সমাহিত হলেন মহান বিপ্লবী

তাঁর কোনো ভাস্কর্য বানানো হবে না কিউবায়। তাঁর নামে গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানের নামকরণও হবে না। মহান বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর অন্তিম ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানালেন তাঁর ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো। কিন্তু তাঁর স্মৃতি মুছে যাবে না। লাখো জনতার ‘আমিই ফিদেল’ স্লোগান এমনটাই জানান দিল। নয় দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যে শনিবার লাখো জনতার উপস্থিতি ও স্লোগানমুখর পরিবেশে কাস্ত্রোর দেহভস্ম সান্তিয়াগো শহরে নেওয়া হয়। পরে গতকাল রোববার সান্তিয়াগোর সান্তা ইফিগেনিয়া সমাধিক্ষেত্রে কিউবার ঊনবিংশ শতাব্দীর বিপ্লবের নায়ক হোসে মার্তির সমাধির পাশে সমাহিত করা হয় এই বিপ্লবীর ভস্মাধার। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবে কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী যে পথে হাভানা পৌঁছেছিল, তার উল্টো পথ অনুসরণ করে দেহভস্ম। রাজধানী হাভানা থেকে চার দিনে দেশের বিভিন্ন শহর ঘুরে কাস্ত্রোর দেহভস্মবাহী ‘মুক্তির কাফেলা’ শনিবার বিপ্লবের সূতিকাগার সান্তিয়াগোতে পৌঁছায়। এই কয় দিনে দেহভস্মবাহী গাড়ি নয় শ কিলোমিটার ভ্রমণ করে সান্তিয়াগোতে পৌঁছায়। সেখানে রেভল্যুশন স্কয়ারে লাখো জনতা স্লোগানমুখর পরিবেশে দেহভস্মকে স্বাগত জানায়।
কাস্ত্রোর দেহভস্মের সামনে উপস্থিত জনতাকে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে রক্ষার শপথ করেন তাঁর ছোট ভাই ও কিউবার বর্তমান নেতা রাউল কাস্ত্রো। ফিদেল ২০০৬ সালে রাউলের কাছে দেশের দায়িত্ব তুলে দেন। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কাস্ত্রোর দ্বারা অনুপ্রাণিত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ ও লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা। যোগ দিয়েছিলেন ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, বলিভিয়ার নেতারা। এ ছাড়া ছিলেন আর্জেন্টিনার ফুটবল তারকা ম্যারাডোনার মতো বহু তারকা। অনুষ্ঠানে রাউল কাস্ত্রো জানান, ফিদেল কাস্ত্রোর ইচ্ছা অনুসারে তাঁর নামে কোনো ভাস্কর্য বা সড়কের নামকরণ করা যাবে না। এ বিষয়ে আইন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ফিদেল কাস্ত্রো সব সময় ব্যক্তিপূজার বিরুদ্ধে ছিলেন বলেও জানান রাউল। পূর্বসূরির মতো সমাজতন্ত্র ও পিতৃভূমি রক্ষায় বিপ্লবের পথ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন রাউল। স্মরণানুষ্ঠানে প্রিয় নেতার ছবি হাতে এসেছিলেন লাখো ভক্ত। সভায় অংশগ্রহণকারী আনসেল হেচাভারিয়া নামের একজন বলেন, ‘ফিদেল মারা যাওয়া মানে এই নয় যে আমরা নিশ্চুপ হয়ে যাব। আমরা ফিদেলের উত্তরাধিকারী।’
স্মরণসভায় আসা তানিয়া মারিয়া জিমেনেজ বলেন, ‘আমরা সবাই ফিদেলকে ভালোবাসি। ফিদেল আমাদের কাছে বাবার মতো। তিনি আমাদের জীবনের পথকে সহজ করে দিয়েছেন। জনগণ তাঁকে অনুসরণ করবে।’ গতকালের শেষকৃত্য মোটেও আড়ম্বরপূর্ণ ছিল না। একান্ত ঘরোয়া পরিবেশে সম্পন্ন হয়। প্রথমে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া রাষ্ট্রীয় টিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের কথা থাকলেও পরবর্তীকালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সান্তিয়াগোতে সমাহিত করার সময় রাজধানী হাভানায় ২১ বার তোপধ্বনি শোনা যায়। ১৯৫৬ সালে মেক্সিকো থেকে ৮২ জন গেরিলাযোদ্ধা নিয়ে কিউবায় প্রবেশ করে তৎকালীন মার্কিনপন্থী বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন কাস্ত্রো। ১৯৫৯ সালে উৎখাত করেন ওই সরকারকে। সেই গেরিলা দলে তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন আর্জেন্টিনার বিপ্লবী চে গুয়েভারা। এরপর ৪৯ বছর ধরে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কিউবা শাসন করেছেন কাস্ত্রো। গত ২৫ নভেম্বর তিনি মারা যান। তিনি রাজতন্ত্রের বাইরে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদি শাসক।

No comments

Powered by Blogger.