‘দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে কী হবে’

বিচারপতি অপসারণে সংসদে কোনো দলের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন না থাকলে কী পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে সে প্রসঙ্গ উঠেছে সুপ্রিম কোর্টে। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে গতকালের আপিল শুনানিতে এ প্রসঙ্গ ওঠে। এ সময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, এখানে এমন কিছু সন্নিবেশিত করা হলো, যাতে শূন্যতা সৃষ্টির সুযোগ আছে! কারও (বিচারক) বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (সংসদে) না থাকলে তখন কী হবে! এটি ভাবিয়ে তুলেছে।
এ সময় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ তার লিখিত বক্তব্যে বিষয়টি তোলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, সংসদে কোনো রাজনৈতিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে পারে। আবার এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও থাকতে পারে। ঝুলন্ত পার্লামেন্টও হতে পারে। তখন কী হবে!
অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শুনানিতে অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের করা বিভিন্ন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের হাতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া যুক্তিযুক্ত নয়। ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের জজ নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সদস্যরা আলোচনা করেছে। স্পিকার টুঁ শব্দ করেনি। তিনি বলেন, সিভিল সার্ভিসের ব্যক্তিদের কারা অপসারণ করে? পুলিশকে কারা করে? সেক্রেটারিদের কারা করে? আপনি? সংসদ? কেউ না। তাদের উপরস্থরা রিমুভ করে। অর্থাৎ সহকারী সচিবদের তদন্ত করে যুগ্ম সচিবরা। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। মিলিটারিদেরটা তাদের ডিসিপ্লিনারিতে আছে। তাহলে আপনাদেরটা কেন পার্লামেন্টে যাবে? সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল না থাকলে অরাজকতা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
দেশের সবচেয়ে সিনিয়র আইনজীবী টিএইচ খানের লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান। টিএইচ খান বলেন, ষোড়শ সংশোধনী যেটাকে বলা হচ্ছে এবং এটি পাস করেছে যে সংসদ, সেই সংসদ যেভাবে নির্বাচিত হয়েছে, সে নির্বাচনটাই বৈধ না। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়টি সেটল না করে ষোড়শ সংশোধনীর আলোচনা ঠিক না। এটাকে প্রাসঙ্গিকভাবে দেখতে হবে। ত্রয়োদশ সংশোধনী আসলেই আদালত বাতিল করেছিল? আর যদি ত্রয়োদশ সংশোধনী থেকে থাকে, এখনও বহাল থাকে তাহলে ত্রয়োদশ সংশোধনীর যে রায় দিয়েছেন ১৬ মাস পরে, তখন তার (সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক) শপথ ছিল না। টিএইচ খান আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে আরো শক্তিশালী করে সেখানে একটা ‘নমিনাল বডি’ না করে একটা ‘ফাংশনাল বডি’ করে ক্ষমতা আরো বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন।
সংসদের হাতে বিভিন্ন দেশে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন আরেক অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। ব্যারিস্টার আমীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারা দুনিয়াজুড়ে আমরা যে অবস্থা দেখছি, তাতে বিচারকদের অসদাচারণের কোনো ঘটনা যদি ঘটে, তাহলে সেটা জুডিশিয়ারি ঠিক করবে। সেটাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। ২২শে সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর ৫ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আদালত রুল জারি করেন। গত বছরের ৫ই মে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সরকার। গত ৮ই মে এ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।’

No comments

Powered by Blogger.