জমে উঠেছে ফুটপাথে ঈদ কেনাকাটা by মরিয়ম চম্পা

ঈদুল ফিতরের বাকি আর ক’দিন। ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য কিছু একটা কিনতে হবে। প্রিয়জনকে দিতে হবে সাধ্যমতো উপহার। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হয়ে উঠছে কেনাকাটা। আর ঈদের কেনাকাটায় স্বল্প আয়ের মানুষদের ভরসা ফুটপাথের দোকান। তেমনি মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তদেরও অন্যতম ভরসা ফুটপাথের দোকানগুলো। ঈদকে কেন্দ্র ছুটির দিনে ফুটপাথের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন বেশিরভাগ মানুষ। আর ঈদ যত কাছাকাছি চলে আসছে ভিড় ততই বাড়ছে। তেমনি রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ছাপিয়ে অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েছে মৌসুমি হকারদের ঈদ আয়োজন।
ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর ফুটপাথ যেন একেকটি হাট। যদিও এখানে ক্রেতা আকর্ষণে নেই র‌্যাফেল ড্রর ব্যবস্থা। তবে তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসা এই অস্থায়ী দোকানগুলো। অপেক্ষাকৃত কম দামে ভালো জিনিস কিনতে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, গৃহিণী, শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী মানুষেরা আসছেন এসব দোকানে। রাজধানীর নিউমার্কেট, ফার্মগেট, মতিঝিল, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, মালিবাগ মৌচাক, গুলিস্তানসহ রাজধানীর বেশকিছু এলাকা ঘুরে ফুটপাথের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় দেখা যায়, ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের সামনে থেকে শুরু করে তেজগাঁও কলেজ গলির শেষ মাথা পর্যন্ত ফুটপাথের দোকানগুলোতে ভিড়। ওয়ান পিস,  থ্রিপিস, ওড়না, স্যালোয়ার, এ্যান্টিকের অর্নামেন্টের দোকান, ব্যাগ, জুতা, কসমেটিকস থেকে শুরু করে নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পসরা বসেছে ফুটপাথে। সর্বত্রই মানুষের  উপচেপড়া ভিড়। নারায়ণগঞ্জ থেকে পুরো পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছেন চাঁদনী রহমান ও তার স্বামী মো. সাগর হোসেন। চাঁদনী বলেন, এ বছর আমরা নতুন বিয়ে করেছি। শ্বশুরবাড়িতে আমার প্রথম ঈদ। আমার স্বামীর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই ঈদের আগে শপিং করার আর সময় পাবো না। তাছাড়া যাত্রাবাড়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জ যেতে কয়েক ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হবে। তাই খুব সকালে কেনাকাটা করতে এসেছি। তিনি জানান, রাজধানীর একটি নামকরা শপিং কমপ্লেক্স থেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করলেও আরো কিছু কেনার জন্য ফুটপাথে চলে এসছেন। চাঁদনী বলেন, ফুটপাথের দোকানগুলোতে সবই সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়।
প্রতি বছরের মতো এবছর নিউমার্কেটের ফুটপাথ হকারশূন্য হলেও ইডেন কলেজের সামনে রীতিমতো ঈদের হাট বসেছে। জুতা সেলাই থেকে শুরু করে সব উপকরণই আছে এখানে। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা মজা করে এই এলাকার নাম দিয়েছেন ‘ইডেন প্লাজা’। এখানে ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যামফোর্ড, ইউল্যাব, সিটি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেনাকাটা করতে আসেন। মেয়েদের পোশাকসামগ্রী শাড়ি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, থান কাপড়ের দোকান, জুয়েলারি শপ, ব্যাগ, স্যান্ডেল-জুতা, শিশুদের খেলনাসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন পণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পণ্যের সমাহার। ইডেন প্লাজার দোকানিরা জানান, এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে জর্জেটের ওপর কাজ করা থ্রি-পিস, হাতাকাটা লং গাউন, হাতাওয়ালা ফ্লোর টাচ গাউন, ভারতীয় বুটিকস আইটেমের থ্রি-পিস, লন, ভয়েল থ্রি-পিস। এ ছাড়া দেশীয় থ্রি পিসের কাপড়ের মধ্যে প্রিন্টের থ্রি-পিস, ব্লক ও বাটিকের বিভিন্ন ডিজাইন করা থ্রি পিস। পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার, গহনা, স্যান্ডেল ও ব্যাগ, সেই সাথে প্রসাধনীও বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেটের দুই নং গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দোকানের সামনের ফুটপাথের দোকানগুলোতে জুতা থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকস, কী নেই এখানে! বরাবরই নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাথগুলো থাকে লোকে লোকারণ্য। ঈদ উপলক্ষে তা আরো অনেক বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথ ঘুরে দেখা গেছে, ছেলেদের শার্ট মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা করে, জিনস প্যান্ট ৩৫০ থেকে শুরু ১ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, এছাড়া টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, মেয়েদের থ্রি-পিস ৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, শাড়ি ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা, শিশুদের জিনস প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.