সাংসদ আমানুরের বিচার

৪৬ মামলার আসামি ছিলেন টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাংসদ আমানুর রহমান ওরফে রানা। এর মধ্যে ৪৪টি থেকে অব্যাহতি এবং একটি স্থগিত রাখার ব্যবস্থা করেও সম্পূর্ণ উতরাতে পারলেন না তিনি। একটি খুনের মামলার জন্য তাঁকে খুঁজছিল পুলিশ। এ মামলাটি গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারলেই একজন নিরপরাধ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি দায়মুক্তি পেয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু সেটা করা সম্ভব না হওয়ায় ২২ মাস পলাতক ছিলেন। অবশেষে গত রোববার তিনি টাঙ্গাইলের জেলা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করেন। আদালত তাঁকে সরাসরি কারাগারে পাঠান। তবে যিনি হত্যাসহ ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের মামলার বিচার এড়াতে পেরেছেন, তাঁর শক্তি ও ক্ষমতার বিষয়টি আমরা অনুমান করতে পারি। ফলে এই মামলার চূড়ান্ত পরিণতি নিয়ে তাই সংশয় ও আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
আমানুর রহমান টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের জ্যেষ্ঠ কর্তাব্যক্তি। তাঁর ভাই ও সন্তানেরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। এই পরিবারের বিরুদ্ধে গত ২৫ বছরে ৫০টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে আমানুর একাই ৪৬টি মামলায় অভিযুক্ত। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যাকাণ্ডের পর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে তাঁর ও তাঁর ভাইদের নাম আসে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলোর একটা অংশ সাক্ষী ও বাদীদের অনুপস্থিতির কারণে বাতিল হওয়া থেকে বোঝা যায়, ভয়ভীতি ছিল তাঁর অস্ত্র। প্রথমআলোর রোববারের সংবাদেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার পর একাধিক পরিবারের এলাকাছাড়া হওয়ার তথ্য এসেছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারও বেশ কটি মামলা থেকে তাঁর অব্যাহতির ব্যবস্থা করে।
পলাতক অবস্থায়ও অন্তত দুবার জাতীয় সংসদে হাজিরা দিতে আসেন। ২৯ সেপ্টেম্বর এই মামলার অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হওয়ার কথা। টাঙ্গাইলের সাধারণ মানুষ তো বটেই, স্থানীয় আওয়ামী লীগও আমানুরের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে। এলাকায় তাঁর পরিবার যে জমিদারসুলভ দাপট প্রতিষ্ঠা করে অন্যায়-অত্যাচার চালিয়ে আসছে, তারও অবসান হওয়া উচিত। অতীতে গাইবান্ধার এক সাংসদের বিরুদ্ধে এক শিশুকে গুলি করার মামলায় জামিন প্রশ্নে বিচারকে দীর্ঘসূত্রতায় ফেলে দেওয়ার চেষ্টা দেখেছি। সাংসদ আমানুরের বেলায় সে রকম কিছু হওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। জনপ্রতিনিধির আসনে বসে নির্বিচার অপরাধ করে যাওয়ার ইতি ঘটানো জরুরি। মানুষ দেখতে চায় আইন সবার জন্যই সমান।

No comments

Powered by Blogger.