গো. আযমের বিরুদ্ধে আজ এসপি মাহবুবউদ্দিনের জবানবন্দী-যুদ্ধাপরাধী বিচার

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামাযাতের ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম আজ জবানবন্দী প্রদান করবেন। এদিকে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মার জেরা


সম্পন্ন করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। ১৬ জুলাই ৭ম সাক্ষী আব্বাস চেয়ারম্যানের সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এ জেরা করা হয়। অন্যদিকে একই ট্রাইব্যুনালে সোমবার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার হাজী মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে শুনানি ও আদেশের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আজ ট্রাইব্যুনাল-১ জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিনকে জেরা করবে বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধে কেরানীগঞ্জের মামাবাহিনীর প্রধান সৈয়দ শহিদুল হক মামাকে আসামিপক্ষের জেরা অব্যাহত রয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আজও তারে জেরা করা হবে।
গোলাম আযম ॥ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম (এসপি মাহবুব) আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জবানবন্দী প্রদান করবেন। যিনি প্রবাসী সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করেছিলেন। ১ জুলাই প্রথম সাক্ষী ইতিহাসবিদ গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন আসামি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জবানবন্দী প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের আদেশে হাজির করার পর জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে রাখা হয়। ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
সাকা চৌধুরী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মার জেরা সম্পন্ন করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। ১৬ জুলাই ৭ম সাক্ষী আব্বাস চেয়ারম্যানের সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১এ এই জেরা অনুষ্টিত হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী আহাসানুল হক হেনা এ জেরা করেন। ১৬ জুলাই ৭ম সাক্ষী আব্বাস চেয়ারম্যানের সাক্ষ্য দেয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। নিম্নে জেরার কিছু অংশ দেয়া হলো।
প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বারে যোগদানের সময় ওই বার সভাপতি কে ছিলেন।
উত্তর : ওই সময় চট্টগ্রাম বার সভাপতি কে ছিলেন তা আমার মনে নেই।
প্রশ্ন : তার এলাকার পিস কমিটির সভাপতি কে ছিলেন।
উত্তর : সাক্ষী না সূচক উত্তর দেন।
প্রশ্ন : ঘটনার দিন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেখেছেন এ কথা আপনার ভাই বিমলকে বলেছিলেন?
উত্তর : না আমি বলিনি। কারণ প্রয়োজন মনে করিনি।
প্রশ্ন : রাউজানে কবে শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে।
উত্তর : ১৩ এপ্রিলের আগেই শান্তি কমিটি গঠিত হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনাদের পাড়ায় ১৩ এপ্রিলের ঘটনার দিন পাক আর্মিরা কোন বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগ করেছিল।
উত্তর : করেনি।
প্রশ্ন : কোন লুটপাট করেছিল কিনা।
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : আপনার ঘর থেকে ১৩ এপ্রিল ঘটনার দিন পাক আর্মিরা লুটপাট করেছিল কিনা।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : পরবর্তীকালে স্থানীয় লোকরা আপনার বাড়িতে লুটপাট করেছিল কিনা।
উত্তর : লুটপাট হয়েছে তবে স্থানীয়রা করেছিল কিনা বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ১৩ এপ্রিল ঘটনার সময় পাক আর্মিদের সঙ্গে সালাউদ্দিনকে দেখেছেন এ কথা দানু কাকাকে বলেছেন কিনা।
উত্তর : বলিনি।
