন ভবন নির্মাণে কিভাবে টাকা পেয়েছেন এবং পাশাপাশি বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও রাজউকের কোনো অবহেলা ছিলো কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

দুদক জানায়, রানার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে কমিশন দুই সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। এ টিম রানার অবৈধ সম্পদ এবং বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম তথা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অবহেলা সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির অনুসন্ধান করবে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. মফিদুল ইসলামের নেতৃত্বে টিমের অন্য সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম।

রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার বলে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে সোহেল রানা রাতারাতি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে যান। নামে-বেনামে তার কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০০৭ সালে রানা প্লাজার নির্মাণ শুরু হয়। এর আগে জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত। পেছনে ছিল জলাশয়। ভবন নির্মাণের জন্য এগুলো দখল করে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সাভার বাজার রোডে রানার রয়েছে আটতলা ভবন ‘রানা টাওয়ার’। ভবনটিতে নির্মাণ কাজ চলা অবস্থাতে পিলারে ফাটল দেখা দিলে দুর্ঘটনার আগের দিন ভবনটি বন্ধ করে প্রশাসন। রানা টাওয়ারের পাশে রয়েছে তাদের ছয়তলা বাসভবন। এ ছাড়া ধামরাইয়ের কালামপুরে রানার পরিবারের একটি ইটভাটা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ভবন মালিক রানা রোববার যশোরের বেনাপোল সিমান্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। পালানোর আগে তিনি তার বিশ্বস্ত সহযোগী নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ২৩ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন বলেও জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, বিল্ডিংকোড অনুসরণ না করায় ভবন মালিক রানার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই মামলা করেছে রাজউক।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগে যোগ দেন রানা। ১৯৯৮ সালে সাভার পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন তিনি। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদেই ছিলেন। গত জানুয়ারিতে পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হন তিনি। সাভার যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা রানা স্থানীয় সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদের খুবই ঘনিষ্ঠ।

উল্লেখ্য, বুধবার সকাল ৯টার দিকে ৮তলা ওই ভবন ধসে যায়।  ভবনটির ৩য় থেকে ৮ম তলায় ৫টি গার্মেন্টস কারখানায় ৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।

বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, আগের দিন ভবনে ফাটল হয় ও পিলার ধসে পড়ে। তা সত্বেও বুধবার সকালে তাদের জোর করে কারখানায় ঢোকানো ও কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

এ ধসের ঘটনায় রোববার দুপুর সোয়া ৩টা পর্যন্ত ৩৭৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৮ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য লাশগুলো হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে দুই হাজার ৪৭৯ জনকে।

অন্যদিকে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের হওয়া ২ মামলায় এ পর্যন্ত রানা ছাড়াও তার স্ত্রীসহ ৪ জন আত্মীয়, ৩ জন গার্মেন্টস মালিক ও ৪ জন প্রকৌশলীসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

No comments

Powered by Blogger.