আমাকে ইমপিচ করলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে

অভিশংসিত হতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এতদিন অনেক পর্যবেক্ষকের মুখে এ কথা শোনা গেছে বহুবার। কিন্তু খোদ ট্রাম্পই এবার এ প্রসঙ্গে কথা বললেন। অবশ্য তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তাকে অভিশংসিত করলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। নিজের প্রিয় চ্যানেল ফক্স নিউজের অনুষ্ঠান ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বলেন ট্রাম্প। তার মতে, তাকে অভিশংসিত করলে ধসে পড়বে পুঁজিবাজার। এমনকি সবাই খুব দরিদ্র হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার এই মন্তব্য এমন সময় এলো যখন তার দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন। তিনি এ-ও দাবি করেছেন যে, তিনি ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ীই এসব করেছেন।
ট্রাম্প নিজের অভিশংসিত হওয়ার কথা খুব কমই বলেছেন। তবে তার প্রতিপক্ষ তাকে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে অভিশংসনের চেষ্টা করবেন এমন সম্ভাবনা কম।
অভিশংসন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না যে লোক অসাধারণ কাজ করে দেখিয়েছে তাকে কীভাবে আপনি অভিশংসিত করবেন। আমি বলি কি, আমি যদি কখনো অভিশংসিত হইও, পুরো পুঁজিবাজার ধসে পড়বে। আমি মনে করি সবাই খুব দরিদ্র হয়ে যাবে।’
খবরে বলা হয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় দুই নারীকে চুপ রাখতে ট্রাম্পের হয়ে অর্থ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন মাইকেল কোহেন। এদের একজন পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েল ও সাবেক প্লেবয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডগাল। উভয়ই দাবি করেন, তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল ট্রাম্পের।
মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ও প্রেসিডেন্টের বিচার বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ তদন্তে কাজ করছেন রবার্ট মুলার। তার কৌঁসুলি দলই ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী কোহেনকে পক্ষত্যাগে রাজি করায়। কোহেন বিচারকদের শপথ গ্রহণপূর্বক বলেছেন, তিনি ওই দুই নারীকে অর্থ দিয়েছেন ট্রাম্পের নির্দেশনায়। এই অর্থ প্রদানের প্রধান কারণ ছিল নির্বাচন প্রভাবিত করা। সেই হিসাবে দুই নারীকে অর্থ প্রদান নির্বাচনী ব্যয়ের আওতায় পড়ে। কিন্তু সমস্যা হলো- সেই অর্থ কোহেন প্রথমে নিজের পকেট থেকে দিয়েছেন। আর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নির্বাচনী তহবিলে ব্যক্তিগতভাবে যত অর্থ অনুদান দেয়া যায়, তার চেয়ে বেশি অর্থ কোহেন খরচ করেছেন। এ কারণেই নির্বাচনী তহবিলে অর্থ প্রদানের নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে মর্মে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
কিন্তু ট্রাম্প বলছেন, এতে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘিত হয়নি। তার মতে, ওই অর্থ তার নিজের পকেট থেকেই দেয়া। নির্বাচনী তহবিল থেকে নয়। তাছাড়া তিনি এই অর্থ দানের কথা আগে জানতে পারেননি। কিন্তু কোহেন নিজেই এক অডিও টেপ প্রকাশ করেন, যাতে দেখা যায় ট্রাম্প ও তিনি নির্বাচনের আগেই ওই অর্থ প্রদানের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প অবশ্য অভিযোগ করেছেন, কোহেন লঘু দণ্ড পেতেই গল্প বানিয়ে বলছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই অর্থ প্রদানের বিষয়টি কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি। কিন্তু এখানে বিবেচ্য বিষয় হলো, ট্রাম্প ওই অর্থ নিজের ব্যক্তিগত সুনাম রক্ষার জন্য দিয়েছিলেন, নাকি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে। দ্বিতীয়টি হলে এই অর্থ নির্বাচনী অনুদান হিসেবে বিবেচিত হবে।
যদি শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প এ কারণে বিচারের মুখোমুখি হনও, তাহলে প্রমাণিত হতে হবে যে তিনি নির্বাচনী কারণেই কোহেনকে অর্থ দিয়েছিলেন। তবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হওয়ায় কোনো সাধারণ আদালতে এই বিচার হবে না। হলেও তা অভিশংসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কংগ্রেসে হবে।
প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বিরোধিতা করলেন অ্যাটর্নি জেনারেল: এবার সরাসরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধিতা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। তাকে আক্রমণ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি যে মন্তব্য করেছেন তার জবাব দিয়েছেন সেশনস। ট্রাম্প বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর জেফ সেশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এর জবাবে জেফ সেশনস বলেছেন, তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের প্রধান। কোনো রাজনৈতিক চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। উল্লেখ্য, আইন মন্ত্রণালয়েল সমালোচনায় সম্প্রতি কণ্ঠ জোরালো করেছেন ট্রাম্প। বিশেষ করে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে যে তদন্ত হচ্ছে তা নিয়ে সেশনস যেভাবে ‘হ্যান্ডলিং’ করলেন তাতে অসন্তুষ্ট তিনি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন প্রথমদিকের সমর্থক ছিলেন সেশনস। নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ওই অভিযোগ তদন্ত থেকে আগেভাগেই সরে এসেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল সেশনস। উদ্দেশ্য বড় রকমের স্বার্থের সংঘাত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাই সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন। দায়িত্ব দিয়েছেন তার ডেপুটি রড রোজেনস্টেইনকে। এক্ষেত্রে জেফ সেশনসের সিদ্ধান্ত ও স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের তদন্তের অগ্রগতিতে মাঝে মাঝেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ট্রাম্প। এই ক্ষোভ আসছে টুইটারে আবার ব্যক্তিগতভাবেও তার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিচার ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন কিনা তাও ওই তদন্তে যাচাই করে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প বারবারই দাবি করে এসেছেন, তার নির্বাচনী প্রচারণা টিম ও রাশিয়া সরকারের মধ্যে কোনো সমঝোতা ছিল না। এ ছাড়া তিনি বিচার ব্যবস্থায় কোনো বাধা সৃষ্টি করেননি। ওদিকে সর্বশেষ আরো একটি ইঙ্গিত মিলেছে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন সিনেটে। ওই নির্বাচনের পরে যদি জেফ সেশনসকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরখাস্ত করেন তাহলে তাকে সমর্থন করবেন রিপাবলিকান দলের গুরুত্বপূর্ণ দু’জন সিনেটর। তবে অন্য রিপাবলিকানরা বলেছেন, তারা মনে করেন সেশনসকে সরিয়ে দেয়া হবে একটি খারাপ কাজ। এক্ষেত্রে তারা জেফ সেশনসের পক্ষে থাকবেন।
জেফ সেশনস যা বলেন: এক বিবৃতিতে জেফ সেশনস বলেছেন, যেদিন আমি শপথ নিয়েছি সেদিন থেকেই আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। যতক্ষণ আমি এটর্নি জেনারেল আছি ততক্ষণ আইন মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো অন্যায্য প্রভাব মেনে নেবো না। আমি চাই উচ্চমানের মানদণ্ড বজায় রাখতে। সেজন্য যেখানেই সেটা করা হয় না, আমি সেখানেই পদক্ষেপ নিই। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারীদের তদন্তকারী ও প্রসিকিউটরদের চেয়ে আত্মনিবেদিত ও মেধাবী গ্রুপ আর কোনো দেশে নেই। তাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। আইনের শাসনে যেসব সফলতা আমরা পেয়েছি তার জন্য গর্বিত।

No comments

Powered by Blogger.