রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন

কেবল মানবিক সহায়তা দিয়ে নয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রেসিডেন্ট পিটার মাউরি। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরের সমাপনী সংবাদ সম্মেলনে গতকাল ঢাকায় তিনি এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশে আসার আগে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সফর করেন। আইসিআরসি’র ঢাকা কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিটার মাউরি বলেন, মানবিক সহায়তাই কেবল সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এ সংকট সমাধানে বিশেষ করে বাস্তুচ্যুত যারা তাদের বসতভিটা, ক্ষেতখামার সহায়-সম্পদ সবকিছু ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশে আসার পর মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এবং সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক সমাধান, পরিবেশগতভাবে টেকসই অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকারের প্রয়োজন। মাউরি বলেন- বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুই  দেশ সফর করে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন, এ সংকট সমাধানে দুই  দেশেরই আন্তরিকতা রয়েছে। তিনি বলেন- আজ সর্বজন স্বীকৃত যে, এখানে একটি গুরুতর সমস্যা রয়েছে এবং অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। এতে কারো দ্বিমত বা ভিন্নমত নেই। তার মতে, এই আন্তরিকতার বাস্তবায়নে ‘দায়িত্বশীল’ নেতৃত্ব বা ভূমিকা প্রয়োজন।
মিয়ানমার সফরের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাখাইনে তিনি একটি গ্রাম দেখে এসেছেন, যেখানে তিন-চতুর্থাংশ মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। মাউরি বলেন, আমি এখানে কার কী দোষ, তা বলতে আসিনি। আমি শুধু বলতে চাই- এই সংকট সমাধানের উদ্যোগে কারো কোনো কমতি দেখিনি। দুই  দেশের সরকারই তাদের তরফ  থেকে সংকট সমাধানের যথেষ্ট চেষ্টা করছে এবং তাদের সদিচ্ছা নিয়ে আমি নিশ্চিত। আইসিআরসি  প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, একমাত্র মানবিক সহায়তা এই সংকটের সমাধান দিতে পারবে না। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন তাদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক সমাধান। টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং  আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকার বজায় রাখার অঙ্গীকারই কেবল স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মুরার বলেন, মিয়ানমারে সমপ্রদায়ের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সম্পৃক্ততার জন্য আমরা প্রস্তুত। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয় দেশের এই মানবিক সংকট  মোকাবিলায় আইসিআরসি তাদের যথাযথ সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি। মাউরির মতে, প্রত্যাবাসনের শর্তগুলো শুধু মানবিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজন নয়। চলাফেরার স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, রাখাইনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বাজারে প্রবেশাধিকারের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্যও এটি প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফেরত যাওয়া  রোহিঙ্গাদের মাঝে তাদের দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা। আইসিআরসি প্রেসিডেন্ট জানান- মিয়ানমার সফরকালে তিনি প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি, জেনারেল কমান্ডার-ইন-চিফ অব ডিফেন্স সার্ভিসেস মিন অং হ্লায়িংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বাংলাদেশে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা কফি আনান কমিশনের চমৎকার সুপারিশ  দেখেছি। এটি সমর্থন করি। মানবিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের দুঃখকষ্ট কমানোর জন্য যথাসাধ্য করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সকল আলোচনা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের অবস্থার খুব সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। আইসিআরসি প্রেসিডেন্ট জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘবে টেকসই সমাধানের জন্য মানবাধিকার, উন্নয়ন সংস্থা এবং কর্তৃপক্ষের জরুরি অগ্রগতির ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন- আমাদের সকলকে একযোগে সর্বোত্তম প্রচেষ্টা চালিয়ে এই সংকটময় পরিস্থিতি দূর করতে হবে। এর পেছনের কারণগুলো সমাধান করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে  রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আইসিআরসি বিভিন্ন এলাকায় খাদ্য সরবরাহ দ্বিগুণ করেছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আইসিআরসি’র বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রধান ইখতিয়ার আসলানোভসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুরো সংবাদ সম্মেলনের সচিত্র বক্তব্য আইসিআরসি প্রেসিডেন্ট তার টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ারও করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.