যেভাবে রাজনীতিতে জড়ালেন ডা. হাবিবে মিল্লাত by মো. জহুরুল ইসলাম জহির

ডা. হাবিবে মিল্লাত। একাধারে চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ। দায়িত্ব পালন করছেন সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্যের। চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চ ডিগ্রিধারী এই কার্ডিয়াক সার্জন রাজনীতিতে নেমেই সবার নজর কাড়েন। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস। নদীভাঙন-পীড়িত সিরাজগঞ্জবাসীর দুঃখ ঘুচাতে বাস্তবায়ন করছেন মেগা প্রকল্প। তার নির্বাচনী এলাকার প্রায় সব ভাঙাচোরা রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নতুন করে তৈরি করেছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নে নির্মাণ করেছেন স্কুল-কলেজ-মাদরাসা। তরুণ এই চিকিৎসক ১৯৬৬ সালের ১৫ই জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ওই কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে রয়েল কলেজ অব সার্জন্স অব (এডিনবরা) থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি নেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও বেলজিয়ামের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কার্ডিওথোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জারির ওপর দীর্ঘ ১২ বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে কর্মজীবন শুরু করেন। যোগ দেন কার্ডিওথোরাসিক সার্জন হিসেবে। ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের শাসনামলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। ওই সময় বর্তমান এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক টিমের সর্বকনিষ্ট সদস্য ছিলেন হাবিবে মিল্লাত। একসময় মেধাবী এই চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। তখনই তাকে চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি রাজনীতিতে নেমে মানুষের সেবা করার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনিও রাজি হয়ে যান। তখন থেকেই তিনি অবহেলিত সিরাজগঞ্জবাসীর জন্য কাজ শুরু করেন। এরপর বারডেমে কিছুদিন চিকিৎসাসেবা দেন।
পরে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পেয়েই ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪১ একর জমির ওপর ইকোনোমিক জোন-১ নির্মাণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেন। এছাড়া ৪০০ একর জমির ওপর বিসিক শিল্প পার্ক নির্মাণে ৬২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এ দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে সিরাজগঞ্জের দৃশ্য। সিরাজগঞ্জকে নদীভাঙন থেকে রক্ষা করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। ভাঙনরোধে তৈরি করা হয়েছে ২৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রানীগ্রাম, চরমালশাপাড়া ও পাইকপাড়া ক্রসবার। এছাড়া ১১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাপিটাল পাইলট ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় নদী খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। ৫০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রসবার-৩ ও ক্রসবার-৪ এর মাথা সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
সবচেয়ে অবহেলিত ছিল কামারখন্দ উপজেলা। এই উপজেলাটির রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি শতভাগ বিদ্যুতায়ন করেছেন তিনি। কড্ডা থেকে জামতৈল সড়ক, কোনাবাড়ী-পাইকোশা বাজার রাস্তা মেরামত, নান্দিনামধু-জারিলা রাস্তা, কামালিয়া-মুগবেলাই, পাইকোশা-বালিয়াকান্দাপাড়া রাস্তা, জামতৈল-কালীবাড়ী কুটিয়া চর, ভদ্রঘাট ইউজিআর ভায়া নান্দিনা কামালিয়া রাস্তা, দোগাছী-কালিবাড়ীহাট, সাঈদকান্দি-দোগাছি রাস্তা, কোনাবাড়ী-জামতৈল উল্লাপাড়া ইউজিআর, জামতৈল জিসি বলরামপুর জিসি ভায়া কর্ণসূতী, কালিয়া কান্দাপাড়া-কামারখন্দ-উল্লাপাড়া জিসি ভায়া বরধুল হাট পর্যন্ত, আলোকদিয়ার নিশিপাড়া-পাকুরিয়া রাস্তাসহ অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পুনঃনির্মাণ এবং মেরিন একাডেমি স্থাপনের মাধ্যমে জেলার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
কৃষকের দুর্ভোগ কমাতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৮,৫০০ জন কৃষককে ৫৯৭০ টন কৃষি সার বিতরণ, সহজ শর্তে কৃষকের ঋণ সুবিধা, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় ঋণ সুবিধা এবং মৎস্যচাষে উদ্বুদ্ধকরণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন তিনি। সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা ত্বরান্বিত করতে শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও ৩৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ ও সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং যমুনা পাড়ের ৩৩ লাখ মানুষ ও উত্তরবঙ্গের বিশাল জনগোষ্ঠীর হৃদরোগ চিকিৎসা সুবিধার জন্য সিরাজগঞ্জ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল স্থাপন করেন। তিনি নিয়োজিত রয়েছেন বিভিন্ন সেবামূলক কাজেও। বাংলাদেশ  রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরি সদস্য তিনি। এছাড়া লায়ন্স ক্লাব অব ভেরিতাসের সভাপতি এবং ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যালস লি.র চেয়ারম্যান।
তিনি ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের শুভেচ্ছা দূত, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বাংলাদেশ চিকিৎসা পরিষদ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব  রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মরহুম পিতা ডা. ছানাউল্লাহ আনছারীর স্মরণে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘আনছারী ফাউন্ডেশন’ গঠন করেন। সেখান থেকে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া দেশি-বিদেশি অসংখ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত। ব্যক্তিগত জীবনে এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কন্যা মিসেস শারিতা মিল্লাতের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনিও ভেরিতাস ফার্মাসিউটিক্যাল লি.র ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের দুই সন্তান শাহরিয়ান এবং ফেবিয়ান যুক্তরাজ্যে অধ্যয়নরত।

No comments

Powered by Blogger.