জঙ্গিমুক্ত হোক শিক্ষাঙ্গন

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার ঘটনা আমাদের একাধিক নির্মম সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসী হানায় অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের মধ্যে চারজনই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সচ্ছল পরিবারের সন্তান। আগে বলা হতো আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে হতাশ তরুণেরা জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিয়ে থাকে। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমের নামকরা স্কুলে কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থীর বেলায় সেই যুক্তি খাটে না। তাঁদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়া এবং ঠান্ডা মাথায় মানুষ হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধে যুক্ত হওয়া আমাদের গভীর উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাঙ্গন হলো জাতির মেধা ও মনন চর্চা এবং মানবতাবোধ তৈরির স্থান। কিন্তু গুলশানে সন্ত্রাসী হামলাকারীদের পরিচয় জানার পর এ কথা বলার সুযোগ নেই যে সবাই সেখানে জ্ঞান, যুক্তি ও মানবিকতার চর্চা করেন। এর প্রতিকারে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো আবশ্যক বলেই মনে করি।
কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সামাজিক জাগরণ সৃষ্টি করতে সরকারি বা প্রশাসনিক পদক্ষেপই একমাত্র সমাধান নয়। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও একযোগে কাজ করতে হবে। জঙ্গিবাদের কুফল ও বিপদ সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগই পারে এই ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধি থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যেসব তরুণ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন, তঁাদের ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথাও ভাবতে পারে। শিক্ষাঙ্গনকে আমরা কোনোভাবে জঙ্গিবাদের সূতিকাগারে পরিণত হতে দিতে পারি না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অতিমাত্রায় রাজনৈতিকীকরণ কিংবা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সমাজবিজ্ঞান তথা মানবিক শিক্ষামুক্ত রাখার প্রবণতা পরিহার করা এখন সময়ের দাবি।

No comments

Powered by Blogger.