সাত শিক্ষার্থীর অন্যরকম ঈদ by রাশিম মোল্লা

ঈদ উৎসব ঘিরে কত মানুষ কত স্বপ্ন বুনেন। পরিবার পরিজন নিয়ে ছোট-বড় সবার সঙ্গে নতুন জামা পরে ঈদ উদযাপন করবেন। এজন্য পরিবার পরিজনের জন্য কেনাকাটা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন পিতামাতারা। কিন্তু দুস্থ অসহায় পরিবারের শিশুদের পিতা মাতার সামর্থ্য নেই সন্তানদের নতুন জামা দেয়ার। এমন দুস্থদের জন্য সাতজন কলেজ শিক্ষার্থী নেমেছেন মাঠে। শিশুদের মুখে ঈদের হাসি ফোটাতে তাদের ঈদের টাকায় দুস্থদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে তারা বিতরণ করেছেন নতুন জামা। শিক্ষার্থীদের হাতে খুব বেশি পরিমাণে টাকা পয়সা থাকে না।
তবুও তারা নিজেদের টাকায় যতটুকু সম্ভব অসহায় শিশুদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই সামান্য ঈদ উপহার দুস্থদের এ যেন এক বাড়তি সুখ, বাড়তি তৃপ্তি নিয়ে এসেছে। সাত শিক্ষার্থীর হলেন- উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর মো. ইউসুফ নিলয়, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের রাসেল মোল্লা ও ফাতেমা আক্তার, হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনিকা রহমান, ঢাকা উদ্যান মহা বিদ্যালয়ের জাহিদ হাসান ইমন, তেজগাঁও কলেজের প্রিয়া আক্তার ও রাজিয়া রহমান। তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কিছু অসহায় দুস্থদের মাঝে নতুন জামা বিতরণ করেছেন। নতুন জামা নিতে আসা সাজ্জাদ জানায়, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঈদ, কিন্তু মা তার জন্য নতুন জামা কিনতে পারেনি, তাই এই জামা পেয়ে তার খুশি লাগছে। এখন ঈদ তার ভালই কাটবে। ১০ বছরের নুসরাত, কাজ করেন রেল লাইনের পাশে সবজির দোকানে। অনেকদিন ধরে তার নতুন কোনো জামা নেই। এই জামা পেয়ে তার যে কী আনন্দ!  সখিনা বেগম তিন সন্তানের মা। তার স্বামী রিকশাচালক। এবছর ঈদ নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তিনি। কারণ তার সন্তানদের ঈদে পোশাক কেনার জন্য হাতে টাকা ছিলো না। পরে  শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নতুন পোশাক পেয়ে চিন্তা মুক্ত হলেন।
সাত শিক্ষার্থীর এক উদ্যোক্তা মো. ইউসুফ বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। অনেক দিনের ইচ্ছা গরিব দুঃখীর জন্য কিছু একটা করার। হঠাৎ ১২ রমজানে মাথায় আসলো যাদের ঈদ আনন্দ করার মত কোনো সামর্থ্য নেই তাদের মুখে একটু হাসি ফুটাবো। কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বললাম। কেউ পাশে থাকার আশ্বাস দিলো। আবার কেউ কেউ অন্যরকম মন্তব্য করলো। তবে আমার মাথায় একটাই চিন্তা ছিলো, যে যাই বলুক ছোট করে হলেও কিছু একটা করব। যাই হোক আমরা সাত বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম। দিন ঠিক করলাম। ২৫ রমজান আমরা দুস্থদের মাঝে ঈদের নতুন জামা বিতরণ করব। আমরা সবাই যেহেতু শিক্ষাথী, সবার পক্ষে বেশি টাকা দেয়া সম্ভব নয়। যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততো টাকা ওঠালাম। সব মিলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ালো ১০ হাজার টাকা। ওটা দিয়ে ২৫ রমজানেই সকলে মিলে বের হলাম মার্কেটে। কিছু নতুন জামা কেনাকাটা করে  গেলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে দেখলাম অনেকে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিছু মানুষকে যার যার মত জামা কাপড় দিয়ে দিলাম। আশা ছিল বড় করে করবো কিন্তু সবার সাহায্য না পাওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। তবুও কিছু মানুষের ঈদ আনন্দে অংশ নিতে পারে ভাল লাগছে। অপর আরেক উদ্যোক্তা কলেজ শিক্ষার্থী ফাতেমা বলেন, খুব সামান্য আয়োজনে শিশুর সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে শুরু হয়েছে আমাদের এই কার্যক্রম। উপহার হিসেবে সামান্য হলেও শিশুদের মুখের হাসি আর ওদের প্রাপ্তির আনন্দই আমাদের কষ্টকর আয়োজনের স্বার্থকতা। কারণ আমাদের নিজস্ব সঞ্চয় থেকেই এই আয়োজন। রাসেল মোল্লা বলেন, সমাজের বিত্তবান মানুষ নিজ নিজ এলাকায় এমন আয়োজন করলে ছিন্নমূল, সুবিধা বঞ্চিত এসব শিশুও পাবে ঈদের আনন্দ, খুশিতে মেতে উঠতে পারবে প্রতিটি শিশু।

No comments

Powered by Blogger.