দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন মেরুকরণ

উপমহাদেশের আঞ্চলিক রাজনীতি ও নিরাপত্তা কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। এ অঞ্চলের দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের শত্রু-মিত্রের হিসাব পাল্টে যাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছেন- সন্ত্রাসবাদ নয়, বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রধান বিবেচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলপত্র প্রকাশকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। ম্যাটিস বলেন, চীন ও রাশিয়ার মতো সংশোধনবাদী শক্তিগুলো থেকে আমরা এখন ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখোমুখি হচ্ছি।
এসব দেশ তাদের কর্তৃত্ববাদী ছাঁচের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি বিশ্ব গড়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশলের প্রভাব এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর ওপর পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক যতটা তিক্ত রূপ নিচ্ছে, ততটাই নতুন মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। স্পষ্টতই পাকিস্তান এবং চীন ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। অপর দিকে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির নেতৃস্থানীয় ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে ভারতের সাথে শুধু পাকিস্তান নয়, চীন ও রাশিয়ার সম্পর্কের ওপরেও এর প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের এক সময়ের অতি ঘনিষ্ঠ মিত্র ও প্রধান অস্ত্রসরবরাহকারী দেশ ছিল রাশিয়া। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অপর দিকে, ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর বাইরে, দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর পরই দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মস্কোর ওপর নজরদারির জন্য ১৯৫০ সালে পাকিস্তানের পেশোয়ার বিমানঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি পায় যুক্তরাষ্ট্র। লাহোরে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা অফিস স্থাপনের অনুমতিও দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফরে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোল্ড ওয়ারের পুরো সময়ে পাকিস্তান সামরিক ও বেসামরিক বিপুল সাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আফগান যুদ্ধের পর, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর আবার পাকিস্তানের সামরিক গুরুত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরে মার্কিন ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে সে দেশে মার্কিনবিরোধী জনমত তীব্র হয়ে ওঠে। আফগানিস্তানে তালেবানরা নতুন করে সংগঠিত হতে থাকে। আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ী হওয়ার অনিশ্চয়তা যতটা বাড়ছে, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ততই অবনতি ঘটছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর দুই দেশের মিত্রতার সম্পর্ক দ্রুত বদলে যেতে থাকে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই কুজুগোতোভিচ শোয়গু পাকিস্তান সফর করেন। ৪৫ বছরের মধ্যে এটাই ছিল প্রথম কোনো রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ইসলামাবাদ সফর।
এ সময় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এ সফরের ফলাফল দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ২০১৫ সালের আগস্টে পাকিস্তান ২০টি রাশিয়ার এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার কেনার ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর ২০১৬ সালে পাকিস্তানে দুই দেশের যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে আরব সাগরে হয়েছে যৌথ নৌ-মহড়া। সামরিক সম্পর্কের বাইরে দুই দেশের মধ্যে একাধিক জ্বালানি সহযোগিতা ও পাইপলাইন নির্মাণের চুক্তিও হয়। রাশিয়ার একজন কূটনীতিক সম্প্রতি ইসলামাবাদে ইঙ্গিত দিয়েছেন, নিউক্লিয়ার্স সাপ্লায়ার্স গ্রুপে (এনএসজি) পাকিস্তানের সদস্য পদের জন্য রাশিয়া সমর্থন দিতে পারে। ভারত দীর্ঘ দিন ধরে এনএসজির সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করছে। চীন প্রবলভাবে এর বিরোধিতা করছে। ভারতের সদস্যপদের ব্যাপারে রাশিয়ার সমর্থন আছে বলে মনে করা হলেও পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে। রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার নেপথ্যে চীনের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। কারণ, চীনের সাথে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একাধিক চুক্তি রয়েছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ পরিকল্পনার অন্যতম সহযোগী দেশ পাকিস্তান। চীন ও রাশিয়ার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক যত ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, দেশটির ওপর মার্কিন চাপ ততই বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার নতুন বছরের শুরুর দিন পাকিস্তান নিয়ে এক টুইট বার্তা প্রকাশ করেছেন। এরপর দুই দেশের সম্পর্ক বেশ উত্তেজনায় রূপ নিয়েছে। ট্রাম্প তার টুইট বার্তায় বলেনÑ ‘যুক্তরাষ্ট্র বোকার মতোই পাকিস্তানকে গত ১৫ বছরে ৩৩ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা দিয়েছে। এর বিপরীতে তারা আমাদের মিথ্যা ও শঠতা ছাড়া কিছুই দেয়নি। তারা আমাদের নেতাদের বোকা ভাবছে।’ ট্রাম্পের অভিযোগÑ ‘আমরা আফগানিস্তানে যেসব সন্ত্রাসীকে তাড়া করছি, তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে পাকিস্তান। আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। আর না।’ ট্রাম্পের এ ঘোষণার পর পাকিস্তান কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘আমরা এমন একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন আফগান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পাকিস্তানের মাটিতেই যুদ্ধ শুরু হবে।’ তার দাবি, সেটাই যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া। তবে ইসলামাবাদ কখনো দেশের মাটিকে আফগান যুদ্ধের ময়দান হতে দেবে না।’ পাকিস্তান সংক্রান্ত নীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিবর্তন বা কঠোর অবস্থানের পেছনে আফগানিস্তানকে ঘিরে এ অঞ্চলে প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতাও অন্যতম কারণ। যেখানে চীন ও পাকিস্তানের সাথে রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আফগানিস্তানের বিভিন্ন ইস্যুতে চীন ও রাশিয়া বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি তালেবানদের সাথে বিভিন্ন ধরনের আলোচনায় অংশ নিয়েছেন চীনা কর্মকর্তারা। ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে মতবিরোধ দূর করতে চীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। আফগানিস্তানে চীনা প্রভাব নিয়ে পেন্টাগনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেইজিং সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বাড়িয়ে তুলছে। এর মধ্যে গত ২৬ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে ৫৭ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, আফগানিস্তান, ইরান, মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার সাথে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে তার দেশ খুবই আগ্রহী। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, আফগানিস্তানের চিরদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু চীন। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যদি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর খাইবার পাস হয়ে আমুদরিয়ার তীর পর্যন্ত যদি সম্প্রসারিত হয়, তাহলে বাস্তবিক অর্থে নতুন সিল্ক রুটের পুনরুজ্জীবন ঘটবে। তখন মধ্য এশিয়া হয়ে এর সাথে খুব সহজেই রাশিয়া সংযুক্ত হতে পারবে। ইতোমধ্যে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত ডিসেম্বরে একসাথে নয়াদিল্লি সফর করেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পে ভারতকে সংযুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক বিরোধে এ ধরনের অর্থনৈতিক প্রকল্প সম্পৃক্ত না করার কথাও বলেন। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে রাশিয়া নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চাইছে মূলত কৌশলগত কারণে। বালুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আরব সাগরের উষ্ণ পানিতে পা ভেজাতে পারবে রাশিয়া। আফগানিস্তান এবং সিপিইসিকে ঘিরে চীন ও রাশিয়ার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপের নেপথ্য কারণ খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে চীন। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টুইট বার্তার পর চীনের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের পূর্ণ স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা পারস্পরিক শ্রদ্ধার সাথে করছে বলে আমরা খুশি। আসলে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে আফগান যুদ্ধে পাকিস্তানকে পুরোপুরি জড়িয়ে ফেলতে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব কমিয়ে আনতে। যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল যে পাকিস্তানের জন্য আত্মঘাতী হবে, তা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। তিনি এ কারণে বলছেন, ইসলামাবাদ কখনো দেশের মাটিকে আফগান যুদ্ধের ময়দান হতে দেবে না। পরিহাস হচ্ছে, এক সময় আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তারের জন্য পাকিস্তান থেকে যে সুবিধা যুক্তরাষ্ট্র পেয়েছে, একই ধরনের সুবিধা চীন ও রাশিয়াও পেতে যাচ্ছে। পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের মার্কিন নীতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এর ফলে পাকিস্তান আরো বেশি চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে। ইতোমধ্যেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
দুই দেশের মধ্যে তিক্ততার কারণে পাকিস্তান যদি আফগান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক ছিন্ন করে, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি আফগানিস্তানে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। এ দিকটি সম্ভবত জেমস ম্যাটিস উপলব্ধি করতে পারছেন এবং পাকিস্তানের সাথে ‘সামরিক যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে’ বলে জানিয়েছেন। পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব আরো খর্ব করতে পারে। একমাত্র ভারত ছাড়া এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র নেই। জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলপত্র প্রকাশের অনুষ্ঠানে জেমস ম্যাটিস বলেছেন, আমাদের সামরিক বাহিনী এখনো শক্তিশালী; কিন্তু আকাশ, স্থল, সাগর, মহাশূন্য ও সাইবার স্পেস- যুদ্ধের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধাজনক অবস্থান হ্রাস পেয়েছে এবং ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। রাশিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তোমরা যদি আমাদের চ্যালেঞ্জ করো, তাহলে তা হবে তোমাদের জন্য দীর্ঘতম খারাপ দিন।’ দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল- সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, আফগানিস্তানে বিদ্রোহ দমনে অভিযান, ইরাক ও সিরিয়া। কিন্তু এখন জোরালোভাবে তা আবার আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে মোড় নিচ্ছে; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও চীনের দিকে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রভাব অনেক বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। চীন স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরো সক্রিয় হয়ে উঠবে। নেপালের রাজনীতিতে ভারতকে পাশ কাটিয়ে চীন এখন সামনের সারিতে চলে এসেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষে চীন ও রাশিয়া সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের নীতির বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারকে সমর্থন দেয়ার পরও ভারতের ভূমিকা গৌণ হয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থন সত্ত্বেও ভারত বেশ চাপ অনুভব করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাতে রাজি হয়নি ভারত। চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তাতে আগামী দিনে এ অঞ্চলে ভারতকে সম্ভবত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
alfazanambd@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.