ইতিহাসের ভয়ংকর ৫ বন্দিশালা, এখন জাদুঘর

কালের বিবর্তনে পৃথিবীর ভয়ংকর সব বন্দিশালা পরিবর্তিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে জনপ্রিয় সব দর্শনীয় স্থান হিসেবে। দাপুটে শাসক থেকে শুরু করে এসব বন্দিশালায় কারাভোগ করেছেন অসংখ্য মানুষ। ইতিহাসের রহস্যজনক এমন পাঁচটি বন্দিশালার খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হলো:

টাওয়ার অফ লন্ডন

টাওয়ার অফ লন্ডন
টাওয়ার অফ লন্ডনের অবস্থান টেমস নদীর তীরে। এটি একাদশ শতাব্দীতে রাজকীয় ভবন হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্মিত হয়। ১১০০ সাল থেলে এটিকে বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করা হয়। বিশেষ করে যারা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ ছিলেন তাদেরকে এখানে বন্দী করে রাখা হতো। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো রাজকুমারী এলিজাবেথ (প্রথম এলিজাবেথের পরবর্তী রাজকুমারী), সৈনিক গাই ফকেস, স্যার ওয়াল্টার রালেহকেও এখানে কারাবন্দী করে রাখা হয়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এই বন্দিশালাকে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে এখানে রাজকীয় গহনা, পয়সাসহ বিভিন্ন চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।

রোবেন আইল্যান্ড, আফ্রিকা

রোবেন আইল্যান্ড বন্দিশালা
রোবেন আইল্যান্ড ১৭ শতাব্দী পর্যন্ত ডাচদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। পরবর্তীতে ব্রিটিশ অপরাধী এবং রাজনৈতিক নেতাদের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মূলত বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদ বৈষম্যের সময়কালে এটি বন্দিশালা হিসেবে প্রকাশ পায়। এটার জনপ্রিয়তার অন্য আর একটি কারণ হলো বিশ্বনেতা নেলসন মেন্ডেলা এই কারাগারে ছিলেন। এখানে ১৯৬৪-১৯৮২ সাল পর্যন্ত নেলসন মেন্ডেলা এখানে কারাবাসে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে কারাগারটিকে জাতীয় জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবেও স্বীকৃতি পায় এ কারাগারটি।

আলকাট্রাজ ফেডারেল পেনিটেনশিয়ারি, সানফ্রানসিসকো

আলকাট্রাজ ফেডারেল পেনিটেনশিয়ারি বন্দিশালা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রানসিসকোতে অবস্থিত আলকাট্রাজ ফেডারেল পেনিটেনশিয়ারি বন্দিশালা। এটি মূলত একটি নৌ-প্রতিরক্ষা দুর্গ ছিল। ১৮৬১ সালে এটি সামরিক অপরাধীদের বন্দিশালায় রূপান্তরিত হয়। এ বন্দিশালাটি অ্যালফোনেজ গ্যাব্রেল, জর্জ কেলি, রবার্ট স্টাউডের কারাগার হিসেবে সুপরিচিত। 'ব্যাটেল অফ আলকাট্রাজ' যুদ্ধের সময় এই বন্দিশালার কয়েদিরা কারারক্ষীদের সঙ্গে লড়াই করে পালিয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী এ যুদ্ধের কারাবন্দীদের পালিয়ে যাওয়ার অংশটুকু নিয়ে পরবর্তীতে একটি সিনেমাও নির্মিত হয়। 'এস্কেপ অফ আলকাট্রাজ' নামে এই সিনেমাটি ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়।

ডেভিলস আইল্যান্ড, ফ্রান্স

ফ্রান্সে অবস্থিত ডেভিলস আইল্যান্ড বন্দিশালা
১৮৫২ সালে সম্রাট নেপোলিয়ান-৩ এই কারাগারটি নির্মাণ করেন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এটি কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এই কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। এই কারাগারের চারপাশ ছিল দ্বীপ বিশিষ্ট যেটি ছিলো মূলত হাঙ্গরের আবাসস্থল। কারাগারের সবচেয়ে খ্যাতিমান কারাবন্দী ছিলেন ফ্রেন্স সেনা কর্মকর্তা আলফ্রেড ড্রেইফুস। যিনি ১৮৯৫-১৮৯৯ সাল পর্যন্ত অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য কারাবরণ করেছিলেন। ১৯৮০ সালে কারাগারটির সংস্কার করা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল।

টুল স্লেং জেনোসাইড, কম্ববোডিয়া

কম্ববোডিয়ার টুল স্লেং জেনোসাইড বন্দিশালা
তৎকালীন কম্বোডিয়ার নেতা পল পট, টুল সেভি প্রি হাইস্কুলটিকে কারাগারে রূপান্তরিত করেন। ১৯৭৫ সাল থেকে এটি কারাগার হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। কম্বোডিয়ার সবচেয়ে বড় কারাগার ছিল। কারাগারে বন্দী ১৭ হাজার কয়েদির মধ্যে মাত্র সাত জন বেঁচে ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সাল থেকে টুল স্লেং জেনোসাইড যাদুঘর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.