কিডনি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসে ব্যাপক অনিয়ম by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

রাজধানীর সরকারি জাতীয় ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি  হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে একটি ডায়ালাইজার ব্যবহার হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ বার। আবার ডায়ালাইসিস করতে যে ফ্লুইড ব্যবহার করা হয় তা ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডের বয়রা ও নার্সরা হাসপাতালে বসেই তৈরি করে থাকেন  বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডায়ালাইসিস নিতে আসা রোগীরা ১৩ই সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন ডায়ালাইসিসের নানা অনিয়ম নিয়ে। রোগীরা লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে গেলেও পরিচালক বা তার পক্ষে কেউ এ অভিযোগ গ্রহণ করেননি। পরে রোগী ও অভিভাবকরা একসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গিয়ে তাদের লিখিত অভিযোগ দিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন রোগীরা।
অভিযোগকারী রোগীরা হচ্ছেন- নুর বানু (আইডি ৪৮৯), মোছা: আফলাতুন নেছা (আইডি ৮০), প্রদীপ কুমার দেব (আইডি ১৩৯), নাজমা আক্তার (আইডি ১২০), খায়রুন নেছা (৫৫০), একেএম মুসা (আইডি ৫৫৮) প্রমুখ।
রোগীরা জানিয়েছেন, সরকারি কিডনি হাসপাতালে সেন্ডর নামক একটি প্রতিষ্ঠান ডায়ালাইসিস করে থাকে সরকারি অনুমতি নিয়ে। কিন্তু তারা যথাযথভাবে ডায়ালাইসিস করছে না। দীর্ঘদিন থেকে এটা নিয়ে ডায়ালাইসিসের রোগীরা ক্ষুব্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে সবাই মিলে অভিযোগ করেন। এর আগে গত বছরও একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে এটা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল।
রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, বিদেশে তো বটেই, বাংলাদেশের সব ডায়ালাইসিস সেন্টারে একটি ডায়ালাইজার নিয়ে মাত্র একবারই ডায়ালাইসিস করা হয়ে থাকে। ডায়ালাইজারের ভেতরে যে নরম টিস্যু ব্যবহার করা হয় রক্তের বর্জ্য আটকে দেয়ার উদ্দেশ্যে একবার ব্যবহারের পর এই টিস্যুগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
পরের বার একই ডায়ালাইজার দিয়ে ডায়ালাইসিস করলে তা রক্তের বর্জ্য পুরোপুরি পরিষ্কার করে না। অন্যান্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে কোনো কিডনি রোগী সপ্তাহে তিন বার ডায়ালাইসিস করে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারলেও কিডনি হাসপাতালে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে রোগীরা নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। জানা গেছে, এক একজন কিডনি বিকল রোগীর একেক ধরনের ডায়ালাইজার লাগে। কিন্তু এ হাসপাতালে সবার জন্য একই রকম ডায়ালাইজার ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।
ডায়ালাইসিসের ফ্লুইড ওষুধ কোম্পানিগুলো বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করে থাকে। কিন্তু কিডনি হাসপাতালে সেন্ডর কোম্পানি তার বয়দের দিয়ে হাসপাতালেই ফ্লুইড তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন রোগীরা। বিশ্বের অন্যান্য দেশে তো এরকম কোনো নজির নেই- বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি ডায়ালাইসিস সেন্টারও করে না। কিন্তু কিডনি হাসপাতালে একটি কনটেইনার বার বার ব্যবহার করছে ফ্লুইড উৎপাদনে। ডায়ালাইসিসের ফ্লুইড অনেক রকম রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। এতে জড়িত থাকেন বিশেষজ্ঞ কেমিস্টরা।
কিন্তু কিডনি হাসপাতালে ফ্লুইড উৎপাদনে কোনো বিশেষজ্ঞ কেমিস্টের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে না। রোগীরা বলছেন, এই ফ্লুইড উৎপাদনে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরেরও অনুমতি নেই কিংবা ওষুধ প্রশাসনের মান নিয়ন্ত্রণ অথবা নিয়মও মানা হয় না। তারা আরো বলেন, এখানে নার্স ব্রাদার স্টাফদের দুর্ব্যবহার চরম পর্যায়ে  পৌঁছেছে। তাদের আচরণের প্রতিবাদ করলে হুমকি দেন ডায়ালাইসিস সিডিউল বাতিল করে দেবো- ইত্যাদি।
এ বিষয়ে জাতীয় ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের  পরিচালক অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেলিনের সঙ্গে কয়েকবার মোবাইল এবং ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও  পাওয়া যায়নি। ফোন রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয় না। এছাড়া ক্ষুদে বার্তা দেয়া হলেও উত্তর মেলেনি।

No comments

Powered by Blogger.