আধিপত্যে বাধার কারণেই যুবলীগ নেতা কায়সারকে হত্যার চেষ্টা by ইমরান আলী

একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য রাজধানীর গুলশান এলাকার চঞ্চল গ্রুপের সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা চেষ্টা করে বাড্ডা থানা যুবলীগের আহবায়ক কায়সার মাহমুদকে। কায়সার হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এ বিষয়টি জানতে পেরেছে।
এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেফতার ও চঞ্চলসহ তার গ্রুপের বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

বাড্ডা থানার ওসি ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কায়সারকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার নেপথ্যে আধিপত্য বিস্তার বলে মনে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরো গভীর তদন্ত হচ্ছে।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুলশান থানার নিকেতন এলাকার সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন সন্ত্রাসী। বিগত সময়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। সেই সময় গুলশান-১ ও মহাখালী এলাকার বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীর সঙ্গে সখ্যতার মাধ্যমে চাঁদাবাজিই ছিল তার  পেশা। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি হত্যাসহ চাঁদাবাজির অভিযোগে বাড্ডা, তেজগাঁও, শাহবাগ, গুলশান ও টঙ্গি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর চঞ্চল আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে গুলশান, বাড্ডা ও মহাখালী এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। আর এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান বাড্ডা থানা যুবলীগের আহবায়ক কায়সার মাহমুদ।

জানা গেছে, সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল বাড্ডা, গুলশান ও মহাখালী এলাকার কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে কায়সারকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন।  বিভিন্ন সময় তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।

বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হরতালবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাড্ডা এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় ধরনের শো-ডাউন করেন কায়সার মাহমুদ। রাজনীতিতে কায়সার মাহমুদের একক অবস্থান তৈরি হচ্ছে, এটাও মেনে নিতে না পারার কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন চঞ্চল। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মধ্য বাড্ডার কুমিল্লা পাড়ার সামার ফ্যাশনের সামনে উপর্যুপরি গুলি করা হয়। গুলিগুলো কায়সার মাহমুদের শরীরের নাক ও পেটের তিন সাইডে লাগে। তবে মাথায় হেলমেট থাকার কারণে একটি গুলি হেলমেটে লাগে। স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তির কারণে তিনি বেঁচে যান। বর্তমানে তিনি অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

এদিকে এ ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন গুলিবিদ্ধ যুবলীগের আহবায়ক কায়সার মাহমুদ। মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন- সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল ওরফে চিকা চঞ্চল, খলিলুর রহমান ওরফে ঘাড় কাটা খলিল, মাহাবুব ওরফে গুজা মাহবুব, দুলাল ওরফে কিলার দুলাল, নজরুল ওরফে শ্যুটার নজরুল,  খোকন ওরফে মুরগি খোকন, সুলতান ওরফে সিএনজি সুলতান, মুক্তার ওরফে সিডি মুক্তার এবং মানিক ওরফে মাইনক্যা।

এদের মধ্যে পুলিশ  সুলতান ওরফে সিএনজি সুলতান, মুক্তার ওরফে সিডি মুক্তার, মানিক ওরফে মাইনক্যা এবং রফিক ওরফে কানকাটা রফিককে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মানিক রিমান্ডে রয়েছে। বাকিদের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে আগামী রোববার।

বাড্ডা থানার ওসি ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আধিপত্য বিস্তারের জন্য এ ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরো অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। এছাড়া মামলার মূল আসামি চঞ্চলকে আটক করতে পারলে এই বিষয়ে আরো পরিস্কার হওয়া যাবে।

তিনি বলেন, মামলার পর চঞ্চলসহ বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ কায়সার মাহমুদ এখন অ্যাপোলো হাসপাতালের ভারতের চিকিৎসক এস কে বাসুর তত্বাবাধানে রয়েছেন। তার সুস্থ হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.