শিক্ষা ও এ সময়ের শিক্ষকেরা by রফিকুজজামান রুমান

ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে শেখানো হয়েছে, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড।’ তখন থেকেই মনে প্রশ্ন জেগেছিল, তাহলে জাতির প্রাণ কী? বড় হয়েছি। নিজেই জড়িয়ে পড়েছি শিক্ষার সঙ্গে। ‘মেরুদণ্ড’ যথেষ্ট শক্ত হয়েছে হয়তো। তবু জাতি হিসেবে আমরা পুরো তৈরি হলাম না। ‘প্রাণের’ খোঁজে কিংবা খুঁজে পাওয়া ‘প্রাণের’ চর্চার অভাবে কেটে গেল অনেক সময়। মুক্তি মিললো না। যে শিক্ষা হয়ে উঠতে পারতো সোনালি সূর্যের আভা, প্রাণের অভাবে তাতেই এখনো নিকষ অন্ধকার। যে শিক্ষক হয়ে উঠতে পারতেন অবিরাম আলোর মশাল, তিনিই এখন পথহারা বিভ্রান্ত রাজনীতির মুখপাত্র।


এমন এক প্রেক্ষাপটেই উদযাপিত হচ্ছে ২০১৯ সালের বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষক এমনিতেই এদেশে প্রচলিত আলোচনার অনুষঙ্গ হয়ে থাকে সারা বছর। দিবস এলে এই আলোচনায় হয়তো যুক্ত হয় কিছু বাড়তি মাত্রা। এই প্রবন্ধ সেরকমই একটি দিবসকেন্দ্রিক উৎপাদন!

যদি বলা হয়, বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তার পেছনে নেপথ্যের কারিগর হয়ে আছেন কে? শিক্ষক। যদি বলা হয়, এই জাতিকে অন্ধকারে পথ দেখিয়েছেন কে? শিক্ষক। একটি পথহারা ছাত্রকে টেনে তুলে তার সুকুমার বৃত্তিকে জাগ্রত করে আলোর ঠিকানায় নিয়ে গিয়েছেন কে? শিক্ষক। জ্ঞান চর্চায়, সাধনায়, উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এদেশের শিক্ষকেরা। খেয়ে না খেয়ে, অর্থের অভাবকে চিরসঙ্গী করে, রোদ বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন একজন শিক্ষক। ‘তোমাকে দিয়েও সম্ভব;’ কিংবা ‘তোমাকে দিয়েই সম্ভব’- শিক্ষার্থীদের মননে এমন সম্ভাবনার বীজ বপন করেছেন এদেশের শিক্ষকসমাজ। সততার প্রশ্নে, নৈতিকতার প্রশ্নে কোনোদিন কারো কাছে মাথা নত করবে না- এই মন্ত্রণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়েছিলেন এদেশের শিক্ষকেরা।

এমন সোনালি অতীতের উত্তরাধিকারী হয়ে আমরা আজ দেখি ভিন্ন এক মেঘাচ্ছন্ন বর্তমান। সুশিক্ষা ঢাকা পড়েছে মেঘে, আদর্শ শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে দিনকে দিন, শিক্ষকের মর্যাদা নেই আর আগের মতো। শিক্ষকেরা আর খবরের কাগজে খবর হয়ে ওঠেন না কোনো উদ্ভাবনের জন্য; খবর হন রাজনৈতিক দাসত্বের অংশীজন হিসেবে। শিক্ষকেরা আর শিক্ষার্থীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন না, তুমি পারবে, তোমাকে দিয়ে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা পুরুষ শিক্ষকের কাছে ভরসার সেই জায়গাটি আর খুঁজে পায় না। বরং প্রায়ই শোনা যায়, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নির্যাতিত। আলোকিত মানুষ বানানোর ব্রত আজ আর নেই শিক্ষায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থায়। বরং ‘চাকর’ বানানোর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে ক্যাম্পাসগুলো। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা দখল করে নিয়েছে মুখস্তনির্ভর পরীক্ষামুখী পড়াশুনা। নৈতিক আদর্শিক মানুষ হওয়ার কথা ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে, সেখানেই আজ অনৈতিকতার জয়জয়কার। সর্বোচ্চ শিক্ষিত মানুষগুলোকে খুঁজে পাওয়া যায় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্তদের কালো তালিকায়।

