বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না -প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। শিক্ষার্থীদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে এবং কোনোভাবেই কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনেই সবাইকে চলতে হবে। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের ৭ই মার্চ ভবনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের স্মরণে ঢাবি’র এই ছাত্রী হলের ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত। এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের উপার্জনে চলবে তারও বিধান রয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানকার যারা শিক্ষার্থী তাদের এটা ভাবা উচিত যে, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম খরচে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশে দেয়া হয়ে থাকে। প্রায় শতভাগ খরচই কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। এটা পৃথিবীর কোনো দেশে রয়েছে বলে আমার জানা নেই। কাজেই এর মর্যাদাও শিক্ষার্থীদের দিতে হবে এবং বিশৃঙ্খলা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। সবাইকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে সেভাবেই আচরণ করতে হবে। এটাই জাতি আশা করে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই সবদিক থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবনমান উন্নত হোক, তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন, রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ড. জিনাত হুদাও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় অধ্যাপকবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত ৭ই মার্চ ভবনের ফলক উন্মোচন করেন। তিনি ওই ভবনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতি এবং ৭ই মার্চ জাদুঘরও পরিদর্শন করেন এবং রক্ষিত বইয়ে স্বাক্ষর করেন। প্রায় ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এক হাজার ছাত্রীর আবাসন সুবিধা সংবলিত এই ভবনটিতে প্রশাসনিক এবং সার্ভিস ব্লক নামে আরো দুটি ব্লক রয়েছে। ৭ই মার্চ জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের দুর্লভ আলোকচিত্র এবং তথ্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষায় যে খরচ আমরা করি সেটা ব্যয় নয়, আমার দৃষ্টিতে বিনিয়োগ। যা আমাদের দেশ ও জাতি গঠনে কাজে লাগবে এবং এ থেকে দেশের মানুষ উপকৃত হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থী নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন ‘আর সেই শিক্ষাটা শুধু কেতাবী শিক্ষা নয়, জীবনমানের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা দিতে হবে। আর শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষাটা গ্রহণ করবে তার সুফল যেন আমাদের সাধারণ মানুষ পায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েকে এখন থেকেই শিক্ষা দেয়া উচিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে। এ ব্যাপারে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। যে জায়গাটায় থাকবো, তার রক্ষণাবেক্ষণ করা সবার দায়িত্ব। তিনি এ সময় বিদ্যুৎ, পানিসহ সরকারি সেবাসমূহের বিষয়ে সাশ্রয়ী হবার জন্যও সবাইকে পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। সেভাবে আমরা শিক্ষাকেও বহুমুখী করার চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষাকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বিনা বেতন পড়া ও বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। প্রথম শ্রেণি থেকে ডিগ্রি ও পিএইচডি পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিটা জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। ঘরের ভাত খেয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারে, সে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা উচ্চ শিক্ষার প্রতি জোর দিচ্ছি। শিক্ষাকে বহুমুখী ও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছি। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিক্ষা অর্জনের পর বিভিন্ন দেশে গিয়ে আরো উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তিনি বলেন, এজন্য দেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলাম। এবার আরো দুটি করেছি রাজশাহী ও চট্টগ্রামে। সিলেটেও একটা করে দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে আমরা প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব। তিনি বলেন, দেশে একটি মাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন সরকারি-বেসরকারি খাতে অনেক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন থাকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এবং তিনি নিজে ছাড়াও তার ভাই শেখ কামাল ও পরিবারের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ ফজলুল করিম সেলিমও এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েছেন। কেবল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বা তার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নয়, বাঙালি জাতির মুক্তির প্রতিটি সংগ্রামের সূতিকাগার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ও বাঙালি জাতির অর্জনে যত সংগ্রাম হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার সূতিকাগার হিসেবেই আন্দোলনের সূচনা করে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা আমাদের কাছে অন্যরকম।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকার ১০টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আটটির কাজ শেষ হয়েছে, চলছে আরো দুটির কাজ।
১৯৭১ ফুট আলপনা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যাম্পাসে আগমন উপলক্ষে ১৯৭১ ফুট দীর্ঘ ও ৭ ফুট চওড়া আলপনা আঁকেন বিশ্ববিদ্যাল?য়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বি?কেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এই আলপনা আঁকা হয়।  শত শত শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন। ‘স?ম্মি?লিত সংসদের শিক্ষার্থী’ ব্যানারে এই আলপনা আঁকায় সহযোগিতা করেছে ছাত্রলীগ। আলপনা আঁকার বিষ?য়ে ছাত্রলী?গের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হু?সেইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের শিক্ষাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক উন্নয়নে তার অবদান অসামান্য। তার অনন্য স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আলপনা এঁকেছেন।

No comments

Powered by Blogger.