দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির জন্য আবার তোড়জোড়

পশ্চিম তীরের কাবানায় গতকাল ইসরায়েিল বাহিনীর
অভিযানের সময় ভয়ে পালায় নারী–শিশুরা। এএফপি
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন দফায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গতকাল সোমবার গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ছিল শান্ত। তবে এদিন পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে এক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আবার মিসরে আলোচনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এদিকে জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, গাজা থেকে ইসরায়েল অবরোধ তুলে না নিলে নতুন করে সংঘাত শুরু হতে পারে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসির। মিসরের রাজধানী কায়রোতে কয়েক দিনের চেষ্টার পর গত রোববার ইসরায়েল ও হামাসকে ৭২ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো হয়। এরপর স্থানীয় সময় রোববার মধ্যরাত (গ্রিনিচ মান সময় রাত নয়টা) থেকে যুদ্ধিবিরতি কার্যকর হয়। অবশ্য যুদ্ধবিরতি শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি রকেট ছোড়ার দাবি করেছে হামাস। অন্যদিকে ইসরায়েলও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় বিমান হামলা চালায়। যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে উত্তর গাজায় এক ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করে। গত ৮ জুলাই গাজায় সংঘাত শুরুর পর এটি দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা। আগের ৭২ ঘণ্টার মেয়াদ শেষ হয় শুক্রবার। এর পর থেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত আরও ২০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু এবং রকেটের আঘাতে দুই ইসরায়েলি আহত হয়। দুই পক্ষই কায়রো আলোচনা ছাড়ার হুমকি দেওয়ার পর রোববার অনেকটা আকস্মিকভাবেই ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ‘নিবিড় ও টেকসই সমঝোতা’র জন্য আলোচনা আবার শুরু করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও আশা প্রকাশ করেন, বেসামরিক মানুষের কথা চিন্তা করে উভয় পক্ষ আরেকটি সুযোগ গ্রহণ করবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়ে বলেন, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি না আসা পর্যন্ত সামরিক অভিযান থামবে না। মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘গুলির মধ্যে থেকে ইসরায়েল কোনো আলোচনায় বসবে না।’ ইসরায়েল ও মিসরের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা করতে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল সকালে কায়রোতে পৌঁছেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদল আগে থেকেই সেখানে আছে। উভয় পক্ষ মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে নিজেদের দাবিদাওয়া জানাবে। তবে এখনো উভয় পক্ষ ছাড় দেওয়ার মানসিকতা কমই দেখিয়েছে। ইসরায়েল গাজাকে অসামরিকীকরণের দাবি থেকে সরছে না। অন্যদিকে হামাসও গাজার ওপর থেকে ইসরায়েলের আট বছরের অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি থেকে সরে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।
‘অবরোধ না তুললে নতুন সংঘাতের ঝুঁকি’: ইসরায়েল গাজা থেকে অবরোধ তুলে না নিলে নতুন করে সংঘাত বাঁধতে পারে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তা জেমস রাওয়েলি বলেন, গাজায় এক মাসের বেশি সংঘাতের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যর্থ হয়েছে। সংঘাতে এক হাজার ৯৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি ও ৬৭ ইসরায়েলিকে প্রাণ দিতে হয়েছে। রাওয়েলি বলেন, ‘কেবল গাজা পুনর্গঠনে সরঞ্জামাদি পাঠানোর জন্য এই অবরোধ তুলতে হবে, এমন নয়। বরং ১০ বছর আগে গাজা যেভাবে স্বাভাবিকভাবে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ওঠাবসা করেছে, সে অবস্থা ফিরে আনার সুযোগ দিতে হবে।’
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি নিহত: পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের চিকিৎসাকর্মীরা জানান, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেখানকার একটি বাড়িতে অভিযানকালে একজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত ফিলিস্তিনির নাম জাকারিয়া আল-আকরা (২৩)। তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ছয়জন। এ ছাড়া আকরার বাড়িটি সেনাবাহিনীর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.