যেমন করে জৌলুস হারান পতিতারা

প্যারিসে পা রাখার পর নাইজেরিয়ান যুবতী নাদেজে’কে বাধ্য হয়ে দেহব্যবসা করতে হয়। প্রায় এক বছর শরীরের ওপর দিয়ে যেন ঝড় যেতে থাকে। তারই এক পর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন এক যুবক। তারা সিদ্ধান্ত নেন গর্ভস্থ বাচ্চাটিকে রাখবেন। আইনজীবি ইয়েহুদি পেলোসি বলেন, যখন কোনো যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তখন তিনি এই চক্রের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। তারা তাদের গর্ভস্থ বাচ্চাকে একটু উন্নত জীবন দেয়ার জন্য এ পথ বেছে নেন। এক্ষেত্রে তাদের সামনে দুটি সুযোগ থাকে।
তাহলোÑ ১. বাচ্চাটিকে রেখে দেয়া না হয় ২. কোনোদিন দেশে ফিরে পরিবারের সঙ্গে একদিন মিলিত হবেন এমন আশা নিয়ে ঝুলে থাকা। তবে বেশির ভাগ যুবতী তার বাচ্চাকে আঁকড়ে থাকাকেই বেছে নেন।
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সত্ত্বেও নাদেজে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন। তবে তা বেশিদিন পারেন নি। শরীর তার সহায় ছিল না। এক পর্যায়ে তার ‘ম্যাডাম’কে অর্থ দেয়া বন্ধ করে দেন। নাদেজে বলেন, আমি কঠিন এক সময় পাড় করছিলাম। আমার সামনে ছিল মৃত্যু না হয় মনে হচ্ছিল পাগল হয়ে যাবো। কখনো ভাবছিলাম আমার কি আবার রাস্তায় ফিরে যাওয়া উচিত? আবারও পুরনো পেশার কাজ করে যাওয়া উচিত? বাচ্চাটাকে কি গর্ভপাত করিয়ে ফেলে দেয়া উচিত?
কিন্তু সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন নাদেজে। তিনি ওই চক্রের হাত থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। ফ্রান্সে এখনও এ নেটওয়ার্কের দেহব্যবসা টিকে আছে। একজন আইনজীবির সহায়তায় নাদেজে আশ্রয় পেয়েছেন ফ্রান্সে। যদি তার মতো কোনো নারী প্রমাণ করতে পারেন যে, তাকে পাচার করে নেয়া হয়েছে, তাদেরকে নির্যাতন করা হচ্ছে বা হয়েছে, এখন তারা যৌন ব্যবসার ওই চক্র থেকে ফিরে এসেছেন, তাহলে এমন নারীকে ফ্রান্সে আশ্রয় দেয়া হয়।
ওদিকে নাইজেরিয়ায় নাদেজের পরিবারকে প্রতিদিনই হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাই তিনি আর কখনো দেশে ফেরার কথা ভাবেন না। নাদেজে ফ্রান্সে অবস্থান সম্পর্কে বলেন, এটাই আমার কাছে এখন একমাত্র নিরাপদ স্থান। ওই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা আমার জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সিদ্ধান্ত।
কিন্তু নাদেজের মনের ভিতর বড় একটি ক্ষত রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন আমি আর সুন্দরী নই। আমার যেটুকু জৌলুস তা কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমি তো বলেছি, মাত্র ১৫ বছর বয়সে ধর্ষণ করা হয়েছে আমাকে। আর ভাবুন ইউরোপে এসে প্রতি রাতে ১০ জন পুরুষের মনোরঞ্জনের কথা! এভাবে একজন নারীর কি বেঁচে থাকার কথা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, ১৯৮০র দশকের শেষের দিকে নাইজেরিয়ার নারীদেরকে দেহব্যবসার জন্য পাচার শুরু হয়। তাদেরকে পাচার করে পাঠানো হতে থাকে ইতালিতে। একবার সেখানে পৌঁছার পর তাদেরকে জোর করে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করা হয়। এরপর তারা যখন দেশে ফিরে যান, সেখানে গিয়েই তারা প্রথম প্রজন্মের ম্যাডাম হয়ে ওঠেন। পর্যায়ক্রমে তারা অন্য যুবতীদেরকে একই পথে প্রলুব্ধ করেন এবং একবার দেশের বাইরে পাঠাতে পারলে তাদেরকে দিয়ে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করেন।
আউক্স ক্যাপটিফস, লা লিবারেশন নামের একটি এনজিওর সঙ্গে কাজ করেন আউরেলি জঁনার্ড। তারা কাজ করেন বোইস ডি ভিন্সনেস ও প্যারিসের অন্যান্য স্থানের পতিতাদের নিয়ে। তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে থাকে এ এনজিও। এ বিষয়ে আউরেলি জঁনার্ড বলেছেন, এই দেহব্যবসার নেটওয়ার্কে জড়িত রয়েছে পুরুষরাও। প্যারিসভিত্তিক এমনই একটি নেটওয়ার্ক অথেনটিক সিস্টারস-এর প্রধান হ্যাপি আয়েনোমা ওরফে মামা অ্যালিসিয়াকে তার স্বামী হিলারির সঙ্গে মে মাসে জেল দেয়া হয়। তাদের দু’জনকেই ১০ বছর জেল দেয়া হয়েছে। অভিযোগ, তারা মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত। তাদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল ১৫ জন। এই চক্রটি প্রায় ৫০ জন যুবতীকে পাচার করেছে।

No comments

Powered by Blogger.