ঐক্য-সৌহার্দের প্রতীক সেফটি পিন

 সংহতি প্রকাশ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এক্সেটার
কমিউনিটি ইনিশিয়েটিভের কর্মীরা। ছবি টুইটার
আলোচিত গণভোটের পর হঠাৎ করেই যেন বেশ কিছুটা বদলে গেছে ব্রিটিশ সমাজ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না-থাকা নিয়ে গত ২৩ জুনের গণভোটে বেশির ভাগ ভোটার রায় দিয়েছে ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে আসার। কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারছে না বাকিরা। এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু বর্ণবাদী আক্রমণ ও দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাজ্যে। এমন বর্ণবাদী কার্যকলাপ ও আচরণের বিরুদ্ধে মানুষকে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধনে আবদ্ধ করছে সেফটি পিন। সামান্য এ জিনিসটি যে মানুষে মানুষে বন্ধন তৈরির এত বড় সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, তা এক সপ্তাহ আগেও হয়তো কারও কল্পনায় ছিল না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-টুইটারে বিপুল সাড়া ফেলেছে বর্ণবাদবিরোধী এই প্রচার। এর মূল কথা হলো, ‘আপনার অবস্থান যদি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হয়ে থাকে, আপনি যদি অভিবাসীদের পক্ষে দাঁড়াতে চান, তবে পোশাকের ওপর কেবল একটা সেফটি পিন লাগিয়ে রাখুন। এর মাধ্যমে প্রকাশ পাবে সব ধর্ম,
বর্ণ ও সংস্কৃতির মানুষের জন্য আপনি একজন নিরাপদ মানুষ, আপনি তাদের বন্ধু।’ যুক্তরাজ্যে এত দিন অশ্বেতাঙ্গ কিংবা মুসলিমদের প্রতি বর্ণবাদী আচরণের কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও গণভোটের পর থেকে ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশ থেকে আসা শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীরাও এ ধরনের আচরণের শিকার হচ্ছেন। খোদ পশ্চিম লন্ডনে পোল্যান্ডের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের দেয়ালে পোলিশদের যুক্তরাজ্য থেকে বিদায় হওয়ার বার্তা দিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। ম্যানচেস্টারে একটি ট্রেনে বর্ণবাদীদের আক্রমণের কবলে পড়েন অবসরপ্রাপ্ত এক মার্কিন সেনা। বেইজিংস্টোক শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়েছেন বিবিসির সাংবাদিক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সিমা কোটেচা। উগ্রবাদী ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গরা অভিবাসীদের বলছেন, ‘আমরা ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছি, তোমরা এখন বিদায় হও।’ ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, গণভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার চার দিনের মধ্যে বর্ণবাদী আক্রমণের ঘটনা ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই অবস্থায় ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পোশাকে সেফটি পিন লাগিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে গত রোববার প্রথম একটি টুইট (@Cheeahs) করা হয়। এক দিনের মাথায় ৩০ হাজার বারের বেশি সেই বার্তা রিটুইট (টুইটারে একই বার্তা আবার ছাড়া) হয়। ক্রমে তা বাড়তে থাকে। দ্য ব্রিটিশ বেক অফ বিজয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়া হোসেনও এই প্রচারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে টুইটারে তাঁর ৯৫ হাজার অনুসারীর কাছে এই বর্ণবাদবিরোধী বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অভিনব ঐক্যের এই ভাবনা যাঁর মাথায় এল, তাঁর সঙ্গে কথা হয় টুইটারে। তাঁর নাম কেবল অ্যালিসন লেখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও একজন অভিবাসী, মার্কিন নাগরিক। থাকেন লন্ডনে এবং পেশায় ফ্রিল্যান্স লেখক ও সম্পাদক। অ্যালিসন বলেন, তিনি শ্বেতাঙ্গ এবং ইংরেজিভাষী হওয়ার কারণে তাঁকে বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হচ্ছে না। তবে অভিবাসীদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার খবরে তিনি অতিষ্ঠ। এ বিষয়ে কিছু একটা করার তাগিদ থেকে এই অভিনব প্রচার শুরু করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.