যত দ্রুত সম্ভব ইয়েমেনে যুদ্ধ অবসানের জন্য ইরানের আহ্বান

গত চার বছর ধরে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে নিষ্ফল যুদ্ধ ও ভয়াবহ আগ্রাসন চলে আসছে। এমন সময় এ যুদ্ধ পঞ্চম বছরে গড়াল যখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, দুই কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। এ ছাড়া, দেড় কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে এবং লাখ লাখ শিশু ক্ষুধার্ত। কোনো প্রাকৃতিক সংকট নয় বরং চার বছর ধরে চলা অব্যাহত যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতা এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর চার বছর পূর্তি উপলক্ষে ইয়েমেনে আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এ যুদ্ধ ও রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। আমেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরো কয়েকটি দেশের সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক আগ্রাসন শুরু করে এবং সেই সঙ্গে দেশটির স্থল, নৌ ও আকাশ পথ অবরুদ্ধ করে রাখে। ইয়েমেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরব ও তার ত্রিদের আগ্রাসন শুরুর পর এ পর্যন্ত ১২ হাজার ইয়েমেনি নিহত এবং প্রায় ২৬ হাজার আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে ছয় হাজার নারী ও শিশুও রয়েছে।
সৌদি আরব ইয়েমেন দখল এবং এই দেশটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার জন্য অসম যুদ্ধ শুরু করে। কিন্তু তারা যা আশা করেছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি বরং ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও গণকমিটির প্রতিরোধের মুখে তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মার্কিন সাময়িকী 'হিল'-এ ইয়েমেন সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সৌদি আরব ইয়েমেনে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। সৌদি আরব ইয়েমেনে এমন এক চোরাবালিতে আটকা পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পেতে হলে তাকে অবশ্যই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।"
ইয়েমেন সংকট সমাধানের জন্য ২০১৫ সালের এপ্রিলে ইরান চার দফা প্রস্তাব পেশ করে। এ প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ, মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, ইয়েমেনের সব পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু এবং জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে।
ইয়েমেনে যুদ্ধ অবসানের জন্য এ পর্যন্ত বেশ ক'বার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সুইডেনের স্টকহোমে ইয়েমেনের বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপের কথা উল্লেখ করা যায়। ওই সংলাপে সব পক্ষ হুদাইদা বন্দরে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, বন্দি বিনিময়, খাদ্য ও ওষুধসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য আকাশ পথ খুলে দেয়ার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু সৌদি আরব বারবার এই সমঝোতা লঙ্ঘন করছে।
যাইহোক, ইয়েমেন সংকট নিরসন ও সৌদি আগ্রাসন বন্ধের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে আরব দেশগুলোর স্বদিচ্ছা। ইরান মনে করে, একমাত্র রাজনৈতিক উপায়ে ইয়েমেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো যাবে। এ কারণে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে আবারো স্টকহোম সমঝোতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.