কলম্বোর ব্লু সোয়ান: কফি, স্ন্যাকসের সাথে পুরনো সৌন্দর্য ও ঘরভর্তি মজার মানুষের সঙ্গ উপভোগ

কলম্বোর ক্যাফে দৃশ্যপট অনেকটাই মাশরুমের মতো। সবসময় গজিয়েই চলছে। তবে কফি শপ এখন নতুন জিনিস হলেও প্রায় দুই শ’ বছর আগে ব্রিটিশদের প্রবর্তিত উপনিবেশ আমলের পানীয় চা কিন্তু এখনো তার অবস্থান ধরে রেখেছে। অবশ্য এখানেও ব্যতিক্রম রয়েছে। আবার কফি শপগুলোতেও চায়ের আয়োজন রয়েছে। কফির দূর সম্পর্কের কাজিন হিসেবেই চা পরিবেশন করা হয় এসব স্টলে।
শ্রীলংকায় স্থানীয় ও বিদেশী সবাই কাজ করার পাশাপাশি এক কাপ কফি সবসময়ই কামনা করে। এমন অনেক ব্যবসায়িক হাব আছে যেখানে লোকজন দিন চুক্তিতে চা বা কফি পান করে থাকে। এমনই একটি হাব হলো হানসা ক্যাফে। সম্প্রতি এর নাম হয়েছে ব্লু সোয়ান ক্যাফে। কলম্বোর থিমবিরিগ্যাসিয়ারার ফিফে রোডে এর অবস্থান।
স্বস্তিদায়ক পরিবেশে কফি আর কাজ দুটিই চলানো যায়। বিশেষ করে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তারা এখানে সমবেত হতে বেশ ভালোবাসেন। এর ২৬ বছর বয়স্ক ম্যানেজার লনি ও তার তরুণ সহকর্মীরা সাধারণ রুটিকেও জাদুমন্ত্র দিয়ে সুপারক্লাস চিপ টোস্ট বানিয়ে ফেলতে পারেন। আর সাধারণ কফি তাদের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে যায় জীবনদায়িনী অমৃত।
ফলে সঙ্গীতজ্ঞ, শিল্পী, গবেষকসহ নানা ধরনের লোকজন তাদের হ্যাঙ্গ-ওভার কাটাতে ভিড় করেন এখানে। মাঝে মাঝে রাজনীতিবিদদেরও দেখা মিলবে।
কফি শপে কিন্তু আরো অনেক কিছু মেলে। বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বিশেষ স্থান। কফির উৎস হলো শ্রীলংকার বনের বাগান। আর এখানে অর্গ্যানিক ফল ও পণ্য পাওয়া যায়। সাবান, টি ওয়াইন, এনার্জি ফ্রুট স্ন্যাকস এবং এমনকি চারকোল সাবান, টুথপেস্ট সবাই বিজ্ঞাপন হিসেবে কাউন্টারে সাজানো থাকে।
ব্লু সোয়ান ক্যাফে আরেকটি কারণে খ্যাতিমান। তা হলো সারপ্রাইজ ডিনার আর মিউজিক্যাল নাইটস। স্থানীয় গ্রুপ ছাড়াও নানা সংগঠন এখানে তাদের সেরাটা দিয়ে যায়। তখন কিন্তু ক্যাফে হয়ে যায় হাউস ফুল। আর অনুষ্ঠান চলে মধ্য রাত ছাড়িয়েও।
ব্লু সোয়ানের মালিক শানি হুলুগ্যালে বলেন, লোকজন এই ক্যাফেকে তাদের বাড়ি মনে করায় তা আনন্দের ব্যাপার। এখানে এসে তারা স্বস্তিতে থাকে, তা জেনে খুশিই লাগে। তিনি তার ক্যাফের মান রক্ষার ব্যাপারে খুবই সচেতন। তিনি জানান, তিনি খাবারের মান পরীক্ষা করতে এবং সহকর্মীদের উৎসাহিত করতে দিনে অন্তত একবার ক্যাফেতে আসেন। তার বন্ধুপ্রতীম আচরণ প্রথমবারের মতো আসা লোকজন যেমন খুশি হয়, একইভাবে আনন্দিত হয় পুরনো কাস্টমারেরা।
তিনি বলেন, কলম্বোতে অনেক ক্যাফে আছে, আছে অনেক ওয়ার্ক স্টেশন। তবে তার ক্যাফের বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির লোকজন তাদের ভাববিনিময় করতে পারে।
তরুণ উদ্যোক্তা ইহতিশাম লাই বলেন, এটি অনন্য একটি স্থান। এখানে একটি সমাজ সৃষ্টি হয়।
তবে সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হবে এটি অতি সাধারণ ক্যাফে। দেয়ালগুলো কালো নীল কালার করা, তাতে শ্রীলংকার শিল্পীদের ছবি আঁকা রয়েছে। একটি দেয়ালে শ্রীলংকার প্রাচীন মানচিত্রও আছে। আরেকটি প্রাচীরে নোটিশ বোর্ড রয়েছে। তাতে প্যাট্টনদের বিভিন্ন কমপ্লিমেন্ট রয়েছে। চেয়ার-টেবিলগুলোও সাধারণ মানের।
আসলে বাড়ির পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যই এমন সাজসজ্জা আর আসবাবপত্রের আয়োজন করা হয়েছে।
এই ক্যাফের একটি বড় দিক হলো এটি কার্যত শ্রীলংকার বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম, হিন্দু, মালয় ও বার্গাহারদের মিলনমেলা। একটি বহুত্ববাদী সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করা হয় এখানে। প্রত্যেকেই খোলা মনে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আর সবাই হয় শ্রীলংকার কফির বদান্যতায়।

No comments

Powered by Blogger.