শিক্ষা হলো এমন এক বোধের নাম, যা হৃদয়কে স্পর্শ করে। শিক্ষা হলো আলো। শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা অমিত সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন। শিক্ষা একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক বানাবে। নতুন করে ভাবতে শেখাবে। কোনো একটি বিষয়ের ‘ডেফিনিশন’ মুখস্ত করা শিক্ষা নয়; শিক্ষা হলো সেই ডেফিনিশনকে ভেঙ্গে চুরে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করা। বৃত্তের বাইরে ভাবতে শেখানো। শিক্ষা হলো আরও শেখার অনুপ্রেরণা জোগানো। শিক্ষা হলো বিনয়। যে যত শিখবে, সে তত বিনয়ী হবে। শিক্ষা হলো সৌজন্যবোধ। শিক্ষা হলো নিজেকে ছাড়া কাউকে ছোট মনে না করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষা মানে হলো মানবিক রাষ্ট্র বানানোর শিক্ষা। পদার্থবিদ্যা শিক্ষা মানে মানুষের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস বানানোর শিক্ষা। ইতিহাস শিক্ষা হলো ইতিহাসের নানা বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে ঠিক রাখার শিক্ষা। সাংবাদিকতা শিক্ষা মানে সত্য তথ্য সরবরাহ করে শুদ্ধ সমাজ নির্মাণের শিক্ষা। ফার্মেসি শিক্ষা মানে খাঁটি ঔষধ উৎপাদন করে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার কাজটিকে পবিত্র ইবাদত মনে করার শিক্ষা। প্রত্যেকটি শিক্ষা বিভাগেরই মৌলিক উদ্দেশ্য হবে মানবিক মানুষ বানানো। শিক্ষা আমাকে পেশাজীবি বানাবে। সবার আগে বানাবে মানুষ। যে শিক্ষায় মানুষ বানানোর রেসিপি থাকে না, সেটি শিক্ষা নয়।

শিক্ষকই সবচেয়ে বড় মডেল। একজন শিক্ষক আপাদমস্তক শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা তা শেখে না, যা শিক্ষক পড়ান। শিক্ষার্থীরা তা-ই শেখে, যা একজন শিক্ষক! তারা শিক্ষককেই পড়ে। একজন শিক্ষক হলেন একজন নির্মাতা। তিনি মানুষ ‘নির্মাণ’ করেন। মানুষ চাষ করেন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বহু আগেই একথা বলে গেছেন, ‘শিক্ষকদের কাজ মানুষ চাষ করা।’ এ কারণেই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পেশা, সবচেয়ে মহান পেশা শিক্ষকতা। নবী রাসুলদেরও আল্লাহ শিক্ষক হিসেবে পাঠিয়েছেন। শিক্ষক হলেন সংস্কারক। তিনি সমাজের যাবতীয় অনিষ্ঠতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। তিনি হয়ে উঠবেন সত্যের প্রতীক কিংবা তিনিই সত্য! জাগতিক কোনো মোহ, কোনো প্রলোভন তাকে বিচ্যুত করবে না। অর্থের পেছনে নিরন্তর ছুৃটে চলা শিক্ষকের কাজ নয়। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতেই হবে। কিন্তু অর্থকেই জীবনের ‘অর্থ’ বানানো তার সাজে না। তিনি ছুটবেন জ্ঞানের পেছনে। স্বপ্ন দেখাবেন শিক্ষার্থীদের। তার মতো হতে চাইবে কিংবা তাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখবে শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করবেন। একজন শিক্ষকের আর কোনো পরিচয় নেই। তিনি ক্লাসে শিক্ষক, পরিবারে শিক্ষক, সমাজে শিক্ষক। তিনি অপরাজেয় মূল্যবোধ ধারণকারী একজন মানুষ। ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে চলে গেলেও’ তিনি একা দাঁড়িয়ে থাকবেন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। তিনি শিক্ষার্থীকে ভালোবাসবেন, শিক্ষার্থী তাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করবে।

