নেপাল, ভারতের বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর সুরাহা হয়নি যৌথ কমিশনের বৈঠকে by দিপক অধিকারী

নেপাল-ভারত যৌথ কমিশনের বহুল প্রতীক্ষিত সভায় দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি প্রতিবেশীর মধ্যকার বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো সমাধানে অগ্রগতি হয়নি বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দুদিনের সফর শেষ করার পর তারা এই মন্তব্য করেন।

গত মে মাসে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। এর আগে তিনি ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব। বাণিজ্য, ট্রানজিট, পানি বণ্টন, অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা নিরসনের জন্য তিনি নেপালে সফরে যান।

সফরকালে তিনি রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি, এবং অন্যান্য রাজনীবিদের সাথে বৈঠক করেন।

এই সফরকালে দুদেশের মধ্যে বিরাজমান অনেক সমস্যার সুরাহা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।

নেপালি সাংবাদিক সন্তোস ঘিমাইর রিপাবলিকা পত্রিকাকে বলেন, ভারতীয় মন্ত্রী যৌথ সভায় বড়জোর এক ঘণ্টা সময় দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভারতীয় পক্ষের কেবল প্রস্তুতিই ঘাটতি ছিল না, সেইসাথে মনে হচ্ছে তারা জম্মু ও কাশ্মীর নিয়েই আচ্ছন্ন ছিলেন।

উল্লেখ্য, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য মর্যাদা বাতিল করার পর সেখানে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

ঘিমাইর আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, এটা দ্বিপক্ষীয় সভা হলেও মনে হচ্ছে, ভারত চাচ্ছে কাশ্মীর প্রশ্ন সমর্থন আদায় করতে।

জয়শঙ্কর দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় ধাপের সফরে ভারত সরকারের পক্ষে সমর্থন আদায়ের দিকে জোর দেন।

অথচ এই সফরকে কেন্দ্র করে যে বৈঠকটি হয় তাতে শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি সংশোধন, ভারতীয় তহবিলে চলমান বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প ছিল আলোচ্য বিষয়।

নেপালি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, দুই পক্ষ বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতাগুলো পর্যালোচনা করতে রাজি হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে থাকা বাণিজ্য ও ট্রানজিট সুবিধার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্টে অবকাঠামো ও লজিস্টিক স্থাপনাগুলো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে তারা।

তবে ২০১৫ সালের অবরোধ এখনো দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হিসেবে বিরাজ করছে।

অনেকেই মনে করেন, ওই অবরোধের কারিগর ছিলেন এই জয়শঙ্কর। তার কূটনৈতিক দক্ষতার কারণেই প্রধানমন্ত্রী তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন।

ভারত ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে নেপালে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছিল দেশটির নতুন সংবিধান ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। নেপালি সংবিধান নিয়ে ভারত যেসব আপত্তি উত্থাপন করেছিল, সেগুলো সমাধান না করায় নেপালি রাজনীতিবিদদের প্রতি বিরক্ত হয়েছিল ভারত। ওই অর্থনৈতিক অবরোধ ছিল নেপালের জন্য মারাত্মক এক আঘাত। উল্লেখ্য, ভূবেষ্ঠিত নেপাল বাণিজ্য ও ট্রানজিটের জন্য ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল অশোক মেহতা দুই দিনের সফরের ব্যাপারে বলেন, দুই দেশের আমলা ও দূতদের মধ্যে বৈঠক না হলেও এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনেক ভালো।

তিনি বলেন, আগে সংলাপ হতো গোয়েন্দা কর্মকর্তা বা রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে। কিন্তু এখন দুই দেশের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীরা বৈঠকে বসছেন। এটা ইতিবাচক বিষয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসে বিপুল বিজয়ী হিসেবে ক্ষমতায় ফিরে আসা বিজেপি দক্ষিণ এশিয়ায় (নয়া দিল্লি একে তার প্রভাববলয় মনে করে) চীনা সম্প্রসারণশীল অবস্থান মোকাবিলা করার চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.