বিশ্বে প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে মার্কিন ডলারের বড় দরপতন দেশে টাকা-ডলারের বিনিময় স্থিতিশীল

রমজান মাসের ঠিক আগে দেশে আমদানিজনিত চাহিদা বাড়ার পটভূমিতে গত সপ্তাহে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর বাড়ার লক্ষণ দেখা যায়নি। মূলত আগের টানা ১৫ সপ্তাহের মতো এবারও বাজারে ডলারের ব্যাপক জোগান দেখা গেছে, যে কারণে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার দর প্রতি মার্কিন ডলারে ৬৯ টাকা ৬ পয়সাতেই স্থিতিশীল ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এমন আশাবাদ জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে গত সপ্তাহ পার করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজার। সপ্তাহের গোড়ার দিকে সোমবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো চলতি ২০০৯ সালের সর্বোচ্চে চলে যায়। এ দিন প্রতি ইউরো ১ দশমিক ৪৪০৬ ডলারের বেশি দরে কেনাবেচা হয়।
গত সপ্তাহে (১ থেকে ৭ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শেয়ারবাজারগুলোতে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলার ছেড়ে দিতে থাকলে ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর ব্যাপকভাবে বাড়ে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার খুচরা বিক্রির তথ্য ভালো আসায় সেই দেশের মুদ্রা অস্ট্রেলীয় ডলার জাপানি ইয়েনের বিপরীতে গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়। এ সময় প্রতি অস্ট্রেলীয় ডলার ৮০ দশমিক ৮১ ইয়েনে কেনাবেচা হয়।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড-স্টার্লিংয়ের দরও গত নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠে গত মঙ্গলবার। এ দিন প্রতি পাউন্ড কেনাবেচা হয় ১ দশমিক ৭০০৪ ডলারে। যুক্তরাজ্যের উত্পাদন খাতের তথ্য ভালো হয়েছে এমন খবর প্রকাশ এবং ডলারের বিপরীতে অন্যান্য মুদ্রার দর বাড়ার কারণে এমনটি ঘটেছে বলে ধারণা করছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
অবশ্য বৃহস্পতিবার ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তাদের ‘পরিমাণগত সহজীকরণ’ শীর্ষক কার্যক্রম আরও কিছু দিন চালাতে পারে এমন ইঙ্গিত দিলে স্টার্লিংয়ের দর খানিকটা পড়ে যায়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারণী সুদের হারও অপরিবর্তিত রাখে। ফলে প্রতি পাউন্ড-স্টার্লিংয়ের দর প্রায় ১ শতাংশ পড়ে ১ দশমিক ৬৮৫৫ ডলারে কেনাবেচা হয়। প্রতি ডলার প্রায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৯৫ দশমিক ৫০ ইয়েনে কেনাবেচা হয়।
নিউজিল্যান্ডে বেকারত্ব বাড়ার খবরে সে দেশের ডলার মার্কিন ডলারের বিপরীতে কিছুটা মার খায়। এতে প্রতি মার্কিন ডলার শূন্য দশমিক ৬৭০৬ নিউজিল্যান্ড ডলারে লেনদেন হয়।
সপ্তাহের শেষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভালো কর্মসংস্থান হয়েছে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় দেশটির মুদ্রা ডলার তেজি হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির যেকোনো খারাপ খবরে কিছু দিন ধরে তাদের ডলার তেজি হয়ে উঠছিল ‘সেফ হ্যাভেন’ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের উত্সাহের কারণে। কিন্তু শুক্রবারের ট্রেডিং সেশনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ভালো তথ্য প্রকাশিত হওয়ার খবরে তাদের মুদ্রার দর বাড়ে, যেটাকে বাজারের নতুন মোড় হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।
সপ্তাহ শেষে প্রতি ইউরো ১ দশমিক ৪১৭২ ডলারে, প্রতি পাউন্ড-স্টার্লিং ১ দশমিক ৬৬৮৫ ডলারে ও প্রতি মার্কিন ডলার ৯৭ দশমিক ৫৬ ইয়েনে কেনাবেচা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে আন্তব্যাংক কলমানির বাজারে (ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পর থেকে স্বল্প সময়ের জন্য নেওয়া কর্জ) সুদের হার শূন্য দশমিক ১০ শতাংশে শুরু করে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশে লেনদেন হয়।

No comments

Powered by Blogger.