প্রশ্ন : ১৩ এপ্রিলের ঘটনার দিন আপনার পিতা, মাতা, ভাই বিমল বাড়িতে ছিল আপনি এবং আপনার ভাই সুনীল এবং ভাগিনা দুলাল ভারতে ছিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনে এবং তাকে সংসদে যাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য সেটআপ করে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : কথিত সময়ে, কথিত তারিখে, কথিত প্রকারে, কথিতভাবে কোন ঘটনা ঘটেনি সবই সাজানো।
উত্তর : সত্য নয়।
এছাড়াও সাক্ষীর দেয়া জবানবন্দীর বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আরও জবানবন্দী পেশ করেছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী এম সলিমুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সিরু বাঙালী, গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিংহ এবং প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়।
কাদের মোল্লা ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধে কেরানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রুপ মামাবাহিনীর প্রধান সৈয়দ শহিদুল হক মামাকে আসামিপক্ষের জেরা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-২ তাকে দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক। আজও তাকে জেরা করা হবে।
তবে কাদের মোল্লা অসুস্থ বিধায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল তাকে হাজির না করলেও চলবে বলে আদেশ দিয়েছে। এ কারণে কাদের মোল্লার অনুপস্থিতিতে তার বিচার চলছে। এর আগে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যদানকালে কাদের মোল্লার নানা ধরনের নৃশংস-নির্মম যুদ্ধাপরাধের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শহিদুল হক মামা। তিনি অভিযোগ করেন, কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে ও সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে কবি মেহেরুন্নেসাসহ তার মা-ভাইকে হত্যা, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা, মিরপুরের নূর হোসেনসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা, বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাত জনকে হত্যা করেছেন।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মিরপুরের জল্লাদ বা কসাই’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর, রায়েরবাজার, কেরানীগঞ্জ, সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নৃশংসতা চালিয়েছেন। এর আগে গত ৩ জুলাই প্রথম সাক্ষী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ খান সাক্ষ্য দেন। তার সাক্ষ্যের মধ্যে বের হয়ে এসেছিল, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খান বাড়ি ও খাটারচরসহ পাশের আরও দু’টি গ্রামের অসংখ্য লোককে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে গণহত্যার ঘটনা। প্রথম সাক্ষীকে আসামিপক্ষের জেরাও সম্পন্ন হয়েছে ৯ জুলাই সোমবার।
সাক্ষী মামাবাহিনীর প্রধান সৈয়দ শহিদুল হক মামার জেরার কিছু অংশ নিম্নে দেয়া হলো।
নিম্নে তার জেরার কিছু অংশ দেয়া হলো।
প্রশ্ন: কি ভাবে বাড়ি গেলেন।
উত্তর : বাড়ি পৌঁছালাম কোথায়। তাড়া করল, আত্মরক্ষার জন্য তুরাগ নদী দিয়ে যাই। বাড়ি যেতে পারিনি।
প্রশ্ন : আপনি যতটুকু পর্যন্ত গিয়েছিলেন, শাহআলী মাজার পর্যন্ত দূরত্ব কত।
উত্তর : জীবন নিয়ে টানাটানি। মাপজোখের প্রশ্ন আসে কিভাবে। ক্লাব ঘর থেকে বাড়ি যাবার পথে নবাবেরবাগ আধা ঘণ্টা সময় লাগে।
প্রশ্ন : নবাবের বাগের পর বাড়ি যেতে পারলেন না। নবাবের বাগ থেকে তুরাগ নদীর পাড় কত দূর।
উত্তর : ১০ মিনিটের পথ।
প্রশ্ন : নদীটা সাঁতার কাটা হয়েছিল, না নৌকাযোগে।
উত্তর : সাঁতরিয়ে পার হয়েছি। জীবনযুদ্ধের ব্যাপার।
প্রশ্ন : নদীর পশ্চিমে উঠলেন,প্রথম গ্রামটা বনগাঁ। পরের গ্রামটা চাকুলিয়া। এটা ঠিক।
উত্তর : ঠিক আছে।
প্রশ্ন : কিনারা থেকে বনগাঁওয়ে দূরত্ব।
