কেউই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না: জারিফ

মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ
বর্তমানে বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। তেহরানে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তেহরানে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বহুপাক্ষিক বা  বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সমাজ কেন বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে এবং একপাক্ষিক ব্যবস্থা কি ধরণের ক্ষতি বয়ে এনেছে সেটাই এখন প্রশ্ন। সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দেশের সরকারই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তিনি বলেন, "বিশ্বের দেশগুলো এটা বুঝতে পেরেছে এককভাবে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় এবং অন্য দেশের আইনভঙ্গের বিরুদ্ধেও এককভাবে রুখে দাঁড়ানো যায় না। আর এ কারণেই বহু মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার প্রতি সবার আগ্রহ রয়েছে।"

বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটায় তেহরান সম্মেলনে দেয়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানিও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে মূল্যবান বক্তব্য দিয়েছিলেন। ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ মোহাম্মদ বাকের নুর বাক্স এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিশ্বজনমতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরান সরকার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং এ অঞ্চলের সব দেশকে সঙ্গে নিয়ে হরমুজ প্রণালী ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে যৌথ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্ববাসীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি মেনে চলা, পারস্পরিক আস্থা অর্জন ও সংলাপ। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ তেহরান সম্মেলনে এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ওয়াশিংটনে ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন সরকার ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারেও ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক আরমান গোরগেন বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে আমেরিকা নিজেই একঘরে হয়ে পড়েছে এবং সরল রাস্তা থেকে ছিটকে পড়েছে। জাতিসঙ্ঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমেরিকার একতরফা নীতি লজ্জাজনক যা কিনা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

যাইহোক, বিশ্বে মার্কিন একক আধিপত্য ও স্বেচ্ছাচারী নীতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় সেটাই এখন প্রশ্ন। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিশ্বের দেশগুলো পরস্পরের সহযোগিতার মাধ্যমে মার্কিন নেতৃত্বে এক মেরুকেন্দ্রিক ব্যবস্থা অচল করে দিতে পারে। ইরাক ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে ইরানের ভূমিকা ও সাফল্য মার্কিন একক আধিপত্য মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এতো সহজ কাজ নয়। কারণ আমেরিকার মতো বৃহৎ শক্তি সে সুযোগ কাউকে দেবে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে আমেরিকার একের পর এক পরাজয় প্রমাণ করে সম্মিলিতভাবে মার্কিন একক আধিপত্য মোকাবেলা করা সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.