দৃক গ্যালারির কর্মকর্তা খুন: রহস্যের জট খোলেনি এক বছরেও

দৃক গ্যালারির প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইরফানুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ১ বছর পেরুলেও রহস্যের জট খোলেনি। তাকে কি কারণে এবং কারা এ হত্যা করেছে তা উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের স্বজনরা দাবি করেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
২০১৬ সালের ৩রা এপ্রিল ধানমন্ডির ৮ নম্বর সড়কের ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের শাখা থেকে ৩ লাখ টাকা তুলে বাইরে বের হন। এরপরই তিনি নিখোঁজ হন। একদিন পর ৪ঠা এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বিলের একপাশের ঝোঁপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও তাকে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে যায়।
ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই ইমদাদুল হক বাদী হয়ে ৪ঠা এপ্রিল রাতে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২। মামলা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ইরফানুলকে খুনের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণের ব্যাপারে তারা অবগত নন। পুলিশ মামলাটি প্রথমে ডিবিতে স্থানান্তর করেন। ডিবি পুলিশ পরে সিআইডিতে স্থানান্তর করেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই আসাদ মুন্সি জানান, এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি। খুনের ক্লু বের হলেই এ ঘটনার হোতারা চিহ্নিত হবে। এতদিন ধরে খুনের ক্লু না পাওয়ার কারণ কি প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা একাধিকবার ছুটিতে ছিলেন। এছাড়াও এটি একটি জটিল মামলা। এ কারণে সময় লাগছে।
নিহতের বড় ভাই ইমদাদুল হক মানবজমিনকে জানান, পুলিশ খুনের রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়েছে। সিআইডি পুলিশও এর রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না। তাহলে আমরা কার কাছে যাবো? তিনি জানান, আমার ভাইকে কেন এবং কারা খুন করেছে এখন পর্যন্ত কিছুই জানতে পারলাম না।  আমার ভাই ছিল অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র। অত্যন্ত শিল্পীমনা মানুষ ছিল সে। আমাদের জানামতে তার কোনো শত্রু ছিল না। আমার ছোট ভাই খুন হওয়ার পর পুরো পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেন।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, যে ব্যাংক থেকে ইরফানুল টাকা তুলেছিলেন ওই ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছিল পুলিশ। তার ব্যাংকে প্রবেশ করা এবং টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্পষ্টভাবে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। এরপর তিনি ব্যাংক থেকে বের হয়ে যান। নিহতের লাশ উদ্ধারের সময় চোখে ও মুখে মলমের গন্ধ ছিল। পুলিশের ধারণা, ইরফানুল ইসলামের টাকা লুটে নেয়ার জন্য একটি চক্র ব্যাংক থেকেই তার পিছু নিয়ে থাকতে পারে। পরে তার টাকা লুটে নিয়ে হত্যা করে নারায়ণগঞ্জে ফেলে রেখে যেতে পারে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের কোনো অপরাধীচক্র জড়িত থাকতে পারে কিনা তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, নিহতের গাড়িচালক ওই কর্মকর্তাকে ব্যাংকে ঢুকতে দেখেছেন। পরে চালক গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর গাড়িচালক ব্যাংক থেকে ওই কর্মকর্তাকে আর বের হতে দেখেননি। কোনো ফোনও দেননি। এতে তিনি ব্যাংক থেকে বের হয়ে কোনদিকে গেছেন তা গাড়িচালক পুলিশকে জানাতে পারেননি। এ ঘটনায় নিহতের গাড়িচালক এবং সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তাদের কাছে খুনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র আরো জানায়, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের পর পুলিশ তার পারিবারিক ও প্রতিষ্ঠানিক কোনো বিরোধ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশ তেমন কোনো তথ্য পায়নি। পুলিশের ধারণা, ডাকাত বা ছিনতাইকারী কোনো চক্র ইরফানুলকে হত্যা করে থাকতে পারে। ইরফানুল হাজারীবাগ থানাধীন জিগাতলায় ১৫/১ নম্বর রোডের ৫৮ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়ায়।

No comments

Powered by Blogger.