আগাম ধানে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক কৃষক আগাম আমন জাতের ধান
আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে ধান কাটা শুরুও হয়েছে।
ছবিটি সদর উপজেলার উনত্রিশ মাইল এলাকা থেকে
গত ২৮ অক্টোবর সকালে তোলা। প্রথম আলো
ভোরের কুয়াশা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনামাখা রোদ। সোনামাখা রোদে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের হলুদ ধানের শিষ ঝিকিয়ে উঠেছে। মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধান মুখে তুলে উড়ে যায় পাখির ঝাঁক। পাকা ধানের ম-ম গন্ধে মাতোয়ারা কৃষকের এসব কিছুতে মন কাড়ে না, কাস্তের টানে মুঠি মুঠি ধান কেটে তুলতে হবে গোলায়— কৃষকের ধ্যান যেন এ-ই। ঠাকুরগাঁওয়ে মাঠে মাঠে এখন চোখে পড়ে এ দৃশ্য। শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। এই অঞ্চলে অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান কৃষকের ঘরে ওঠে।
কিন্তু জেলার অনেক কৃষক আগাম জাতের ধান আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে অনেক খেত থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে ধানের দরও বেশ ভালো। এতে কৃষকের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক ফুঠে উঠেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁওয়ের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৭৭ মেট্রিক টন। এ বছর কৃষকেরা ১২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে আগাম আমন জাতের ধান আবাদ করেছেন। সেসব জাতের মধ্যে রয়েছে বিনা-৭, ব্রি-৩৩, ব্রি-৩৯, ব্রি-৫৭ ও ব্রি-৬২। গত ২৮ অক্টোবর সকালে সদর উপজেলার গৌরীপুর ও উনত্রিশ মাইল এলাকায় সেরজমিনে দেখা যায়, পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে মাঠে নেমেছেন কিষান-কিষানিরা।
কাটার পর কেউ কেউ ধানের বোঝা মাথায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন মাড়াইয়ের জায়গায়। সদর উপজেলার গৌরীপুর এলাকার কৃষক পরেশ রায় বলেন, এ বছর আমন ধানের উৎপাদন হচ্ছে একরপ্রতি ৬০-৬৫ মণ। খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে হাতে বেশ কিছু টাকা থাকবে। গ্রামের আরেক কৃষক আফসার উদ্দিন (৬১) দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন। ফলনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামুটি লাভ হবে। ধান উঠলে যে টাকা হাতে আসবে, তা আবার আলু আবাদে লাগিয়ে দেবেন তিনি। বাজারে এখন এক বস্তা (৮৪ কেজি) নতুন ধান ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দৌলতপুর গ্রামের কৃষক সামছুল আলম (৪৪) বলেন, ‘এ সময় গ্রামে কৃষি শ্রমিক আগের তুলনায় কিছুটা সস্তায় পাওয়া যায়। তাই আমাদের তেমন একটা চিন্তা করতে হয় না। এ সময় কাঁচা খড়ের দামও ভালো পাওয়া যায়।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁওয়ের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আরশেদ আলী বলেন, জেলার কৃষকেরা এখন আগাম জাতের আমন চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। বাজারে ধানের দর ভালো থাকায় তাঁরা বেশ খুশি।

No comments

Powered by Blogger.