ইসরাইল করার ইচ্ছা করছে এমন সবকিছুই করছে ভারত, কিন্তু মাথাব্যথা নেই কারোই by আন্দ্রে করিবকো

ভারতের কাশ্মীরীদের তুলনামূলক স্বায়ত্বশাসনের ব্যবস্থা বাতিল করে এটিই বোঝাচ্ছে যে সে তার নতুন মিত্র ইসরাইল যেমন ফিলিস্তিনে ইচ্ছে মতো যা খুশি করছে (ফিলিস্তিনের আলাদা রাজনৈতিক মর্যাদা বাতিল করা, জাতিসংঘ স্বীকৃত এলাকায় অনাবাসিকদেরকে সম্পত্তি কেনার অধিকার প্রদান-যাতে করে স্থানীয়দের জনসংখ্যা হ্রাস পায়), সেও তা করছে। এসব বিষয় বৈশ্বিক অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে তেমন একটা তৎপরতার সৃষ্টি করে না। এমনকি হিন্দু চরমপন্থীরা যেসব কাজ করছে, সেটা নিয়ে স্বঘোষিত ইহুদি রাষ্ট্রটি কথা বললেও ব্যাপক সারা দুনিয়ায় হৈচৈ পড়ে যায়।

ভারত ও ‘ইসরাইলের’ মধ্যে পার্থক্য

ভারত ও তার নতুন ইসরাইলি মিত্রের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। ফলে তারা নিখুঁত অংশীদারে পরিণত হয়েছে। দুই দেশই ধর্মীয় চরমপন্থীদের দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, উভয়েই সাত দশক ধরে (বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দিন ধরে অমীমাংসিত বিষয়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেরও স্বীকৃত) আদিবাসী মুসলিম সংখ্যালঘুদের ভূমি দখল করে নিচ্ছে।

অনেকে বলতে পারেন, তাহলে তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উভয়েই সমান কুখ্যাত। কিন্তু না তাদের মধ্যে বড় পার্থক্যও আছে। বস্তুত, এই বিশ্বের একেবারে সবাই ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সঙ্ঘাত সম্পর্কে অবগত। কিন্তু কাশ্মীরের বিষয়টি খুব কম লোকই জানে। বরং পাকিস্তান-ভারত নামের পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যকার সঙ্ঘাতের খবরই তারা জানে।

একই ধরনের সঙ্ঘাত, কিন্তু দ্বৈত নীতি

আরো খারাপ ব্যাপার হলো, ইসরাইল তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই সেমিটিকবিরোধী হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও তাতে সফল হচ্ছে না। কিন্তু ভারতে হিন্দু চরমপন্থীরা তাতে বেশ সফলতা অর্জন করে যাচ্ছে।

ভারতীয়দের প্রচারণার কারণে অনেক লোকই কাশ্মীরীদের সন্ত্রাসী মনে করছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি হিন্দু চরমপন্থী ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতিও, ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিল করেছেন। এই অনুচ্ছেদেই কাশ্মীরকে তুলনামূলক স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয়েছিল, অনাবাসিক ভারতীয়দেরকে সেখানে ভূমি ক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অমিত শাহ এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি স্বল্প লোকবসতিপূর্ণ লাদাখকে আলাদা ইউনিয়ন ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

এই প্রস্তাব করার সময় কাশ্মীরে আরেক দফা কারফিউ জারি করা হয়, সব ধরনের রাজনৈতিক সভা নিষিদ্ধ করা হয়, আঞ্চলিক নেতাদের গ্রেফতার করা হয়, ইন্টারনেট ও ফোন পরিষেবার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। অধিকন্তু, সম্প্রতি একটি নিরাপত্তা আইন পাস হয়েছে, যাতে সরকার যে কাউকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করতে পারবে।

ভণ্ডামির চূড়ান্ত প্রকাশ

ইসরাইল কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহসী হচ্ছে না। এমন কিছু করা হলে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হবে। কিন্তু কাশ্মীরে পাকিস্তানের সমর্থন লাভ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। ‘হিন্দুফোবিয়া’, ‘সন্ত্রাসে মদতদাদা’, ‘স্বঘোষিত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার’ অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ভয়ে অনেক অ্যাক্টিভিস্ট মুখ খুলছে না।

এটা আসলে দ্বিমুখী নীতি। তবে আশার কথা, কাশ্মীর নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ফলে ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরাও কাশ্মীরীদের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ হতে পারে।

কাশ্মীর হলো ভারতের ফিলিস্তিন, ফিলিস্তিন হলো ইসরাইলের কাশ্মীর

বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়ার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের কাশ্মীর পদক্ষেপটি দেশটির জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। এর ফলে কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন উভয় বিষয়ই গুরুত্ব পাবে আরো বেশি করে। ভারত ও ইসরাইল সমমাত্রার অপরাধই করেছে। কাশ্মীরের অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিল আর ইসরাইলের পশ্চিম তীর দখল সমমাত্রার অপরাধ। উভয় দেশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তারা চাচ্ছে সেখান থেকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উচ্ছেদ করে উগ্রপন্থীদের বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করতে।

আন্তর্জাতিক দায়মুক্তির অবসান ঘটানো

ভারত যদি এই অপরাধ করেও আন্তর্জাতিক সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায়, তাহলে ইসরাইলও তার ইচ্ছাগুলো বাস্তবায়নে আরো সাহসী হয়ে ওঠবে। ভারত যেভাবে হিন্দু রাষ্ট্র, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার সৃষ্টিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, ইহুদি রাষ্ট্রটিও বৃহত্তর ইসরাইল গঠনের দিকে অগ্রসর হবে।

অর্থাৎ কাশ্মীর আর ফিলিস্তিনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ফলে কাশ্মীরে ভারতের পদক্ষেপের প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নমনীয় হলে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি থাবা আরো প্রবল হবে।

দখলদারদের থেকে মুক্তি লাভ করতে হলে দখলের শিকার লোকজনকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। কাজটি করতে হবে তাদেরই। তবে জাতিসংঘ ও আগ্রহীদেরও দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের জন্য দখলদারদের শাস্তি প্রদান করার। আর তা করার জন্য সারা বিশ্বের অ্যাক্টিভিস্টদের অবশ্যই প্রথমে কাশ্মীরীদের প্রতি সমর্থন দিতে হবে। তা না হলে ফিলিস্তিন হারাতেও বেশি দেরি হবে না।

No comments

Powered by Blogger.