দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা- হেলথ কেয়ার কর্মসূচি সফল হোক

দরিদ্র মানুষের কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু আমরা দেখে থাকি দরিদ্রদের অধিকার হরণ করা হয় নানাভাবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয় দরিদ্ররা। দরিদ্র জনগোষ্ঠী কেবল অধিকার বঞ্চিতই নয়, এক কথায় বলা চলে অধিকার লুণ্ঠিত ও লাঞ্ছিত। আর সে কারণেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে শক্ত ভাষায় বলতে হয়েছে, ‘দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবায় গাফিলতি সহ্য করা হবে না।’ গরিব জনসাধারণের জন্য প্রবর্তিত ‘শেখ হাসিনা হেলথ কেয়ার কর্মসূচি’ বাস্তবায়নে তিনি ডাক্তার ও নার্সদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে দেশের গরিব জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫০টি রোগের চিকিৎসা বিনামূল্যে নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এ উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ পাইলট প্রকল্প প্রথম বাস্তবায়ন করা হবে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলায়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে দেশের সব উপজেলায় সম্প্রসারণ করা হবে এ কর্মসূচি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা সভায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন, তা হচ্ছে- হাসপাতালের যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা যাবে না। দুটি প্রসঙ্গই তিনি শনাক্ত করতে পেরেছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতার দিক হিসেবে। প্রায়ই দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রায়ই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হয়। গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে দেয়া ওষুধপত্রও তাদের ঠিকমতো দেয়া হয় না। অনাদর, অবহেলার বিষয় তো বলাই বাহুল্য মাত্র। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধনী ব্যক্তিরাও অর্থের বিনিময়ে সুচিকিৎসা পান না দেশের নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কাছ থেকে। তাই বাধ্য হয়ে যাদের অর্থের সঙ্গতি আছে তারা বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু দেশের গরিব মানুষের তো যাওয়ার মতো বিকল্প জায়গা নেই। তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এ বাস্তবতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রবর্তিত ‘শেখ হাসিনা হেলথ কার্ড’ গরিব মানুষকে ৫০টি রোগের সুচিকিৎসা প্রাপ্তিতে সহায়ক হলে দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং এটি সারা দেশে দ্রুত চালু করার আহ্বান জানাই। এ কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.