তৃণমূলের ১১ নেতার ‘ঘুষ নেওয়ার’ ভিডিও প্রকাশ

সৌগত রায়(বাম থেকে ), মুকুল রায় ও ফিরহাদ হাকিম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে গতকাল সোমবার এক রাজনৈতিক বিস্ফোরণ ঘটে গেল। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের ১১ জন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ অর্থ নেওয়ার’ চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। গোপনে ধারণ করা ভিডিওর মাধ্যমে কথিত ওই অর্থ নেওয়ার চিত্র তুলে ধরেছে দিল্লিভিত্তিক সংবাদ ওয়েবসাইট নারদ নিউজ ডট কম। দলের নেতা ও সরকারের সততার ব্যাপারে বরাবর জোর গলায় দাবি করে আসা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য নির্বাচনের প্রাক্কালে এ ঘটনাকে বড় ধরনের ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। নারদ নিউজ ডট কমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং ইউটিউবে প্রচার করা ভিডিও অনুযায়ী, অর্থ নেওয়া মন্ত্রী-নেতা-সাংসদ-মেয়রের তালিকায় সবচেয়ে ‘এগিয়ে’ আছেন তৃণমূলের সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। ভিডিওতে দেখা যায়, ২০ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারে মুকুল রায়ের সঙ্গে গোপন ক্যামেরার পেছনে বসে থাকা কয়েকজনের কথা হচ্ছে। মুকুল রায় টাকা নিজের হাতে নিচ্ছেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা এস এম এইচ মির্জার কাছে টাকা পৌঁছে দিতে বলছেন। তারপর এস এম এইচ মির্জা নিজে টাকা নিচ্ছেন, ভিডিওতে এমন ছবি দেখা যায়। বেশির ভাগ মন্ত্রী-নেতাকে পাঁচ লাখ করে টাকা দেওয়া হয়। এঁদের মধ্যে আছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, সুলতান আহমেদ, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলী ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন ব্যানার্জি, ইকবাল আহমেদ, সাবেক পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র, পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কলকাতার মেয়র শোভন চ্যাটার্জি নেন চার লাখ টাকা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ করণ শর্মা এবং সুজিত কৃষ্ণার সঙ্গে বৈঠকের ঘটনাও নারদ নিউজের ভিডিওতে উঠে আসে। দেখা যায়, বৈঠকে এই দুজন তৃণমূলের মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নারদ নিউজের ওয়েবসাইটে ম্যাথিউ স্যামুয়েল এবং অ্যাঞ্জেল আব্রাহামের লেখা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রথমে তারা ইমপেক্স কনসালটেন্সি নামের একটি ভুয়া কোম্পানি তৈরি করে। এরপর ওই কোম্পানির প্রতিনিধি সেজে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের কাছে গিয়ে ব্যবসায় সহযোগিতা চায়। বিনিময়ে তারা অর্থ তুলে দেয় নেতাদের হাতে। ভিডিওতে দেখা যায়, টাকা নেওয়ার সময় মন্ত্রী ও নেতারা ইমপেক্সকে নানাভাবে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই গোপন অভিযান শুরু হয় বলে নারদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওয়েবসাইটটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের হাতে এ-সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ রয়েছে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রয়োজনে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন। রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসনের দাবি করে সূর্যকান্ত মিশ্র আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের টাকা লুট করেছে তৃণমূল। ওদের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।’ বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ দাবি করেছেন। তৃণমূলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এ ভিডিওসহ পুরো বিষয়টিকেই ‘প্রযুক্তির অপব্যবহার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এ ভিডিও কেন ঠিক এ সময়ে প্রকাশ করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.