বন্ধ হলো ২০২ মাদরাসা, তালিকায় আরো আড়াই শতাধিক by নূর মোহাম্মদ

পাবলিক পরীক্ষায় কোনো শিক্ষার্থী অংশ না নেয়া এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ২০২টি মাদরাসা। গতকাল এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল, মাদরাসার কোড বা অনলাইন পাসওয়ার্ড,   ইআইআইএন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সহকারী সচিব মো. আব্দুল খালেক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এসব মাদরাসা বন্ধ করা হয়েছে। এ মাদরাসাগুলোকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সময়ে জানানোর কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।   
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই অভিযোগে বন্ধের তালিকায় আছে আরো আড়াই শতাধিক মাদরাসা। সরকারের এমন পদক্ষেপে বন্ধ আতঙ্ক বিরাজ করছে ভুঁইফোঁড় মাদরাসাগুলোতে। একই অভিযোগে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ অভিযান সব স্তরের প্রতিষ্ঠানের জন্য সমানভাবে অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মো. আলমগীর মানবজমিনকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী থাকবে না আর বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান চলবে তা হতে পারে না। এ অভিযান আরো চলতে থাকবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর শূন্য পাস, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, শিক্ষক ও ছাত্র নেই, এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। এতে বলা হয়, এমপিওভুক্ত মাদরাসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয় আর নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা বোর্ড বা অধিদপ্তর। এরপর এসব মাদরাসার খোঁজ পায় মাদরাসা বোর্ড। বিভিন্ন সময় এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিল ও অনলাইন পাসওয়ার্ড ইআইআইএন কেন বন্ধ করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। তবে এসব মাদরাসার তালিকা দিতে বারবার গড়িমসি করে মাদরাসা বোর্ড। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের তাগিদে তা দিতে বাধ্য হয় বোর্ড। অভিযোগ রয়েছে, কেন তাদের শোকজ করা হচ্ছে তার জবাব চাওয়া হয় মাদরাসা বোর্ডের কাছে। এ চিঠির ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত দেয়নি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।
বন্ধ হওয়া মাদরাসাগুলো ময়মনসিংহ, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর ও কুষ্টিয়ার তিনটি করে প্রতিষ্ঠান; সিলেট, বরিশাল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, মাগুরা ও কুড়িগ্রামের দুটি করে, নরসিংদী, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, ভোলা, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট, বাগেরহাট, নীলফামারী, ফেনী, পিরোজপুর, বরগুনা, বি. বাড়িয়া, খুলনা, লালমনিরহাট ও রাজবাড়ীর একটি করে প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অন্যদিকে দাখিল পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস না করায় আরো ৯৬টি মাদরাসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে গত মে মাসে। নোটিশে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের দাখিল পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার শূন্য হওয়ায় মাদরাসাগুলোর প্রাথমিক পাঠদান স্থগিত, একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলসহ এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইআইআইএন) কেন বন্ধ করা হবে না, তা চিঠি পাওয়ার ২১ দিনের (কর্মদিবস) মধ্যে জানাতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানও কারণ দর্শানোর জবাব দিয়েছে। যার বেশির ভাগই সন্তোষজনক না। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আরো ১৮৯টি মাদরাসাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানও শূন্য শিক্ষার্থী ও পাস, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকাসহ এমপিও ও পাঠদানের অনুমতির শর্ত পূরণ করছে না। তবে এ ১৮৯টির মধ্যে ৯৬টি মাদরাসার বেশ কয়েকটি রয়েছে। সব মিলিয়ে আরো আড়াই শতাধিক মাদরাসা রয়েছে বন্ধের তালিকায়।

No comments

Powered by Blogger.