মাদকের গডফাদার তালিকা থেকে নাম কাটাতে তদবির by দীন ইসলাম

মাদক গডফাদারের তালিকা থেকে নাম কাটাতে তদবির করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। যেকোনো উপায়ে নিজেদের নাম বাদ দিতে চান তারা। এজন্য বিভিন্ন মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদবির করছেন নানা মাধ্যমে। এলাকার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা বা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাকে তার তদবিরে যুক্ত করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে মাদক বিরোধী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এখনও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন মাদকের গডফাদাররা। ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় ব্যবহার করে তারা বাঁচার চেষ্টা করছে।
মন্ত্রণালয় ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কিছু অসৎ কর্মকর্তা নাম কাটানোর কথা বলে গডফাদারদের কাছ থেকে অর্থ কামাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন সবচেয়ে বেশি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারি সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় মাদকের গডফাদার হিসেবে তার নাম রয়েছে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় তার নাম নেই। এ সুযোগটি কাজে লাগাতে তদবির শুরু করেছেন ইয়াহিয়া। গেল বছরের শেষ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ইয়াহিয়া সর্ম্পকে জানতে একটি চিঠি দেয়। এর ভিত্তিতে গত ২রা জুলাই একটি প্রতিবেদন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে হেড অফিসে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা বিভাগ কক্সবাজার জেলার মাদক তথা ইয়াবা ব্যবসায়ি ও চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়দাতার তালিকা তৈরি করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের আওতাধীন কক্সবাজারের তৈরি করা তালিকায় মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার নাম অর্ন্তভূক্ত ছিল না। অন্য কোন সংস্থা মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার নাম তালিকাভূক্ত করেছে কিনা ওই তথ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের কাছে নেই। মোহাম্মদ ইয়াহিয়া চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
মাদক ব্যবসায়ি বা পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় তার নাম নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২রা জুলাই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানোর পর গত ৯ই জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে চিঠি দিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ। ওই চিঠিতে মোহাম্মদ ইয়াহিয়া তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ি নন মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ তালিকা সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদকের গডফাদারদের তদবিরের বিষয়টি জানতে চাইলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক সিনিয়র কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, তদবির করে পার পাওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ তালিকা থেকে নাম কাটানো অনেক কঠিন বিষয়। এদিকে, মাদকের গডফাদাররা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে ঘুরে ফিরে অভিযান বন্ধ বা নিজেদের নাম কাটানোর তদবির চালালেও তাদের গ্রেপ্তারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এদের কারও কারও প্রতি ক্ষমতাসীন দলের নেতা বা জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্রয় রয়েছে বলে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ। এদিকে, অনেক মাদক গডফাদার এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জেনেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এজন্য মাদক কারবারিদের ধরতে সীমান্তে কড়া নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বিভিন্ন সংস্থার তালিকা অনুযায়ি সারা দেশে এক হাজারেরও বেশি মাদক গডফাদার রয়েছে। সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযান শুরুর পর তাদের অনেকেই গা ঢাকা দেয়। সারা দেশে অনেক মাদক ব্যবসায়ী ও বিক্রেতা গ্রেপ্তার হলেও গডফাদারদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা কম। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে মাদক বিরোধী অভিযানের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে চার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী মারা যায়।

No comments

Powered by Blogger.