জাপানে খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎ বিহীন লাখ লাখ মানুষ

জাপানে ভয়াবহ ও সুনামির পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল পর্যন্ত নিখোঁজ ছিল হাজার হাজার মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে হতাহতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। আটকে পড়া লোকজন এবং লাশ উদ্ধারে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। তবে যোগাযোগব্যাবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়ায় পীড়িত লোকজনের কাছে পৌঁছাতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকর্মীদের। এই অবস্থায় খাবার, পানি ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
জাপানের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৭০০। তবে এখনো হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ থাকায় মৃতের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মৎস্য বন্দর মিনামিসানরিকুর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানকার মোট ১৭ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ১০ হাজার মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবারের সুনামি ওই বন্দরের প্রায় ছয় কিলোমিটার ভূভাগ পর্যন্ত ধুয়ে নিয়ে যায়।
আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ভূমিকম্প ও সুনামিতে মিনামিসানরিকুর বাড়িঘর মাটির সমান হয়ে গেছে এবং ভগ্নাবশেষের ওপর ঘন কাদার স্তর জমে আছে।
সেন্দাই শহরসহ হনসু দ্বীপের উত্তর-পূর্ব উপকূল বরাবর বাস করে ১০ লাখের বেশি মানুষ। গতকাল দেখা যায় মিনামিসোমার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নাতোরি শহরের একটি ব্যায়ামাগারকে অস্থায়ী শবাগার বানিয়ে সেখানে রাখা হয়েছে শত শত লাশ। অনেক মানুষকে চিরতরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে সুনামি, অনেকের খোঁজ হয়তো আর কখনো পাওয়া যাবে না।
দুর্যোগের পর দুই দিন পেরিয়ে গেলেও খাদ্য ও জ্বালানি জোগাড় করতে না পেরে ইওয়াকি শহর থেকে লোকজন অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ওই শহরে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই, একটি দোকানও খোলেনি। সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সাহায্যও গতকাল পর্যন্ত সেখানে পৌঁছায়নি।
বন্দরনগর সেন্দাইয়ের পাশের তাগাজো শহরের একটি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে আহত অনেক মানুষ। কিন্তু ওই হাসপাতালেও পানি ও বিদ্যুৎ নেই। হাসপাতালের কর্মকর্তা ইকুরো মাতসুমোতো বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত পানি ও বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। গুরুতর অসুস্থ অনেক মানুষ এখানে আছে।’
মাসাহি ইমাই নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘গত দুই দিনে আমি এক টুকরা রুটি ও একটি মোয়া ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটি রিকুজেন্তাকাতা শহরের আট হাজার বাড়ির মধ্যে পাঁচ হাজার বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। উদ্ধারকারী সেনাবাহিনী গতকাল জানায়, সেখানে প্রায় ৪০০ লাশ পাওয়া গেছে।
নিখোঁজ হওয়া চারটি ট্রেনের মধ্যে গতকাল একটির খোঁজ পাওয়া গেছে শিনচি এলাকায়। ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে আছে কাদার মধ্যে। ট্রেনটিতে কতজন যাত্রী ছিল এবং তাদের কতজন রক্ষা পেয়েছে, তা জানা যায়নি। অপর তিনটি ট্রেনের কোনো হদিস গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এদিকে আটকে পড়া লোকজন এবং নিহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে। বিমান, নৌ ও স্থলপথে লোকজনকে উদ্ধার করা হচ্ছে, পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে জরুরি খাবার ও পানি। উদ্ধারকর্মীর সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ করা হয়েছে। শত শত বিমান ও জাহাজসহ স্থল ও নৌযান দিয়ে উদ্ধারকাজ চলছে। তবে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইন অচল থাকায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের মধ্যে গতকালও প্রায় ৫৬ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না এবং পানি ছিল না ১০ লক্ষাধিক বাড়িতে। এতে স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
এ ছাড়া পুরো এলাকা কাদাপানিতে ভরে থাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। কাদার কারণে রাস্তায় যানবাহন এবং ট্রেন চলাচলব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছে না। এর পরও সেনাবাহিনী ও অন্যান্য সংস্থা সমন্বিতভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আটকে পড়া হাজার হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে হেলিকপ্টারে করে। যেসব বাড়িঘরে আগুন জ্বলছে তা নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
অনেক এলাকার টেলিফোনব্যবস্থা বিকল থাকায় মানুষ তাদের প্রিয়জনকে খুঁজে ফিরে হয়রান হয়ে যাচ্ছে। না পেরে অনেকে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনে ফোন করে প্রিয়জনের উদ্দেশে বার্তা দিচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.