চারপাশে একই আওয়াজ ‘আমার মোবাইল নাই’ by উদিসা ইসলাম

চিড়িয়াখানার সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়
ঈদের পর দিন (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। চিড়িয়াখানার সামনে সেই জনসমুদ্র থেকে একটু পরপর ভেসে আসছে আওয়াজ ‘এই আমার মোবাইল নাই’। কেউ বলে উঠছেন, ‘মা ব্যাগে মোবাইল নেই’, কেউ বলছেন, ‘আরে পকেটে মানিব্যাগ নেই’। ঘুরতে গিয়ে মন খারাপ করে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অনেককে। তারা বলছেন, এত মানুষকে সারিবদ্ধ করে সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেওয়ার কোনও আয়োজন নেই এসব বিনোদনকেন্দ্রে। এভাবে ভিড়ের মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জিনিস খোয়া গেলে আগামীতে মানুষ  এসব বিনোদনকেন্দ্র আসারই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
ঈদের পুরো দিনটিই অনেকের কেটেছে ঘরবন্দি অবস্থায়। সারাদিনই ছিল থেমে থেমে বৃষ্টি আর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ার্ল্ড কাপ খেলা। বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টি না থাকায় মানুষ সপরিবারে হাজির হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা, শিশুমেলা ও চন্দ্রিমা উদ্যানের লেকপাড়ে। কিন্তু এত মানুষের জন্য যে পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা দেখা যায়নি। সকালে চিড়িয়াখানার গেটের সামনে যে চত্বর, সেখান থেকে গেট পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রচণ্ড ভিড়ের ভেতর থেকে  বিশ মিনিটে অনন্ত দশ বার শোনা গেছে ‘আমার মোবাইল নাই’।
পল্লবী থেকে সপরিবারে চিড়িয়াখানায় এসেছেন তৌহিদুর রহমান। চিড়িয়াখানা এলাকায় প্রবেশের অনেক আগে থেকে একটা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা। কিন্তু কোনটা প্রকৃত লাইন, কোনটা নয়, তা জানেন না তিনি। কাকে জিজ্ঞাসা করলে ঠিক উত্তরটা পাওয়া যাবে, তাও জানেন না।এরইমধ্যে তার মোবাইলফোনটি খোয়া যায়।
‘কীভাবে মোবাইলফোন হারালেন’—জানতে চাইলে তৌহিদ বলেন, ‘আমার প্যান্টের পকেটে ছিল। কিন্তু এত ভিড়, কার গায়ে ধাক্কা লাগছে, কাকে কে ধরছে ঠিক নাই। এরই মধ্যে আমি টের পেলাম, কেউ একজন ধাক্কা দিয়েছে। আরেকজন আমাকে তুলতে গিয়ে সম্ভবত মোবাইলটা বের করে নিয়েছে।’
দর্শনার্থী মেহজাবিন হাসান মুক্তা বললেন আরেক পদ্ধতির কথা। চিড়িয়াখানায় ঢোকার আগে বাম দিকে যেদিক দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করে পার্কিংয়ের দিকে যায়, সেদিকে মানুষজনের ঢোকার কথা নয়। ব্যারিকেডও দেওয়া আছে লোহার। কিন্তু মোড়টা ঘুরে চিড়িয়াখানার সামনের চত্বরটার কাছে আসতেই কিছু ছেলে ইচ্ছে করে ওই ব্যারিকেডে গাড়ির সঙ্গে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। না বুঝে একটু আগে যাওয়া যাবে ভেবে সেখানে ঢুকে আর নড়াচড়া করতে পারছেন না অনেকে।ওইরকমই পরিস্থিতিতে পড়ে দেখলাম, আমার সাইড ব্যাগের চেইন খোলা। ভেতরে রাখা মোবাইলফোন নেই।’
সারাবছরই আর লোকজন এই এলাকায় দেখা যায় না উল্লেখ করে শাহ আলী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদের এই তিন চারদিন বরাবরই খুব ভিড় হয়। সে কারণে আমাদের বেশ প্রস্তুতি ছিল। তারপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে।এখন পর্যন্ত এই বিষযে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজকে অনেক ভিড়।’ তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন বলেও জানান ‍ওসি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.