শিক্ষা ও শিক্ষকতার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য থাকার পরেও বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের নিবেদন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্রমান্বয়ে পেছনে পড়ে যাচ্ছে। বিশ্বর‌্যাংকিং-এ এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুঁজে পাওয়া যায় না। মৌলিক জ্ঞান উৎপাদনে আমাদের সাধনা নেই। এদেশে শুধু পরীক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে; শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। পরীক্ষামুখী বিদ্যাচর্চা জ্ঞানের গভীরতা অনুসন্ধানের প্রয়োজনকে উপেক্ষণীয় করে তুলছে। লক্ষ লক্ষ জিপিএ ৫ পাওয়াকেই ধরে নেয়া হয়েছে সফলতা। আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে: শিক্ষার গুণগত মানের অভাব, মুখস্তনির্ভর পড়াশুনা, আনন্দহীন পড়াশুনা, শিক্ষায় বাজেট কম, দক্ষ শিক্ষকের অভাব, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা, শিক্ষকদের রাজনৈতিক আনুগত্য, গবেষণার অভাব, কোচিং ও শিক্ষাবাণিজ্য এবং নৈতিকতার অভাব।

পরীক্ষায় পাশ করাকেই বানানো হয়েছে উদ্দিষ্ট, বেড়ে গেছে না-বুঝে মুখস্ত করার প্রবণতা। বিষয়ের গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে না শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা পড়াশুনায় আনন্দ পাচ্ছে না। উপভোগ না করতে পারলে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে পাঠ্যবইগুলোও কম দায়ী নয়। বইগুলোকে আকর্ষণীয় করা যাচ্ছে না। অন্যান্য দেশের তুলনায় এদেশের শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ থাকে কম। তাছাড়া শিক্ষকদের আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধাও অপ্রতুল। বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হতে চায় না। এখানে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা টিকে আছে। এটি অনেকেরই নেশা হয়ে ওঠেনি। ভেতর থেকে শিক্ষকতা বোধ তৈরি হওয়া, তার জন্য তাড়না বোধ করা- এসব না হলে দক্ষ শিক্ষক হয়ে ওঠা কঠিন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে (বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে) যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়, তা প্রশ্নাতীত নয়। রাজনৈতিক বিবেচনা তো আছেই; তার উপরে শুধু রেজাল্ট দেখে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যৌক্তিক হতে পারে না। তার পড়ানোর সক্ষমতা, বিষয়ের গভীরে যাওয়ার সামর্থ, কথা বলার মুন্সিয়ানা- এসব পরখ না করে দশ মিনিটের একটি ভাইভায় একজনকে শিক্ষক বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়। শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক আনুগত্য পরীক্ষা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে দলগত বিবেচনা, শিক্ষকদের মধ্যে ‘সাদা/নীলের’ বিভাজন আমাদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। গবেষণাই জ্ঞান। একজন শিক্ষক স্বভাবতই একজন গবেষক। গবেষণায় আমাদের ঘাটতি পাহাড়সম। এই অভিযোগ অস্বীকার করা যাবে না যে, কিছু শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের পাঠদানের চেয়ে কোচিং/প্রাইভেটে বেশি মনোযোগী। এতে শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণের বিষয়টি শিক্ষার্থীর কাছে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সম্ভবত শিক্ষকতার সবচেয়ে বড় সংকট নৈতিকতা চর্চার অভাব। একজন শিক্ষক সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর মানুষ। তিনি হবেন সবার আদর্শ। অথচ আমরা দেখি, এই শিক্ষকই নানারকম অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষকের হাতে ছাত্রীর যৌন হয়রানির খবর এখন নিয়মিত। ‘পরিমল’ শুধু একজন নন। অতি সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও নিরাপদ নয়। আমরা দেখি, প্রশ্ন ফাঁসের মতো অতি অনৈতিক কাজে শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকা-ে বরাদ্দ অর্থ উপাচার্য ও ছাত্রদের মধ্যে ভাগভাটোয়ার খবরও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

