রাজনৈতিক বিরোধ, তবু তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু

ভারত ও পাকিস্তান। রাজনীতি, খেলাধুলা সহ সব ক্ষেত্রেই যেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুটি দেশ। কিন্তু এই দুটি দেশের দুই রাজনীতিক ও সাবেক ক্রিকেটারের মধ্যে রয়েছে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। তা নিয়ে বার বার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। আরো একবার তারা সংবাদ শিরোনামে উঠে এলেন। এরা হলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেট কিংবদন্তি ইমরান খান। অন্যজন হলেন ভারতের পাঞ্জাবের মন্ত্রী ও সাবেক ক্রিকেটার নভোজট সিং সিধু। ক্রিকেট মাঠে তারা ছিলেন একে অন্যের প্রতিপক্ষ।
কিন্তু দৃশ্যত এখন তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তারই নিদর্শন হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সিধু। অবশ্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইমরান খান। সিধুর সেই যোগ দেয়া নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে তোলপাড় হয়। সেই ইমরান খান আগামী ২৮ শে নভেম্বর কর্তারপুর সীমান্ত করিডোর উদ্বোধন করবেন। একে যুগান্তকারী এক অনুষ্ঠান হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নভোজত সিং সিধুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ইমরান খান। সেই আমন্ত্রণ গর্বের সঙ্গে গ্রহণও করেছেন সিধু। নিশ্চিত করেছেন যে, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ।
নভোজত সিং সিধু বলেছেন, ‘বাবা নানক আমাদের দুটি দেশকে একত্রিত হতে সহায়তা করছেন। কোটি কোটি মানুষের প্রার্থনা এখন সত্যি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে তিন মাস আগে। আমার বন্ধু (ইমরান খান) আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং অবশ্যই আমি তাতে যোগ দেব’। সিধু আরো বলেছেন, ইমরান খানের এই করিডোর উদ্বোধনের উদ্যোগ অবশ্যই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নত করবে এবং রক্তপাত বন্ধ হবে।
কর্তারপুর সীমান্ত করিডোরের পাকিস্তান অংশের উদ্বোধন করবেন ইমরান খান। এ উপলক্ষে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী আগেভাগেই নিশ্চিত করেছিলেন যে, নভোজত সিধু পাকিস্তান সফরে যাবেন। এটা হবে এ বছরে সিধুর দ্বিতীয়বার পাকিস্তান সফর।
উল্লেখ্য, ইমরান খানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যখন নভোজত সিং সিধু যোগ দিয়েছিলেন আগস্টে তখনই কর্তারপুরের বিষয়টি তাদের নজরে আসে। ওই সফরের সময় পাকিস্তানের  সেনা প্রধান কমর জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ ঘটনায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে সেই সমালোচনার কাছে মাথা নত করেন নি সিধু। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থণ করেছেন। বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তাকে বলেছেন, কর্তারপুর সাহিবে একটি করিডোর উন্মুক্ত করা হতে পারে।
পাকিস্তানের এমন উদ্যোগের জবাব দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। তারা বৃহস্পতিবার বলেছে, পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলা থেকে আন্তজাতিক সীমান্ত পর্যন্ত ওই করিডোরের উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ করবে তারা। এর ফলে ভারতীয় তীর্থযাত্রীরা পাকিস্তানের কর্তারপুরে অবস্থিত গুরুদ্বার দরবার সাহিব সফরে যেতে পারবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে শুক্রবার চিঠি লিখেছেন ক্রিকেটার কাম রাজনীতিক নভোজত সিং সিধু। তাতে তিনি বলেছেন, এই পথে যেয়ে এ অঞ্চলে বিশ্বাস ও ভালবাসার একটি নতুন অধ্যায় রচনা করা হচ্ছে। আমি প্রার্থনা করি এবং প্রত্যাশা করি এই উদ্যোগ অপরিহার্য ও ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। সম্পর্ক উন্নত হবে। এতে সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচিত হবে। শত্রুতা নিঃশ্বেষ হবে।
সিধু একজন শিখ ধর্মাবলম্বী হিসেবে এমন উদ্যোগের ভীষণ প্রশংসা করেন। কারণ, ওই করিডোরটি উন্মুক্ত করার জন্য সারাবিশ্বের শিখ সম্প্রদায়ের দাবি ছিল। আর এ উদ্যোগ নেয়ায় শিখ তীর্থযাত্রীদের মাঝে নতুন আশার আলো এনে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.