উত্তর: অনেক দূর। আনুমানিক প্রায় এক ঘণ্টা।
প্রশ্ন : চাকুলিয়া বনগ্রাম থেকে পরে সাদুল্লাপুর গেলেন। কতটুকু সময় লেগেছে।
উত্তর : আনুমানিক ২০/২৫ মিনিট সময় লেগেছে।
প্রশ্ন : নদীর পাড় থেকে শুরু করলেন। এটা দুপুরের পরে না আগে।
উত্তর : আনুমানিক বিকেলের দিকে।
প্রশ্ন : সাদুল্লাপুর গিয়ে জানতে পারি আমার বাবা, নানি, ফুফাত ভাই গাছের নিচে বসে আছে। কে এ কথা বলেছিল।
উত্তর : জনতার কাফেলা মধ্য থেকে কারও মুখ থেকে শুনেছি।
প্রশ্ন : সেখানে আপনি শুনলেন, এর পর কয়টার সময় ওখানে পৌঁছালেন।
উত্তর : আনুমানিক ১৫/২০ মিনিট পর গাছের তলায় পৌঁছাই।
প্রশ্ন : সে কারণে আমার পিতাকে একটি ঘুণ্টি ঘরে আশ্রয় নিয়েছিল। ঐটা কি সাদুল্লাপুর না বনগাঁ।
উত্তর : ঘুণ্টিঘরটি সাদুল্লাপুর বাজারে।
প্রশ্ন: আপনার বাবা,নানি, ফুফাত ভাই ,ও ওনাদের সঙ্গে থাকলেন না। আব্দুল্লাহপুর থেকে বের হয়ে অন্যদিকে চলে গেলেন।
উত্তর : আমি আমার পিতা, নানির সঙ্গে সাক্ষাত করে সেখান থেকে চলে যাই।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে ছিল জাকারিয়া কাজল, তার মা টিভি অভিনেত্রী সায়রা বানু।
উত্তর : বনগাঁও এক আত্মীয়ের বাড়িতে ্ আশ্রয় নেই।
প্রশ্ন : দিনটা ২৬ তারিখ। ঐ পারে কয়দিন ছিলেন।
উত্তর : কিছুদিন । সপ্তাহখানেক।
প্রশ্ন : এক সপ্তাহ পরে যে ভদ্র লোকের বড়িতে ছিলেন ,সেই বাড়ির মালিকের নাম কি।
উত্তর : আশ্রয় দিয়েছে। আবার নাম জিঞ্জেস করব। জানি না এখানে এসে সাক্ষী দিতে হবে। তা হলে সব কিছু মেমোরিতে রাখতাম।
প্রশ্ন : ওখানে থাকার পরে বেরিয়ে কার সঙ্গে কোথায় গেলেন।
উত্তর : আমর বড় ভাই আমার সন্ধানে চাকুলিয়া থেকে বনগাঁও নিয়ে নিরাপদ স্থানে বায়ের বাজারে নিয়ে আসে। সেই নৌকায় বড়ভাই ঢাকায় নিয়ে আসেন। সঙ্গে বাাবা,নানি,ফুফাত ভাই ছিলেন।
প্রশ্ন : কখন বের হলেন। দুপুরের দিকে না সকালের দিকে।
উত্তর : দুপুরের দিকে।
প্রশ্ন : বায়ের বাজারে কখন পৌঁছালেন।
উত্তর : সন্ধ্যায়।
প্রশ্ন : বড় ভাইয়ের সঙ্গে নেমে যান। নাজিরাবাজারে এসে খালার বাসায় উঠেন।
উত্তর : নাজিরাবাজারের কথা বলিনি।
প্রশ্ন : নাজিরাবাজারের খালার বাসায় কতদিন অবস্থান করেন।
উত্তর : আনুমানিক দুই সপ্তাহ।
প্রশ্ন : তার পর থেকে নিরাপত্তার অভাববোধ করাতে গোপীবাগ বজলুর রহমানের বাসায় অবস্থান করেন। সেখানে কতদিন থাকলেন।
উত্তর : কিছুদিন অবস্থান করি।
প্রশ্ন : অবস্থানকালে সিদ্ধান্ত হলো, মুলুক চাঁদ, বদীসহ কয়েকজন ভারতের দিকে রওনা হলেন। আনুমানিক কয়জন ছিল।
উত্তর : মুলক চাঁদ, বদীসহ আনুমানিক ১০/১২ জন হবে।
প্রশ্ন : ভারতে ঢুকলেন কোন্ দিন।
উত্তর : স্মরণে নেই।
প্রশ্ন : আপনারা আগরতলায় গেলেন, ঢাকা শহর থেকে কুমিল্লা ,চৌদ্দগ্রাম দিকে গেছেন। বাহন কি ছিল।
উত্তর : ১১ নম্বর বাহনে গিয়েছিলাম। হেঁটে।
প্রশ্ন : ঢাকা থেকে আগরতলায় পৌঁছতে কয়দিন লাগল।
উত্তর : আনুমানিক আড়াই দিন থেকে তিন দিন।
প্রশ্ন : ভারতের সীমানায় ঢুকলেন, তখন নিরাপদ মনে করলেন। পাক সেনাদের গুলি নেই। কার কাছে প্রথম রিপোর্ট করলেন।
উত্তর : আগরতলা ট্রানজিট ক্যাম্পে।
প্রশ্ন : ক্যাম্পে কয়দিন রাখল।
উত্তর : ৮/১০ দিন।
প্রশ্ন : ৮/১০ দিন পর কোথায় গেলেন।
উত্তর : নিজেদের উদ্যোগে মেলাঘরে যাই।
প্রশ্ন : মেলাঘরে যাবার পর মেজর খালেদ মোশারফ ও মেজর হায়দার উনারা সব ব্যবস্থা করলেন।
উত্তর: জি।
প্রশ্ন : মেলাঘরে ভারতের কোন্ রাজ্য।
উত্তর : ত্রিপুরা রাজ্য।
প্রশ্ন : এখানে কত দিন থাকলেন।
উত্তর : থাকলাম প্রশিক্ষণ নিলাম। আনুমানিক এক মাস।
প্রশ্ন : এক মাসের ট্রেনিংয়ের পর কোথায় নির্দেশনা দিল।
উত্তর : প্রশিক্ষণের পর আমাকে ১২,১৩,১৪ প্লাটুনের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
প্রশ্ন : মেজর হায়দার কি নির্দেশনা দিল।
উত্তর : কিছু কিছু কথা আছে যা এখানে বলা যাবে না।
প্রশ্ন : আপনার দায়িত্ব দায়িত্ব দেয়া হলো ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া।’
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : কত তারিখে বাংলাদেশের মািটতে ঢুকলেন।