এরকম আরও অনেক অপ্রত্যাশিত বিষয়ে আজকাল খবর হচ্ছেন আমাদের শিক্ষকরা। এই মুহূর্তে কমপক্ষে তিনটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যগণ খবরের শিরোনাম। এটি বলা বোধ হয় আর ভুল নয় যে, জ্ঞান চর্চার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন রাজনীতির চর্চা বেশি হচ্ছে। আর সি মজুমদাররা এখন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন না। স্যার এ এফ রহমান কিংবা অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরীরা থাকেন না ভিসি প্যানেলে। রাজনৈতিক ‘আনুগত্যে’ উত্তীর্ণ হওয়াই বড় যোগ্যতা।

এর মানে এই নয় যে, ভালো শিক্ষক এখন আর নেই। অবশ্যই আছেন। আমরা তো মনে করি, অধিকাংশ শিক্ষকই এখনো সঠিক পথে আছেন। যারা পথ হারিয়েছেন, তারা সংখ্যায় কম হলেও শিক্ষকতার পবিত্র পেশা তাতে কলুষিত হয়। শিক্ষকদের সমালোচনা করার সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সত্যিকারের মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার জন্য শিক্ষকদের যথাযথ সুযোগ ও সম্মান আমরা দিতে পেরেছি কিনা। শিক্ষকদের জীবনধারণ সহজ করবার এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যথাযথ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি। তাই তো দু-একটি যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হয় রাষ্ট্রের কারিগরদের। শিক্ষকদের উপর নিক্ষেপ করা হয় জলকামান। সারাটা জীবন শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করা শিক্ষক অবসরে গেলে খুব সহজেই পেনশনের টাকা উঠাতে পারেন না। দিনের পর দিন ধর্না দিতে হয় বিভিন্ন অফিসে।

এখনো এমন শিক্ষক আছেন, যিনি শিক্ষার্থীর হৃদয় ছুঁয়ে যান। এমন শিক্ষক এখনো আছেন, যিনি বই দিয়ে নয়; হৃদয় দিয়ে পড়ান। যিনি পড়েন, পড়ান এবং স্বপ্ন দেখান। এমন শিক্ষক নিশ্চয়ই আছেন, শিক্ষার্থীরা যার মতো হয়ে উঠতে চায়! মনের অজান্তে শিক্ষকই হয়ে ওঠেন তার রোল মডেল। শিক্ষার্থীর সাফল্যে শিক্ষক গর্বিত হন। এমন শিক্ষকই আমাদের দরকার, যিনি জ্ঞানচর্চায়, আত্মসম্মানবোধে, সততায়, নৈতিকতায় ছাপিয়ে যাবেন সবাইকে।

শুরুর সেই প্রশ্ন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে জাতির প্রাণ কী? জাতির প্রাণ হলো এই মূল্যবোধ। নৈতিকতা। মূল্যবোধ ছাড়া, নৈতিকতার যথার্থ অনুশীলন ছাড়া একটি জাতি কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। শিক্ষক মূল্যবোধ বিনির্মাণের আদর্শ কারিগর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধ চর্চার অনন্য সুঁতিকাগার। একজন শিক্ষক এই নৈতিকতাবোধ নিজে ধারণ করবেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে সঞ্চারিত করবেন, রাষ্ট্র শিক্ষককে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করবে- তবেই শিক্ষা সত্যিকারের আলো হয়ে ফুটবে। দূর করবে যাবতীয় অন্ধকার। বলা হয়, To teach is to touch a life forever. আমাদের শিক্ষকেরা এমন শিক্ষকই হয়ে উঠুন, যাদের স্পর্শে একটি জীবন তার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জেগে ওঠে।  শিক্ষক দিবসে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।

লেখকঃ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক
rafique.ruman@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.