উত্তর : অক্টোবরের শেষের দিকে।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে সে সময়ে কতজন সদস্য ছিলেন।
উত্তর : ভারতীয় ট্রেনিং প্রাপ্ত আনুমানিক ৩৯/৪০ জন। আর স্থানীয় ট্রেনিংপ্রাপ্ত অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ছিল।
প্রশ্ন : অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পুরো গ্রুপ নিয়ে যার নাম মামা বাহিনী । সৌহাদ্যপূর্ণ থাকতেন । সেই জন্য সবাই আপনাকে মামা বলত।
উত্তর : জি। এক ভাগ্নে মামা বলত। সে কারণেই সবাই আমাকে মামা বলত । মেলাঘরে মক্তিযোদ্ধারা সবাই আমার ভাগ্নে। মেজর খালেদ মোশারফ ও মেজর হায়দারও আমাকে মামা বলতেন।
প্রশ্ন : সে হিসেবে আপনার বাহিনীর নাম মামা বাহিনী।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : প্রথমে মোহাম্মদপুর না মিরপুরে ঢুকলেন।
উত্তর : মোহাম্মদপুরের বশিলায়।
প্রশ্ন : সেখান থেকে অপারেশন চালান।
উত্তর : জি।
প্রশ্ন : ডিসেম্বর, অক্টোবার, নবেম্বর এই পর্যন্ত বশিলাতেই অবস্থান করছিলেন।
উত্তর : বশিলা, আটি, মিরপুরের অদূরে কিছু জায়গা আছে যেগুলো মেনশন করতে চাই না। ওখানে ছিলাম। আশপাশেই ছিলাম।
প্রশ্ন : আপনারা ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ করে, সেই সময় আপনি কোথায় ছিলেন।
উত্তর : বশিলার কাছাকাছি এবং আমরাও প্রস্তুত ছিলাম।
প্রশ্ন : সেদিন আপনার সঙ্গে কতজন ফোর্স ছিল।
উত্তর : বিভিন্ন জায়গায় যত সহযোদ্ধা ছিল। ১৫০ থেকে ২০০ জন।
প্রশ্ন: ১৬ ডিসেম্বর মেজর হায়দার ও মেজর খালেদ মোশারফের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
উত্তর : ১৬ ডিসেম্বর মেজর হায়দারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। মেজর খালেদ মোশাররফ আহত থাকার কারণে তার সঙ্গে দেখা হয়নি।
প্রশ্ন : উনার সঙ্গে যোগাযোগ হতো।
উত্তর : বলা ছিল। সেখানে শত্রুর ছাউনি আছে,আঘাত কর। মারো এবং ভাগো। গ্রাফিক্স আর্ট ইন্সটিটিউট আক্রমণের টাার্গেট ছিল। এখানে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করা হয়েছে।
গত ২৮ মে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিসহ ৬টি অভিযোগ এনে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (এ), ৩ (২) (জি), ৩(২) (এইচ), ৩(১), ৩(২) (এ) (এইচ) অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। গত ২০ জুন তার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী ও সুলতান মাহমুদ। তারা ৯৬ পৃষ্ঠার এ সূচনা বক্তব্যে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ৬টি অভিযোগ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ৬টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, কবি মেহেরুন্নেছাসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, পল্লবীর আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যা, খন্দকার আবু তালেবকে হত্যা, বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাতজনকে হত্যা, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খান বাড়ি ও খাটারচরসহ পাশের আরও দু’টি গ্রামের অসংখ্য লোককে হত্যার ঘটনা।
মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলাটি করেছিলেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মোস্তফার কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ খান। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা হয় কাদের মোল্লাসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে। ওই মামলার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গত বছরের ১ নভেম্বর জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। ২৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৬ এপ্রিল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলাসহ তিনটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.